Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

একান্ত সাক্ষাৎকার: রুহুল কবির রিজভী

স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছি, আওয়ামী লীগেরও পরাজয় ঘটবে

Icon

দিলশানা পারুল

প্রকাশ: ০৯ জুলাই ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম

স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছি, আওয়ামী লীগেরও পরাজয় ঘটবে

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমাদের যেমন স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের একটা ঐতিহ্য আছে, তেমনি গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়েরও একটা ঐতিহ্য আছে। আমরা ৯০-এ একটা স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছি। সুতরাং বর্তমানে যে আওয়ামী সরকার রয়েছে তারও পরাজয় ঘটবে। 

বাংলা আউটলুককে দেওয়া দীর্ঘ আলাপে আরও অনেক বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিলশানা পারুল। বাংলা আউটলুক: আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন?

রুহুল কবির রিজভী: আছি, আমাদের এই ফ্যাসিবাদ কবলিত বাংলাদেশে যেমন মানুষ থাকে নীরবে, নিভৃতে। 

বাংলা আউটলুক: আপনাকে কী জেলে যেতে হয়েছিল?

রিজভী: একবার না, একাধিকবার। 

বাংলা আউটলুক: এর মধ্যে যেতে হয়েছিল কি না?

রিজভী: ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের পরে যেতে হয়নি। ২৮ তারিখের আগে যেতে হয়েছিল। সর্বশেষ এপ্রিলে ছাড়া পেয়েছি। প্রায় পাঁচ মাস জেলে ছিলাম। 

বাংলা আউটলুক: আওয়ামী লীগের এই ৫ বছরের শাসনামলে কয়বার জেলে যেতে হয়েছে?

রিজভী: এরমধ্যে দুই বার গেছি। এই ৫ বছরে পাঁচ মাসের জন্য গেছি ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বরে। এই অফিস থেকে নিয়ে গেল। বের হলাম ২০২৩ সালের এপ্রিলে। আর এর আগে ১৪, ১৫, ১৬, ১৭  মানে ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়েছে আমার জেলযাত্রা। অবিরাম জেলযাত্রা, নিরিবিচ্ছন্ন এবং প্রতিবছর। ২০১২ সাল থেকে ১৭ সাল প্রতিবছর যেতে হয়েছে। 


বাংলা আউটলুক: আপনার বিরুদ্ধে মামলা আছে কতগুলো? কী কী মামলা আছে জানেন?

রিজভী: প্রায় ২৫০-এর মতো। আমি দু-একটা ছাড়া আসলে বলতে পারবো না। আইনজীবীরা জানেন। দুই-তিনটা হয়তো যেগুলো অনেক বড় বড় মামলা দিয়েছে, যেখানে প্রধান আসামি করা হয়েছে আমাদের চেয়ারপারসনকে। সেই সব মামলা দু-একটা জানি। আর কত মামলা দিয়েছে তার কোনো হিসাব নাই।

বাংলা আউটলুক: বিএনপির ৬০ লক্ষ কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা আছে। এই পরিমাণে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, এই পরিমাণে নির্যাতন সহ্য করার পরও আপনার কী মনে হচ্ছে সংগঠন হিসেবে বিএনপি আসলে কোথায় দাঁড়িয়ে আছে? মানে আপনাদের সাংগঠনিক অবস্থাটা এই মুহূর্তে কোথায় আছে?

রিজভী: সাংগঠনিক অবস্থা এত কিছুর পরেও যত মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে সেটাই একটা অভূতপূর্ব বিষয়। অভূতপূর্ব বলছি ইন এ সেন্স এর যে আত্মশক্তি, ইনআর স্পিরিট, এর স্পিরিটা এত প্রবল, এবং এই স্পিরিটা তৈরি করতে আমাদের যে রাজনৈতিক দর্শন এবং নেতৃত্তরা নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে আমাদের যে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বারবার যিনি গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন, বিভিন্ন সময় স্বৈরশাসন থেকে আমাদের আমাদের প্রিয় নেত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তারা তাদের সংগ্রাম, আন্দোলন, যেমন আপসহীনতা এবং জনগণের প্রতি যে কমিটমেন্ট সেই কমিটমেন্ট রক্ষা করার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্তগুলো সে দৃষ্টান্তগুলোই আমাদের অভিভূত করেছে। এই যে, দেখছেন যত নেতা-কর্মী সারাদেশে এত মামলা হামলার হয়েছে, এত নিপীড়ন-নির্যাতন শিকার হয়েছেন, এবং এদের পরিবারগুলো আজকে সাফার করছে, কারণ এই পরিবারের অনেকেই গুম হয়েছেন। এবং গুম হয়েছেন একেবারে কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে দলের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত। তার পরে বিচার বহির্ভূত হত্যার হয়েছেন, ক্রসফায়ারে মারা গেছেন। 


নিপীড়নের বর্ণনা যদি আপনাকে দিই, এটা আরও ভয়াবহ। কারও চোখ চলে গেছে শটগানের গুলিতে। কারও পায়ের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে। হাতের নখ তুলে নেওয়া হয়েছে। যেগুলো আমরা দেখেছি, মানে মধ্যযুগ থেকে শুরু করে বা আদিম যুগে সেটা ভিন্ন ব্যাপার। কিন্তু মধ্য যুগ থেকে এখন পর্যন্ত যেগুলো ডিকটেটরিয়াল শাসন দেখেছি বা আমরা যেগুলো গল্প শুনেছি ফ্যাসিজম , নাজিজমের (নাৎসি) যে আমরা গল্পগুলো পড়েছি , কাহিনিগুলো পড়েছি এটাকেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে উতরে যায়। এটা কেউ ছাড়িয়ে যায়। মানে শেখ হাসিনার যে বর্বরোচিত নির্যাতনগুলো বিশেষ করে গণতন্ত্রকামী মানুষ যারা, ডেমোক্রেসি লাভিং পিপুলের ওপর তার যে আক্রমণের ডাইমেনশন এটা ভয়াবহ। সেটা হয়তো এক দুই লাইনে বললাম। এটার যে ডিফারেন্ট ডাইমেনশন বর্ণনা করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। এর মধ্যেও এই যে টিকে থাকা, এখনও যেকোনো একটা কর্মসূচিতে আমাদের নেতা-কর্মী ঝাক বেধে আসেন, উপস্থিত হচ্ছেন সমাবেশগুলোতে, আমাদের মিছিলগুলোতে। এটাই তো একটা বড় ধরনের প্রাণশক্তি না থাকলে সম্ভব না। 

বাংলা আউটলুক: আপনার অসংখ্য নেতা-কর্মীকে ধরেন এলাকায় থাকতে পারছেন না। নিরাপত্তা তাদের নেই। এরকম পরিস্থিতিে আসলে আঞ্চলিক পর্যায়ে আপনাদের সংগঠন কীভাবে কাজ করে?

রিজভী: আসলে এর মধ্যেও কাজ করছে। তারা যে আদর্শগতভাবে বিচ্যুতি হয়নি বা এর বিন্দুমাত্র বিচ্যুতি কোথাও ঘটেনি। এলাকায় থাকতে পারছেন না ঢাকায় এসে রিকশা চালাচ্ছেন। সব ভালো ফ্যামিলির ছেলে। কেউ বিএ পাস, এমএ পাসও করা ছেলেরাও আছেন। কেউ ইউনিয়ন পর্যায়ের আমাদের আমাদের কোনো অঙ্গ সংগঠনের যেটা যুবদল, ছাত্রদল বা স্বেচ্ছাসেবক দল বা যেকোনো অঙ্গ সংগঠন। আমাদের ১১টা অঙ্গ সংগঠন আমাদের গঠনতন্ত্রে স্বীকৃত। সেই অঙ্গ সংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী যারা ইউনিয়ন পর্যায়ের বা থানা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক অথবা অন্য যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তারা অনেকেই এখন রিকশা চালায় ঢাকায় এসে। অনেকেই সিএনজি চালায়। ভ্যান চালায় কিন্তু তারপরও আমরা দেখেছি যখন একটা বের হচ্ছে এই পার্টি অফিসের সামনে থেকে, ওই রিকশা নিয়েই তারা জয়েন করছে। ওই সিএনজিটা এক জায়গা রেখে তারা আমাদের মিছিলে জয়েন করছেন। সুতরায় একটা জীবন্ত আদর্শ কখনোই যে ডেথ হয় না, এটার যে মৃত্যু হয় না সেটা প্রমাণিত হয়েছে। আমাদের যে রাজনৈতিক আদর্শের দ্বারা আমাদের যে ইয়েটা গড়ে উঠেছে আমাদের যে কাঠামোটা যেটা গড়ে উঠেছে, বিএনপির সেই আদর্শটা হচ্ছে অত্যন্ত মজবুত এবং প্রাণবন্ত।

বাংলা আউটলুক: আঞ্চলিক পর্যায়ে তাহলে কমিটিগুলো বা ওই রকম কার্যক্রম চরছে? 

রিজভী: আমাদের এই কর্মসূচি আছে, ম্যাডামের জন্য একটা দেওয়ার কর্মসূচি। আমার মনে হয় যে এটা ছিল আমাদের ঢাকা মহানগরসহ জেলা হেডকোয়ার্টারগুলোতে। কিন্তু এটা উপজেলা পর্যায়েও পালিত হয়েছে। আমরা উপজেলা পর্যায়ে দিইনি। আমাদের ডিস্ট্রিক্টে হেডকোয়ার্টারে যে অফিসগুলো আছে প্রত্যেকটিতে অথবা কোথাও হয়তো কোনো আপনার কমিউনিটি সেন্টার বা হলঘর ভাড়া নিয়ে সেটা করেছে। এটাই বললাম যে, এটাই হচ্ছে বিএনপির সবচাইতে বড় একটা অর্জন যে আমাদের দলের নীতি এবং আদর্শটা মানে একেবারে মুক্তিকার গভীরে এটা।


বাংলা আউটলুক: তারেক রহমানকে নেতা হিসেবে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? বা তারেক রহমানের নেতৃত্বকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন আপনি?

রিজভী: দেখুন সংকটকালে যিনি নেতৃত্ব দেন এবং অপরিসীম মানসিক ক্ষমতা নিয়ে এই দুর্যোগ দুর্বিপাক এবং প্রতিনিয়ত আমাদের যে ডামি সরকারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলি নিঃসন্দেহে এটা জনগণ দ্বারা স্বীকৃত। প্রতিনিয়ত হুমকি দিচ্ছেন যে তাকে ধরে নিয়ে আসবেন। এই করবেন, সেই করবেন। এর মাঝেও তার যে নেতৃত্ব, আমি বলব যে ,এটা অপরিসীম মানসিক শক্তি তার রয়েছে। দূরত্বে একটা ব্যাপার আছে। কিন্তু দূরত্ব থাকলেও প্রযুক্তি সাহায্যে প্রতিনিয়ত তৃণমূল থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত তার নির্দেশনা, তার পরামর্শ বিভিন্ন প্রণয়ন থেকে শুরু করে সেখানে অন্তর্ভুক্ত থাকা। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলব, অত্যন্ত পরিপক্ব এবং দক্ষতার সাথে দলটা পরিচালনা করছেন।

বাংলা আউটলুক: বিরোধীদল হিসেবে মানে একটা তো আছেই সরকারে যে থাকে, সরকার এক ধরনের ডিপ্লোমেটিক রিলেশনশিপ মেইনটেইন করে। বিশেষ করে পরাশক্তির দেশগুলো সাথে। বড় বড় দেশগুলো সাথে। কিন্তু বিরোধীদল হিসেবে, যেহেতু আপনারাও একটা সময় সরকারে ছিলেন। কিন্তু বর্তমানে বিরোধী দল হিসেবে কী এই ধরনের ডিপ্লোমেটিক সম্পর্কগুলো আপনারা মেইনটেইন করছেন?

রিজভী: আমরা একবার নয়, একাধিকবার ক্ষমতায় ছিলাম। ফলে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাক্টর যারা আছেন, ফলে তাদের সাথে আমাদের যে ইন্টারঅ্যাকশন এটা প্রতিনিয়তই আমাদের যে ফরেন কমিটি আছে, আবার নতুন করে যে গঠিত হলো, ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজরি কমিটি হলো, অ্যাসেজ করার জন্য আরেকটা কমিটি করা হয়েছে। অত্যন্ত রিসোর্স পার্সন যারা তাদের নিয়ে এই কমিটিগুলো করা হয়েছে। যারা ইন্টারঅ্যাকশনগুলো করতে পারেন। যারা ফরেন বিভিন্ন ডিপ্লোমেটদের সাথে কথা বলতে পারেন। যারা প্রতিনিয়ত করে আসছেন। এবং তাদের সাথে আরও অনেক তরুণ মেধাবী ছেলেদের এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সব মিলেই আমি বলব যে, একটা অনেকটা হাইপার ডিপ্লোমেটিক অ্যাক্টিভিটিস সেটা আমাদের দিক থেকে সব সময় হয়েছে। এবং এখন এটা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।


বাংলা আউটলুক: মানে এই মুহূর্তে কতখানি আশাবাদী আপনি এই সম্পর্ক নিয়ে?

রিজভী: আমি আশাবাদী এই কারণেই, আমি বলতে চাই এটা (আওয়ামী লীগ) একটা ফ্যাসিস্ট নেচারের দল। অতীতেও দেখা গেছে নানা ধরনের কম্পোনেন্ট লেগেছে এদের সরাতে। তো আমরা একটা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন বলি বা আমাদের ডেমোক্রেটিক পরিসরে যে ধরনের আন্দোলনগুলো করা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে যেটা স্বীকৃত। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন, মিছিল-মিটিং, হরতাল, অবরোধ যেগুলো সাধারণত করা হয়, আমরা এগুলোই করছি। এটা করার মধ্যদিয়ে আমরা জনগণকে আরও বেশি আরও বেশি সম্পৃক্ত করি। আমাদের কর্মসূচিগুলো আমরা চালিয়ে যাব। আমি যেটা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।

বাংলা আউটলুক: ভারতের সাথে কূটনৈতিক সর্ম্পকটাকে আপনি কীভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন বা আপনাদের এই মুহূর্তে প্রত্যাশা বা আপনাদের চর্চাটা কী?

রিজভী: দেখুন আমরা তো ন্যাশনালিস্ট পলিটিক্স করি। আমাদের ফাস্ট ইন্টারেস্ট হচ্ছে আমাদের ভূখণ্ডটাকে নিরাপদ রাখা। এটার নিরাপত্তা দেওয়া। আমাদের ভূখণ্ড নিরাপদ থাকলে আমাদের জনগণ নিরাপদ থাকবে। তো আমরা সব সময় মনে করি যে ভারত আমাদের প্রতিবেশী দেশ। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের সহায়তা করেছে। কিন্তু আমরা যুদ্ধ করেই তো, আমাদের দেশের মানুষরা তারা যুদ্ধ করেই তো দেশ অর্জন করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অনেক দেশ তাদের সহযোগিতা করেছে। ভারত আমাদের যুদ্ধে সহযোগিতা করেছে। সে জন্য তাদের প্রতি আমাদের যথেষ্ট সহমর্মিতা রয়েছে। কিন্তু যদি এই সহযোগিতা হয় ভবিষ্যতে তাদের ওপর প্রভুত্ব করব, এটা তো জনগণ মেনে নেবে না। মানে বিদেশের সাথে আমাদের সম্পর্কটা থাকবে সমমর্যাদার ভিত্তিতে। এটা যতি ওয়ান অয়ে ট্র্যাফিক হয় তাহলে এটা তো বাংলাদেশের জনগণ মেনে নেবে না। আমরা একতরফাভাবে সবকিছু করব, আমাদের সীমান্ত প্রতিনিয়ত রক্তাক্ত হবে, এটা তো বাংলাদেশের মানুষ মানবে না। বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে, বাংলাদেশের বুক চিরে রেললাইন বসানো হবে, এটা তো বাংলাদেশের মানুষ মানবে না।


এই যে একতরফা নীতি গ্রহণ করা, আমাদের অভিন্ন নদীগুলোতে উজানের দিকে বাধ নির্মাণ করে আমাদের নদীগুলোকে শুকিয়ে দেওয়া। এটা তো এদেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এই ক্ষুদ্ধতার মধ্যদিয়ে এ দেশের মানুষ তার যে নিজের জাতীয়তাবাদের অহংকার, দেশের রক্ষা করার জন্য তার যে অঙ্গীকার এবং অহংকার, সেই অহংকারের মধ্যে এক ধরনের আঘাত আসছে। তখন মানুষ এটা রিয়্যাক্ট করছে। যে এই ধরনের একতরফা কিছু হতে পারে না। আপনার এই যে দেখুন চূড়ান্ত বর্ষা আসার আগেই সিলেট এবং সিলেট রিজিয়নসে বন্যা হচ্ছে। ভাস্ট এরিয়া অফ দি সিলেট রিজিয়ন সেটা ফ্লাডেড। তারা বাঁধ দিয়ে রেখেছে। আপস্ট্রিমে যে আপনার ইনসিজন রেইনফল হচ্ছে, মানে এটার কারণে যে অন রাশ অফ ওয়াটার হঠাৎ করে যখন ঢুকে যাচ্ছে তখন আমাদের গোটা এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। নদীর পাড়ে যত বসতি আছে, ঘরবাড়ি আছে সবকিছু সাবমার্জ আন্ডার দি ওয়াটার। 

এটার কারণটাই হচ্ছে যে, একতরফা নীতি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করেই উজানের দিকে অভিন্ন নদীতে একরে পর এক বাঁধ নির্মাণ করছে। এই যে নিয়ন্ত্রণ করছে আমাদের ইকোলজি এখানে ডিস্টার্ব হচ্ছে। আমাদের পরিবেশ ধ্বংসের মুখে। আমাদের ওই অঞ্চলটা বিশেষ করে সুরমা-কুশিয়ারা এবং ওই অঞ্চলের প্রায় ৬০ প্রজাতির পাখি, অনেক প্রজাতি হারিয়ে যাচ্ছ। অনেক প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। 

তো এগুলো হচ্ছে। আপনার সমমর্যাদার ভিত্তিতে কোনো কাজ হচ্ছে না। ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারতকে অবশ্যই একটা বৃহৎ দেশ হিসেবে তাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। তবে বাংলাদেশের মানুষ তাদের জাতীয়তাবাদী অহংকারে কোনো ধরনের আঘাত পড়ে তাহলে তারা তো ক্ষুব্ধ হবেই। এই জিনিসগুলোকে বিবেচনায় রেখেই ভারতকে চিন্তা করতে হবে। এখানকার যে ভোটারবিহীন সরকার তারা শুধুমাত্র টিতে থাকার জন্য এসমস্ত অসম এবং বৈষম্যমূলক চুক্তি করছে। তাদের সাথে একের পর এক অ্যাগ্রিমেন্ট করছে। এই জিনিসগুলো খুবই দুঃখজনক। এবং আমরা মনে করি সমমর্যাদার ভিত্তিতে কোনো চুক্তি যদি না হয় তাহলে এটা এ দেশের মানুষ মেনে নেবে না।

বাংলা আউটলুক: আপনি একটু আগেই বললেন যে, ভোটারবিহীন সরকার বা আপনাদের আন্দোলন সংগ্রামেও মাঠে ছিল আছে, বা বর্তমানে কোনো একটা জায়গায় তো আছেই। এই সমস্ত প্রতিবাদে কোনো যৌথ আন্দোলন হওয়ার সম্ভাবনা আছে?

রিজভী: যৌথ আন্দোলন তো আমরা করে আসছি। এই যে আপনি দেখছেন, ২৮ অক্টোবর থেকে আমরা যৌথ আন্দোলন করে আসছি। এখনো আমাদের তো যারা আমাদের জোট আছে, তারপর আরও সমমনা দলগুলো আছে, অন্যান্য জোটের সাথে আবার আমাদের একটা লিয়াজু করেও এই জাতীয় আন্দোলনের কর্মসূচিগুলো দেওয়া হয়। আমরা জোটগতভাবেই করছি। মোট কথা যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী, গণতন্ত্রকামী যারা মানুষ তারা মোটামুটি এক পক্ষেই আছেন। এবং তারা এই লড়াইটা অব্যাহত রেখেছেন যতক্ষণ পর্যন্ত না একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত হয় এবং এই যে জোরপূর্বক যে ক্ষমতা দখল করে আছে সেইখান থেকে সত্যিকারের গণতন্ত্রের উত্তরণ না ঘটে সে পর্যন্ত এই লড়াই অব্যাহত থাকবে।

বাংলা আউটলুক: এখন এখানে বসে ধরেন খুব কাছের ভবিষ্যতে কোনো যৌথ আন্দোলনের রূপরেখা বলতে পারবেন?

রিজভী: এখনো আন্দোলন থেকে আমরা সরে আসেনি। আমরা প্রত্যাহার করিনি। নানা ফর্মে আমাদের আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি আমরা করছি। বড় ধরনের ফেজ গেছে। এখন আবার নতুন করে কী কর্মকৌশল নেওয়া যায় যায় সেটা নিয়ে আবার মানে পলিসি মেকাররা বসবেন। দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা বসে তারা এই কর্মকৌশলটা ঠিক করবেন। তারপর কর্মসূচি ঠিক করে আমরা আবারও প্রোসিড করবো।

বাংলা আউটলুক: কোনো আত্মসমালোচনা আছে?

রিজভী: দল হিসেবে বিএনপির আমি মনে করি, আমাদের নেতৃত্ব যথেষ্ট যোগ্যতার সাথে দল পরিচালনা করছেন এবং একটা গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেটা হচ্ছে। আমি বলব যে, একটা সেই গন্তব্যটা হচ্ছে গণতন্ত্রের একটা বড় ক্যানভাস। সেই দিকে আমরা এগোচ্ছি। সেই ক্ষেত্রে যে এত বাধা বিপত্তি অত্যাচারের মধ্যেও যে আমরা টিকে থেকে এগিয়ে যাচ্ছি, লক্ষ্যটা আমি বলব যে, এটা একটা বড় ধরনের আলোচনা বা সমালোচনার কথা বলছেন তো? সমালোচনার এটা একটা দিক, আরেকটা দিক হচ্ছে আমরা যারা নেতা-কর্মী মানে মাঝারি স্তরের নেতা-কর্মী আমরা যারা রয়েছি। আমাদের আরও বেশি তৎপর হওয়ার দরকার। এটা আমার ব্যক্তিগত আত্মসমালোচনা যে আরও বেশি তৎপর হওয়া উচিত আরও বেশি আমাদের দায়িত্ব পালন করা উচিত যিনি নেতা। জনাব তারেক রহমান যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সবাইকে উদ্ধৃত করছেন। আমরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছি। তার সেই কথায় আরও বেশি আমরা তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সেটাকে  তৃণমূলেল নেতা-কর্মীরাও ঠিক আছে। আমি বলব যে মাঝারি বা তার পরের যে নেতা-কর্মীদের আরও বেশি সাড়া দিয়ে মাঠে থাকাটা শ্রেয় বলে মনে করি।

বাংলা আউটলুক: মানে যৌথ চিন্তা তৈরির ক্ষেত্রে, ধরেন যেকোনো বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের একটা থাকে যে ওখানে আমরা যৌথ চিন্তা করতে পারি বা পার্টির যেকোনো স্তরে যে যৌথ চিন্তা নির্মিত হচ্ছে বা ইউনিটির যে কথা বলি সেই জায়গায় আপনি যদি যথেষ্ট সন্তুষ্ট যে হ্যাঁ সাংগঠনিকভাবে আমরা যৌথ চিন্তা নির্মাণ করতে পারছি। 

রিজভী: নিশ্চয়ই বিভিন্ন টায়ার তো আমাদের আছে তাই না? তো আমাদের সর্বোচ্চ টায়ার হচ্ছে নীতি নির্ধারণীয় একটা ফোরাম সেটাকে বলে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডিং ফোরাম। তো ন্যাশনাল স্ট্যান্ডিং কমিটিতে সেখানে আলাপ-আলোচনা হয়। সেটা আমরা যারা এক্সিকিউট করবে। তারপর এক্সিকিউটিভ কমিটির মধ্যে একটা আছে মানে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য শর্ট আমরা একটা যৌথ সভা করি। সেই যৌথ সভাতে আলাপ-আলোচনা করে তারপর আমরা ইমপ্লিমেন্টেশনে দিকে যায় মানে বাস্তবায়নের দিকে যাই। এভাবেই আমাদের কর্মকাণ্ডগুলো চলে এসেছে। এ ক্ষেত্রে তো নিশ্চয়ই যখন আমরা একটা কমিটির মাধ্যমে অনেককে নিয়ে যখন আমরা বাস্তবায়ন করি তখন তো সেটা যৌথ কর্মসূচি বাস্তবায়নের অংশ। সেখানে কোনো বিচ্ছিন্ন বা একক কোনো কিছু করা তো এখানে অবকাশ নেই। কারণ কর্মসূচিটা ফর্মুলেট হচ্ছে আপনার হায়েস্ট ফোরামে স্ট্যান্ডিং কমিটির ফোরামে। তারপর বাস্তবায়নের জন্য মানে এক্সিকিউশনের জন্য তারপরে এক্সিকিউটিভ জায়গায় আসে। যেমন ধরুর আমাদের একটা হয়তো বড় কর্মসূচি এর মধ্যে আসতে পারে সভা-সমাবেশ যাইহোক এরকম। তো এটার জন্য আলোচনা হয়েছে স্ট্যান্ডিং কমিটির ফোরামে। আমাদের এক্সিকিউটিভ যে কমিটির যে যৌথ সভা আছে। তারপর আমরা কবে করব কোনোদিন করবো ওইখানে তো আবার সিদ্ধান্ত হবে। সিদ্ধান্ত হওয়ার পর তখন আমরা নেতা-কর্মীদেরকে অর্গানাইজ করা এবং জনগণকে আহ্বান করা এই কাজগুলো করব।

বাংলা আউটলুক: আপনারা গণতন্ত্রের জন্য লড়ছেন। তাহলে গণতন্ত্রেল জন্য যে দল লড়ে তার প্রিন্ডিশন তো হচ্ছে দলের অভ্যন্তরে যে গণতান্ত্রিক চর্চাটা থাকতে হবে। তো সেই হিসেবে আপনি মূল্যায়ন কীভাবে করবেন।

রিজভী: দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চার কোনো অভাব রয়েছে বলে আমি দেখি না। আমাদের বিভিন্ন সময় ধরুর আমাদের জরুরি ভিত্তিতে হয়তো কখনো কোনো কমিটি খুব জরুরি হয়ে পড়েছে তখন ওটা দেওয়া হয়। কিন্তু আপনি দেখেছেন আমাদের কিছুদিন আগেও ছাত্রদলের কমিটি হয়েছে নির্বাচনের মাধ্যমে। এবং আমাদের জেলা পর্যায়ের কমিটিগুলো অধিকাংশই থানা থেকে ডিস্ট্রিক্টে পর্যায় পর্যন্ত কাউন্সিলের মাধ্যমেই হয়েছে। অধিকাংশই আমাদের কাউন্সিলের মাধ্যমেই হচ্ছে। অতীতেও হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। আর এক্সিকিউটিভ কমিটি তো সেটা তো হলো যিনি প্রধান নেতৃত্বে থাকেন দলের যিনি প্রধান নেতা তিনি সেটা তৈরি করেন। আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই তৈরি করেন। 

আপনার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে নির্বাচন হয়, ওখানে হেড অফ দি এক্সিকিউটিভ তো হচ্ছে প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট তার এক্সিকিউটিভ মানে মিনিস্ট্রি তৈরি করেন। 


বাংলা আউটলুক: সিলেকশনে না ইলেকশনে ওটাই জানতে চাচ্ছি , মানে আপনাদের ক্ষেত্রে?

রিজভী: এটা তো ডাইরেক্টলি এবং ইনডাইরেক্টলি ইলেকশনেই হচ্ছে। আমাদের কাউন্সিলর দায়িত্ব দেয় চেয়ারম্যানকে মানে এক্সিকিউটিভ কমিটি তৈরি করার জন্য। তো চেয়ারম্যান সেটা তৈরি করেন অনেকের সাথে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে। সুতরাং এটা তো পরস্পরভাবে তো নির্বাচনই হচ্ছে। চেয়ারম্যানকে ইলেক্টেড হতে হয় কাউন্সিলের দ্বারা। তারপর কাউন্সিলই ক্ষমতা দেওয়া আছে চেয়ারম্যানের ওপর। এক্সিকিউটিভ বডি সব করেন।

বাংলা আউটলুক: সর্বতোভাবে আপনার নিজের কিছু বলার আছে কি না?

রিজভী: বলার আছে, এটাই মানে আপনার গণমাধ্যমের যারা সাংবাদিক রয়েছেন আপনাদের মাধ্যমে আমরা শুধু এটুকুই বলতে চাই, আমরা যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে আমাদের যে লক্ষ্য, এই অর্জনে আমরা এখনো ঐক্যবদ্ধ এবং শক্তিশালী। কারণ একটা সত্যের জন্য ন্যায়ের জন্য যে সংগ্রাম কখনো ব্যর্থ হয়নি। অতীতেও হয়নি এখনো হবে না। আমরা সেই মূলমন্ত্র ধরেই আমাদের নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। যেহেতু একটা দানব সরকার জনগণের ঘাড়ের ওপর চেপে আছে, দীর্ঘদিন চেপে থাকতে পারে না। সুতরাং আমাদের যেমন স্বাধীনতার জন্য লড়াইয়ের একটা ঐহিহ্য আছে। আবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াইয়েরও একটা ঐতিহ্য আছে। আমরা ৯০ এর একটা স্বৈরাচারকে পরাজিত করেছি। সুতরাং বর্তমানে যে আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার রয়েছে তারও পরাজয় ঘটবে। এবং সেই পরাজয়ের জন্য আপনার মাধ্যমে দেশ এবং বিদেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ যেভাবে আমাদের সমর্থন এবং ভবিষ্যতেও করবে। এই আশা রেখে আমি আমার বক্তব্য শেষ করলাম।

বাংলা আউটলুক: ধন্যবাদ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন