Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

একান্ত সাক্ষাৎকার : মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন ও নির্মূল করতে চায় আওয়ামী লীগ

Icon

দিলশানা পারুল

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৭:৫৯ পিএম

বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন ও নির্মূল করতে চায় আওয়ামী লীগ

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিলশানা পারুল।

বিএনপিকে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন ও নির্মূল করতে চায় বলে মনে করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও বলা হয়েছে, বিএনপি তাদের প্রধান শক্র। তার মতে, এই সরকারের লক্ষ্য বিরাজনীতিকরণ করা। আওয়ামী লীগাররাও এখন সরকারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মন্ত্রী আছে, এমপি আছে, কিন্তু সরকার চালায় কিছু আমলা, বেনজীর-আজিজের মতো কিছু ব্যক্তি।  

বাংলা আউটলুককে দেওয়া দীর্ঘ আলাপে আরও অনেক বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দিলশানা পারুল। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ প্রথম পর্ব।

বাংলা আউটলুক: আসসালামু আলাইকুম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে আজ আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে কেমন আছেন?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর: আমি আছি, বেশ ভালোই আছি। যা হয় আর কী, জেলে ছিলাম, তখন একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। জেল থেকে বেরিয়ে দেখি ওজন অনেক কমে গেছে। প্রায় সাড়ে ছয় কেজির মতো। যা বয়স হয়েছে তারপরও চেষ্টা করি যতটা ভালো থাকার জন্য। অসুখ আছে অনেকগুলো। 

বাংলা আউটলুক: জেলে কতদিন ছিলেন?

মির্জা ফখরুল: জেলে এবার ছিলাম সাড়ে তিন মাস। 

বাংলা আউটলুক: আপনাদের যেখানে রাখে সেই জেলটা কোথায়?

মির্জা ফখরুল: কেরানীগঞ্জ।

বাংলা আউটলুক: আপনাদের কি সাধারণ জেলে রাখে? আপনাদের জন্য কোনো বিশেষ ব্যবস্থা নেই?

মির্জা ফখরুল: ওখানে শুধুমাত্র যারা ডিভিশনপ্রাপ্ত হয়, অর্থাৎ এক্স মিনিস্টার, এক্স এমপিস অথবা হাই অফিসিয়ালস এদের জন্য ওই জেলের মধ্যেই আলাদা বিল্ডিং আছে। ওখানে অনেকগুলো রুম আছে। সে রুমগুলো খারাপ না। এটাস্ট বাথরুম আছে। সেই রুমগুলো যারা ডিভিশনপ্রাপ্ত তাদের জন্য। আইন অনুযায়ী আমরা ডিভিশন পাই, যেহেতু এমপি ছিলাম, মন্ত্রী ছিলাম। অন্যান্য হাই অফিসিয়ালসরাও পান। কিন্তু অনেক নিয়ম থাকে। আমরা বাইরে যেতে পারতাম না। কেউ আসতে পারত না। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারটা ওদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। 

বাংলা আউটলুক: গতদিন আমি আরও বেশ কয়েকজনের ইন্টারভিউ নিয়েছি। সেখানে আমি যে তথ্য পেলাম, আনুমানিক ৬০ লাখ বিএনপি কর্মীর বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে মামলা আছে।

মির্জা ফখরুল: হ্যাঁ আমাদের ডেটাগুলো তাই বলে, আমাদের যে ইনফরমেশন। আমাদের কাছে সব মামলার তথ্য ছিল। তবে গতবার পুলিশ যখন রেইড দিল আমাদের অফিসে, তখন সেগুলো সব ভেনিশ করে দিয়েছে। পুরো অফিসটা রেইড করে তচনচ করে দিয়েছে। আমাদের কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, ল্যাপটপ সব নিয়ে চলে গেছে। 

বাংলা আউটলুক: এই যে ব্যাপক পরিমাণে হামলা-মামলা। তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের জনবিচ্ছিন্ন করে দেওয়া। সামগ্রিক বিষয়টি বিএনপি কীভাবে সামাল দিচ্ছে?

মির্জা ফখরুল: আমি সব সময় বলি আপনি দেখেছেন, চরম একটা নির্যাতনের মুখে পড়েছে বিএনপি এবং এই নির্যাতনটির কারণ হচ্ছে যে, বিএনপিকে তারা নিশ্চিহ্ন করতে চায়, নির্মূল করতে চায়। এই সরকারের যেটা লক্ষ্য, বিরাজনীতিকরণ করা। আপনি লক্ষ্য করবেন, আওয়ামী লীগেরাও কিন্তু এখন সরকারের ওইভাবে গুরুত্বপূর্ণ না। মন্ত্রী আছে, এমপি আছে, কিন্তু সরকার চালায় কিন্তু কিছু আমলা, বেনজীর-আজিজের মতো কিছু ব্যক্তি। আওয়ামী লীগের যারা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব তাদের খুব বেশি অবস্থান এখন আওয়ামী লীগের মধ্যেও নেই। যে কারণে এটা এখন একটা অবস্থা চলে গেছে, এটা পুরোপুরি একটি অথোরিটারিয়ান গভর্নমেন্ট তৈরি হয়েছে। বিএনপি যেহেতু সবচেয়ে বড় বিরোধী দল, তাকে নির্মূল করতে পারলে সে নিসকণ্ঠক হয়ে যাবে।

বিএনপি যদিও ইলেকশনে আসছে না কয়েক বছর ধরে, তারপরও বিএনপি তাদের প্রধান শক্র। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতেও বলা হয়েছে, বিএনপি তাদের প্রধান শক্র। এই যে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকারি দল যদি বলে বিরোধী দল তাদের প্রধান শত্রু। সেখানে গণতন্ত্র কখনো থাকে না। গণতন্ত্রের নিম্নতম যে ব্যাপারটা আছে, সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ণুতা, সেটি মিসিং পুরোপুরি। আওয়ামী লীগ কিন্তু পুরোনো ঐতিহ্যবাহী একটি রাজনৈতিক দল। সেই পাকিস্তান আমলে ৪৯ সালে তাদের জন্ম হয়েছিল। তারপর তারা কিন্তু আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী, এদের সঙ্গে পরে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন। তারা এক সাথে আওয়ামী লীগ তৈরি করেছিল। সেই আওয়ামী লীগ কিন্তু এখন আর নাই। সেটা আওয়ামী লীগের নেতারাই বলে। আওয়ামী লীগের নেতারাই এখন বলেন, আমাদের সেই আওয়ামী লীগ তো আর নাই। কারণ নতুন আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ। এদের চিন্তা-ভাবনাই হচ্ছে ভিন্ন। তখন তাদের চিন্তা ছিল সমাজতন্ত্র করবে। সেই সমাজতন্ত্র চলে গেছে। এখন তারা নাই। নিদিষ্ট কিছু ব্যবসায়ী, অ্যান্ড করাপশন ইন গভর্নমেন্ট, দে আর মেকিং মানি এবং সেই টাকা তারা দেশেও রাখছে না। পাচার করে দিচ্ছে। দেশের অর্থনীতিকেও তারা ধ্বংস করছে। আর রাজনৈতিক কাঠামো তো পুরোটা ধ্বংস করে ফেলেছে। আমার কাছে মনে হয়, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অপরাধ যদি থাকে, এই গভর্নমেন্টের, সে অপরাধ হচ্ছে এটা, রাজনৈতিক কাঠামোটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে বাংলাদেশের। একটা দেশের ডেমোক্রেটিক স্ট্রাকচার থাকবে, যেখানে ইনস্টিটিউশনগুলো ডেভেলপ করবে। ইনস্টিটিউশনগুলো উইল টেক চার্জ (দায়িত্ব নেবে)।


আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই কিন্তু তারা লুটপাট করেছে। লুটপাট করে একদম শেষ করে দিয়েছে। সাধারণ কথায় ফোকলা করে দিয়েছে। অর্থাৎ এম্পটি। এই অবস্থা তারা তৈরি করে ফেলেছে। এ দেশের সাধারণ মানুষের এখন কোনো অধিকার নেই। যারা ভিন্ন মতধারী, সুশীল সমাজের লোকেরা তারাও চরম বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। ডক্টর ইউনূসের ব্যাপারটা দেখতে পাচ্ছেন। তার মতো বিশ্ব বরেণ্য নোবেল বিজয়ীকে কীভাবে হেনস্তা করছে এই সরকার। শুধু ইউনূস না, যে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে সমস্যায় পড়বে। 

বাংলা আউটলুক: এই যে বেনজীরের কথা উঠে এসেছে, আজিজের, এই যে এনটিটিগুলো সরকারের মধ্যে থাকা, সরকার বলবো না, রাষ্ট্রীয় পদ-পদবিতে থাকা। এই এনটিটিগুলোর মধ্যে এতদিনে যত দুর্নীতি দেখছি এতে বোঝায় যাচ্ছে টিপ অব দ্য আইসবার্গ পার্ট। ভেতরে আরও কত বিশাল আছে। এই যে ব্যাপক পরিমাণে দুর্নীতি, এই দুর্নীতিকে অ্যাকাউন্টেবল (জবাবদিহিমূলক) করার উপায় কী? আপনাদের কোনো প্রস্তাবনা আছে কী না?

মির্জা ফখরুল: এখানে বর্তমানে যে অবস্থা, স্ট্রাকচার, এই স্ট্রাকচারে অ্যাকাউন্টেবল হবে না। কারণ পার্লামেন্ট থাকতে হবে। যে পার্লামেন্ট ইফেক্টিভ হবে। যে পার্লামেন্ট অল গভর্নমেন্ট অফিসার, মিনিস্টার অ্যাকাউন্টেবল হবে। প্রাইম মিনিস্টার উইল বি অ্যাকাউন্টেবল। তাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে। সেই ব্যবস্থা তো এখন নেই। এখন পার্লামেন্টে পুরোপুরি তাদের লোক। তারপর ডামি ক্যান্ডিডেট তারাই। তারপর তাদের কিছু গৃহপালিত লোক আছে। যার ফলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে, কোনো অ্যাকাউন্টেবিলিটি কোথাও নাই। সরকার তো চাচ্ছে এরা এটা করুক। সরকারি কর্মকর্তারা দুর্নীতি করুক। তাহলে তাদের পক্ষে টিকে থাকা সহজ হবে। এ কারণে তারা এটা করছে। এই স্ট্রাকচার অ্যাকাউন্টেবল করার কোনো সুযোগ নাই। একমাত্র উপায় এই গভর্নমেন্টকে চলে যেতে হবে। এই গভর্নমেন্ট যদি না যায়, আপনি কিছু করতে পারবেন না। 

বাংলা আউটলুক: এখন তাহলে দুর্নীতির বিষয়টি চলে আসলো। বিএনপির শাসন আমলে কী দুর্নীতি ছিল না?

মির্জা ফখরুল: না আমরা কখনই বলি না, বিএনপির শাসন আমলেও দুর্নীতি ছিল। সেটা সহনীয় মাত্রায় ছিল। এরকম লাগামহীন ব্যাপক দুর্নীতি কখনই ছিল না। সেখানে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতো। এরা মুখে বলে ব্যবস্থা নিচ্ছি, তবে আসলে টোটাল স্ট্রাকচারটাই দুর্নীতিবাজ করে ফেলেছে। কিছু সংখ্যক এখনো আমলা আছেন যারা এটার মধ্যে জড়িত হতে চান না। কিন্তু তারা অনেক সময় বাধ্য হন, তাদের চাপে পড়েন প্রশ্রয় দিতে। এ সরকার না গেলে এখানে ইফেক্টিভ কিছু করতে পারবেন না।

বাংলা আউটলুক: তারপর ধরেন যতটুকু আওয়ামী লীগ সরকারের গ্রহণযোগ্যতা আছে, একটা মহলের মধ্যে তো, বিশেষ করে দেখা যায়, আমাদের উচ্চবিত্ত এবং উচ্চ মধ্যবিত্তের মধ্যে একটা ভালো গ্রহণযোগ্যতা আছে। তার পেছনে একটা বড় কারণ এই যে মেট্রোরেল, পদ্মা ব্রিজ জাতীয় উন্নয়ন। এই যে আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রাজনৈতিক দর্শন। এটাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

মির্জা ফখরুল: আওয়ামী লীগের উন্নয়নের রাজনৈতিক দর্শন কীসের ওপর ভিত্তি করে আমি জানি না। বলে তো একটা কথা, কিন্তু মূলত ব্যাপারটা আলাদা। তাদের দর্শনটা হচ্ছে চুরি করা। দুর্নীতি করা, মেগা প্রজেট করবে মেগা দুর্নীতি করবে। আমি কয়েকদিন আগে একটা কথা বলেছিলাম, দু-একটা পত্রিকায় এসেছিল, এই চীন থেকে যারা টাকাটা নেয়, সরকার নেয়, সরকার নিয়ে এসে এখানে টেন্ডার করে। টেন্ডার করে তারা কাজ দেয়। এখানে যে টাকাটা আনে সেটার ৫ পার্সেন্ট কমিশন দিতে হয় সরকারের মদদপুষ্টদের। আবার টেন্ডারে গিয়ে কাজে যায়, তখনও ৫ পার্সেন্ট দিতে হয়। এটা শুধুমাত্র যারা আনছে এবং যারা কাজ দিচ্ছে। এখানেই একটা বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে। এরপর তো আপনার যারা কাজ করছে তাদের দুর্নীতি, সবকিছু মিলিয়ে একটা ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যার ফলে তাদের মূল লক্ষ্যটা হচ্ছে দুর্নীতি করা। টাকা বানানো। এর প্রমাণ তো আপনারা দেখেছেনই সরকারি কর্মকর্তারা কয়েকজন কি হারে লুট করেছে। 

আছাদুজ্জামান মিয়ার দুর্নীতি নিয়ে একটি পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়েছে। অথচ তার বিরুদ্ধে দুদক এখনো তদন্ত শুরু করেনি। অন্যদিকে পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন থেকে তারা একটি বিবৃতি দিয়েছে। একটা গণতান্ত্রিক দেশে প্রশাসনের একটা অংশ, তারা কীভাবে প্রকাশ্যে থ্রেট করে সাংবাদিকদের, একটা স্টেটমেন্ট দিতে পারে- এটা আমাদের বোধগম্য না। এটা হয়েছে কারণ গভর্নমেন্ট পুলিশকে ছাড়া চলতে পারে না। পুলিশকে দিয়েই তারা অপকর্মগুলো করায়। নির্বাচনে জেতায়। মধ্যরাতে নির্বাচন করে। বিরোধীদলকে অ্যারেস্ট করে। বিরোধী দলের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ায়। ৬০ লক্ষ মামলা সব পুলিশ দিয়েছে। 

বাংলা আউটলুক: যে চিত্রটা বললেন। দুই দিনের মধ্যে ২৭ হাজার মামলা। এই যে ক্র্যাকডাউন, লক্ষ লক্ষ বিএনপির কর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া এবং ঘর ছাড়া করা, এই রকম একটা পরিস্থিতিতে আসলে একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নিজেদের সংগঠিত রাখবে কীভাবে? আবার রাখছেই কীভাবে?

মির্জা ফখরুল: ১৫ বছর ধরে বিএনপি তো বিরোধীদলে আছে এবং তখন থেকেই আমরা আক্রমণ, নির্যাতন, নিপীড়নের মধ্যে আছি। আপনি তো নিশ্চয় জানেন, আমাদের একজন এমপি ইলিয়াস আলী সিলেটের, তাকে গুম করে দেওয়া হয়েছে ২০১২ সালে এবং তার পরে ক্রমাগতভাবে আমাদের আরেকজন এমপি পারভেজ, লাকসামের, তারপরে প্রায় ৭০০ নেতা-কর্মী গুম করা হয়েছে। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ ছাত্রদল-যুবদলের নেতা। তাদেরকে গুম করে ফেলা হয়েছে। এরপর বহু লোককে গুম করা হয়েছে। এরপর দেখেছেন আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, তাকে গুম করে তারপর তাকে ভারতে ছেড়ে দিয়ে এসেছে। এই যে একটা সর্বগ্রাসী নির্যাতন। নিপীড়ন। আমার জানা মতে বিএনপির মতো কোনো ডেমোক্রেটিক পার্টি আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বে এরকম এক্সপেরিয়েন্স করেছে আমার জানা নেই। ডেমোক্রেটিক পলিটিক্যাল পার্টি এবং তিন বার তারা ইলেকশনে জিতে এসেছে। দেখেন এই যে কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের কথা বলি। কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট তো ওদের দাবি ছিল। আওয়ামী লীগের দাবি ছিল।

তারা এটা নিয়ে আন্দোলন করেছে। ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। বাড়িঘর পুড়েছে। সম্পত্তি নষ্ট করেছে। ১১ জনকে তাদের আন্দোলনের সময় গান পাউডার বোমা দিয়ে মেরে দিয়েছে। ম্যাডাম সেটাকে বুঝলেন। বুঝে বললেন ঠিক আছে। ইলেকশন দিতেই হবে মেন্ডাটারি। ইলেকশন করলেন। ওই ইলেকশনে যে পার্লামেন্ট তৈরি হলো সেই পার্লামেন্ট কিন্তু প্রথম রাতেই সারারাত বসে আমরা কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টকে পাস করলাম। সেই কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টকেই তারা বাতিল করল।

আমি ইতিমধ্যে কারাগারে গেছি ১১ বার। আমার বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা ১১১টা। এই অবস্থায় কিন্তু আমরা রাজনীতি করছি। মজার ব্যাপার বলবো না, এটা একটি বিস্ময়কর ব্যাপার, আওয়ামী লীগ বিএনপি ভাঙার বহুত চেষ্টা করেছে। এখন পর্যন্ত বিএনপি ভাঙতে পারেনি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর সে প্রচেষ্টা আরও বাড়িয়েছিল। এই বারও তারা ইলেকশন করলো। সেখানেও দল ভাঙার চেষ্টা করেছে। একমাত্র শাহাজান ওমর ছাড়া আর কাউকেই তারা নিতে পারেনি। এই বিষয়গুলো প্রমাণ করে বিএনপি হ্যাজ এ মার্জ। প্রকৃত অর্থে এটি একটি রিয়েল ডেমোক্রেটিক পার্টি। এত নির্যাতন সহ্য করার পরও তাদের সরাতে পারছে না। ডেমোক্রেটিক পার্টির তো এত নির্যাতন সহ্য করার কথা না। কিন্তু তারা পারছে না। 

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদতবরণ করার পরে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া লিডারশিপে আসেন। তিনিও ৯ বছর লড়াই করেছেন এরশাদের বিরুদ্ধে। উনিও জেলে গেছেন।  আমাদের কাছে এখন মনে হয় এরশাদও এত ভয়াবহ ছিল না। এরশাদের স্বৈরাচারী শাসনের আমলে এত ভয়ংকর অবস্থা ছিল না। আজকে একটা সর্বগ্রাসী গভর্নমেন্ট তৈরি হয়েছে। যারা আমাদের বিরোধীদলের ওপর অত্যাচার করছে।  এটা একেবারেই টার্গেটেড। বিষয়টি পরিষ্কার বিএনপিকে তারা এলিমিনিটেড করতে চায়। কারণ বিএনপি জাতির স্বার্থে কখনো কম্প্রোমাইজ করে না। অতীতেও করেনি, কখও করবে না। জনগণের যে স্বার্থ, সেই স্বার্থে বিএনপি কখনো কম্প্রোমাইজ  করবে না। এটা তারা জানে, জানে বলেই তারা বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। 

বিএনপিকে নির্মূল করা যাবে না। কারণ বিএনপি দেশের জনগণের দল। জনগণের যে চিন্তাভাবনা সেটি বিএনপির রাজনীতি। মোটাদাগে যদি বলেন, বিএনপি কী, বিএনপি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। বিএনপি বাংলাদেশের যে আলাদা একটি ভূখণ্ড, পশ্চিমবাংলা না, বা আসাম না, ত্রিপুরা না বা ভারতের একটি অঙ্গরাজ্য নয় এটা বিএনপির রাজনীতি এবং জনগণের রাজনীতি। 

আর একটা বিষয় হচ্ছে যে, জনগণ সত্যিকার অর্থে এখানে একটা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা চায়। ধর্ম নিরপেক্ষ কিন্তু আপনার ধর্ম বিরোধিতা নয়, আমরা অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। আমরা সবসময় মনে করি ইসলাম এখানে একটি ধর্ম, যেটা এখানকার বেশিরভাগ মানুষেরা পালন করে। সুতরাং তার গুরুত্ব তো কিছুটা থাকবেই। ধর্মকে বাদ দিয়ে এখানে কিছু করা যাবে না। এই জিনিসটা এ দেশের মানুষ বিশ্বাস করে। যেহেতু আমাদের রাজনীতির ভেতরে সেটা আছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সংযোজন করেছিলেন। আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা-বিশ্বাস সংযোজন করেছিলেন। একই সঙ্গে সকল ধর্মালম্বীদের অধিকার সেটা তিনি নিশ্চিত করেছিলেন। আমরা এটাই বিশ্বাস করি। কারণ এটা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য দর্শন রাজনীতির। আমাদের দল তো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি এবং তার জাতীয়তাবাদী দর্শনের ওপর প্রতিষ্ঠিত। 

বিএনপি কয়েকটি বিষয়ে কখনো কম্প্রোমাইজ করে না। তারমধ্যে একটি হচ্ছে বিএনপি কখনো গণতন্ত্রের বিষয়ে কম্প্রোমাইজ করে না। দুই হলো, স্বাধীনতা-র্সাবভৌমত্ব প্রশ্নে বিএনপি কখনো আপস করে না। 


বাকি অংশ দ্বিতীয় পর্বে......

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন