Logo
Logo
×

বিনোদন

‘তুফান’ বিশেষ কিছু নয়, কিন্তু দেখতে হলে যাওয়া উচিত

ফয়সাল মাহমুদ

ফয়সাল মাহমুদ

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ০৯:৪৭ এএম

‘তুফান’ বিশেষ কিছু নয়, কিন্তু দেখতে হলে যাওয়া উচিত

বাড়িতে চলচ্চিত্র দেখা আর হলে গিয়ে দেখা সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেয়।

বাড়িতে গোপনে দেখতে অস্বস্তি লাগে এমন একটি সিনেমা হলের প্রাণবন্ত পরিবেশে দেখলে তা আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতায় রূপান্তরিত হতে পারে। অন্য দর্শকদের সঙ্গে হাসি-উত্তেজনা শেয়ার করার মধ্য দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে অগভীর একটি চলচ্চিত্রও অধিক উপভোগ্য হয়ে উঠতে পারে।

বিপরীতভাবে, একটি চলচ্চিত্র বাড়িতে আপনার মনে যতটা গভীরভাবে অনুরণিত হতে পারে, আপনার দর্শন-প্রক্রিয়া যতটা উন্মোচিত-প্ররোচিত করতে পারে, সেই তুলনায় বড় পর্দায় তা দীপ্তি হারাতে পারে। যে উপাদানগুলি একে ব্যক্তিগত সেটিংয়ে (বাসায়) চিত্তাকর্ষক করে তুলতে পারে তা বড় পর্দায় (হলে) ক্লান্তিকর বা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে পারে।

আমি এটা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছিলাম, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার প্রথম দিনগুলিতে। সে সময় আমার একজন বুদ্ধিজীবী কাজিন (যাকে আমি মজা করে ‘আঁতেল’ বলতাম) যার মাধ্যমে সম্মানিত চলচ্চিত্র নির্মাতাদের সঙ্গে হঠাৎ করেই আমার পরিচয় হয়। 

এই কাজিন আমার সিনেমা-রুচি পরিমার্জিত করাকে তার মিশন বানিয়েছিলেন। আমাকে ‘কনয়ার’, ‘দ্য রক’ ও ‘ফেস অফ’-এর মতো উনিশ নব্বইয়ের দশকের অ্যাকশন ব্লকবাস্টার থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন এবং আমাকে আন্দ্রেই টারকোভস্কি, আব্বাস কিয়ারোস্তামি এবং জিন-লুক গডার্ডের সিনেমার দিকে পরিচালিত করেছিলেন।

তিনি আমাকে তার পুরানো উইন্ডোজ-২০০০ ডেস্কটপে তাদের চলচ্চিত্র দেখতে বাধ্য করেননি। তিনি আমাকে রাশিয়ান কালচারাল সেন্টার ও আজিজ সুপার মার্কেটের মতো জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন, যেখানে এই প্রশংসিত পরিচালকদের স্ক্রিনিং বিক্ষিপ্তভাবে দেখানো হয়েছিল।

আমি স্পষ্টভাবে একটি ঘটনা স্মরণ করি। আজিজ মার্কেটে একটি সিনেমা দেখার সময় আমার নিরবচ্ছিন্ন, অপ্রীতিকর প্রশ্নের কারণে আমার পাশে বসা প্রখ্যাত অভিনেতা গাজী রাকায়েত আমাকে বিনয়ের সাথে চলে যেতে বলেছিলেন।

রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে জাপানি পরিচালক ইয়াসুজিরু ওজুর একটি চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সময় আরেকটি স্মরণীয় ঘটনা ঘটেছিল। আমি এতটাই উদাস হয়েছিলাম যে, দূরে সরে গিয়ে আমার কাজিনের বাসায় চলে গেলাম। কোনো চিন্তা না করেই তার বিছানায় ঘুমিয়ে পড়লাম।

আশ্চর্য হল, আমি পরে আবিষ্কার করেছি, আমার ফিল্ম উৎসাহী কাজিনও একই কাজ করেছিলেন। তিনিও আমার মতোই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরেছিলেন। আমি ঘুমানোর সময় অজান্তেই কাজিনের সঙ্গে একই বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম।

কাজিনের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত প্রতিফল দিয়েছিল। তিনি সত্যিই আমার সিনেমা-রুচি পরিবর্তন করতে সফল হয়েছিলেন। এখন, ৪০ বছর বয়সে, আমি নুরি বিলগে সিলান এবং আব্বাস কিয়ারোস্তামির মতো পরিচালকদের ছবিতে সান্ত্বনা পাই এবং বেশির ভাগ অ্যাকশন ফিল্ম সহ্য করতে পারি না। ব্যতিক্রম জেসন বোর্ন সিরিজ, যা আধা ঘণ্টার বেশি দেখতে পারি।

যাইহোক, আমি নিশ্চিত নই যে আমি আর থিয়েটারে সিলানের উইন্টার স্লিপ (আমার সর্বকালের প্রিয় চলচ্চিত্র) উপভোগ করতে পারব। আমি এখন এ ধরনের চলচ্চিত্রের জন্য আমার বাড়ির অন্তরঙ্গ সেটিং পছন্দ করি। আমার আগ্রহ জাগিয়ে তোলে এমন যেকোনো সিনেমা, যা দেখতে গিয়ে প্রয়োজনে বিরতি নিতে পারি এবং গবেষণা করার স্বাধীনতা পাই। একটি চিন্তা-প্ররোচনামূলক চলচ্চিত্রের জন্য আত্মদর্শন এবং চিন্তাভাবনার জন্য শ্বাস-প্রশ্বাসের জায়গা প্রয়োজন, যা একজন দক্ষ পরিচালকের তৈরি সূক্ষ্মতাগুলির গভীর উপলব্ধি করার সুযোগ দেয়, যা কেবল বাড়িতেই সম্ভব।

‘তুফান’—থিয়েটার অভিজ্ঞতার জন্য তৈরি একটি চলচ্চিত্র। এটি একটি ক্লাসিক ‘মাসালা’ ফিল্ম। ঈদের ছুটিতে উপযুক্ত হিসেবে মুক্তি পেয়েছে। পলায়নবাদের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে লোকেরা তাদের সব উদ্বেগ পিছনে ফেলে থিয়েটারের অন্ধকারে কয়েক ঘণ্টার বিশুদ্ধ ফ্যান্টাসির মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে।

‘তুফান’ তার জমকালো উপস্থাপনা দিয়ে দর্শকদের প্রলুব্ধ করে, যা আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে অতুলনীয়। একজন পাকা ফিল্ম সমালোচক মুভির কালার গ্রেডিং এবং ক্যামেরা ওয়ার্কের বিশদ বিবরণ খুঁজে পেতে পারেন, যা আমার মতে, শাকিব খানের অভূতপূর্ব চেহারা এবং আচরণের সাথে উন্নতরূপে খাপ খেয়েছে।

এটা ঠিক যে, কাহিনিটি হাস্যকর, যুক্তি কার্যত অস্তিত্বহীন, এবং আইন-শৃঙ্খলার চিত্রায়ণ মারাত্মকভাবে ভারসাম্যহীন। যাইহোক, একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র হিসাবে এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল বৃহৎ দর্শকগোষ্ঠীকে আকর্ষণ করা এবং গুঞ্জন তৈরি করা, সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনাকে উদ্দীপিত করা নয়।

ভরা থিয়েটারে ‘তুফান’ দেখে মজা পেলাম। যদিও এটি আমার ব্যক্তিগত সেরা বাংলা সিনেমার ‘হল অভিজ্ঞতা’ ছিল না, যা আমি ‘হাওয়া’ ও ‘মনপুরা’য় পেয়েছিলাম। বিশেষ করে এই বিবেচনায় যে, আমি খুব কমই প্রেক্ষাগৃহে পুরো একটি সিনেমা দেখেছি। তবে ‘তুফান’-এর পুরোটা সময়ই থেকেছি।

প্রথম আলোতে সাংবাদিক তৌহীদ ফিরোজের সৎ মূল্যায়ন আমাকে অনুরণিত করেছে। আমি ‘তুফান’-এর সম্পূর্ণ পর্যালোচনা করব না। আমি সহজভাবে বলব, আপনার সমর্থন ‘তুফান’-এর মতো ঢালিউড-সিনেমাগুলিকে পরিমার্জিত ও উন্নত করতে উৎসাহিত করতে পারে, যা আরও উচ্চমানের প্রযোজনার পথ প্রশস্ত করবে।


Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন