Logo
Logo
×

সাক্ষাৎকার

আঞ্জুয়ারা হত্যার বিচার হয়নি, হয়নি মামলাও

Icon

প্রকাশ: ০১ মে ২০২৪, ০৫:৩৩ পিএম

আঞ্জুয়ারা হত্যার বিচার হয়নি, হয়নি মামলাও

আজ মহান মে দিবস। প্রতিবছর মে দিবসে শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নানান প্রতিশ্রুতি আসে। দিন যায়, মাসের পর বছর গড়িয়ে যায়। শ্রমিকের অধিকার কাগজেই থেকে যায়। না হয় অধিকার প্রতিষ্ঠা না হয় শ্রমিক হত্যার বিচার।

গত বছর ৮ নভেম্বর গাজীপুরে অধিকার আদায়ের মিছিলে পুলিশের গুলিতে মারা যান ৩০ বছর বয়সী গার্মেন্টশ্রশিক আঞ্জুয়ারা খাতুন। আজও বিচার হয়নি। তার দুই শিশুসন্তান, আরিফ ও জয়া, জানেই না তাদের মায়ের কী হয়েছিল। স্বামী জামাল উদ্দিনকে মামলা বা সাধারণ ডায়েরিও করতে দেওয়া হয়নি।

জামাল উদ্দিনের সাথে কথা বলেছেন বাংলা আউটলুকের ঢাকা প্রতিনিধি।

জামাল উদ্দিন বর্তমানে দুই শিশুসন্তানসহ সিরাজগঞ্জ জেলার কাজীপুরে থাকেন। স্থানীয় চরগ্রিস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করিয়েছেন আরিফ ও জয়াকে। দুই শিশুসন্তানের দেখাশুনার জন্য কদিন আগে পুনরায় বিয়েও করেছেন। দীর্ঘ আলোচনায় আঞ্জুয়ারা খাতুন নিহত হওয়ার সেই সময় এবং পরবর্তী পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন তিনি।

জামাল উদ্দিন ওই সময় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে কোনাপাড়া এলাকায় থাকতেন। কাশিমপুর পল্লী বিদ্যুতে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করতেন। নিত্যদিনের মতো ওই দিনও সকাল ৮টার মধ্যে বাসা থেকে বের হন সহকর্মীদের সাথে। এর আগে কয়েক দিন ধরে গাজীপুরসহ আশপাশের পোশাক কারখানায় শ্রমিক আন্দোলন চলছিল। দিনটি ছিল বুধবার। আন্দোলনের কারণে কারখানা ছুটি হয়ে যায়। আঞ্জুয়ারা অপর সহকর্মীদের সাথে বাসায় ফিরছিলেন। পথে জামালের সঙ্গে দেখা হয়। জামাল বলেন, ‘আমি তাকে বলেছিলাম, তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় যাও। এই বলে আমি আমার কাজে চলে যাই।’

জামাল বলেন, ‘আঞ্জুয়ারা মেশিন অপারেটর পদে চাকরি করতেন। আমার ফুফু, মামাতো ভাইসহ বেশ কয়েকজন আত্মীয় স্বজনও ওই গার্মেন্টে কাজ করত। তারাই আমাকে ঘণ্টাখানেক পর ফোন দেয়। বলে, আঞ্জুয়ারার ওপর হামলা হয়েছে।’ জামাল দ্রুত ঘটনাস্থলে (জোরন, কেআই স্পিনিং) গিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন আঞ্জুয়ারা।  সারা শরীর রক্তাক্ত।

তিনি বলেন, ‘তাকে নিয়ে আমি হাসপাতালে হাসপাতালে ছুটাছুটি করি। বেলা ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম। নিতে নিতে রাস্তায় মারা যায়। হাসপাতালের ডাক্তার শুধু নিশ্চিত করেছিলেন, আঞ্জুয়ারা মারা গেছেন।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ওই দিনই পোস্টমর্টেম হয়। বিকেল নাগাদ মরদেহ নিয়ে সিরাজগঞ্জে ফিরে যান জামাল। পারিবারিক গোরস্থানে দাফন হয়।

জামাল উদ্দিন বলেন, ‘শুধু লাশের রিসিভ কপি ছাড়া আমাকে কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। পোস্টমর্টেম রিপোর্টও আমি আজও পাইনি। আঞ্জুয়ারার লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে দ্রুত গ্রহণ এবং সিরাজগঞ্জে নিয়ে দ্রুত দাফনের ব্যবস্থা করেছিলেন আমাদের এমপি তানভীর শাকিল জয়। এমপি ৩০ হাজার টাকাও দিয়েছিলেন যাতে দ্রুত দাফন করি।’

আঞ্জুয়ারা মৃত্যুর পর বিজিএমইএ থেকে ৫ লাখ এবং ইসলাম গার্মেন্টস থেকে ১ লাখ টাকা পেয়েছিলেন বলে জানান জামাল উদ্দিন। এর বাইরে সরকার থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা কিছুই পাননি।

 এ ঘটনায় কোনো মামলা করতে পারেননি জামাল উদ্দিন। এর কারণ হিসেবে তিনি অভিযোগ করেন, ‘ডেথ সার্টিফিকেট, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বা কোনো প্রকার কাগজপত্রই আমাকে বা পরিবারকে দেয়নি। ইসলাম গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষও কোনো সহযোগিতা করেনি এই হত্যার পেছনের ঘটনা উদঘাটনে।’

তিনি বলেন, ‘শিশুসন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে পল্লী বিদ্যুতের চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে আসি। এখন এখানেই কোনোমতে বেঁচে আছি।’

স্ত্রী হত্যার বিচার চান কি না এ  প্রশ্নের জবাবে জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিচার তো পাব না। তাই বিচার চাইও না। কারা মেরেছে, কিভাবে মেরেছে তা সকলেই জানে। আমার স্ত্রী একজন সাধারণ কর্মী ছিলেন। তিনি তো আন্দোলনে যাননি। তার তো কোনো দোষ ছিল না। তাহলে তাকে কেন পুলিশ গুলি করে মারল?’

গত বছর ৮ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গাজীপুরে শ্রমিকরা আন্দোলনের নামেন। এর মধ্যে গার্মেন্ট ছুটি ঘোষণা করে। আঞ্জুয়ারা কারখানা থেকে বের হয়ে চৌরাস্তার জরুন এলাকায় গেলে পুলিশ গুলি চালায়। আঞ্জুয়ারার মাথায় গুলি লাগে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন আঞ্জুয়ারা।  আঞ্জুয়ারা ইসলাম গার্মেন্টসের ইউনিট-২ সেলাই মেশিনের অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন