বয়স মাত্র ২৩। ভারতীয় সংস্কৃতিকে তিনি বিশ্বমঞ্চে শুধু তুলেই ধরলেন না, অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন কান চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে। না, অভিনয়ে নয়, পোশাকের ফ্যাশনে।
যে উৎসবে চলচ্চিত্র নিয়েই হৈচৈ হয়, তাও প্রধানত পশ্চিমা চলচ্চিত্র নিয়ে, সেখানে ভারতীয় তরুণীর ফ্যাশন-প্রতিভা নিয়ে পশ্চিমা সাংবাদিকদের হল্লা দেখার মতোই বলতে হবে।
ন্যান্সি উত্তরপ্রদেশের মেয়ে। তার আছে এক ভাই। একমাত্র উপার্জনকারী তাদের মা। কারখানায় কাজ করতেন তিনি। সারাদিন হাড়ভাঙা খাটুনি। সন্ধেয় যখন বাড়ি ফিরতেন তখন তার মাথা থেকে পা পর্যন্ত কালো হয়ে থাকত কয়লার গুঁড়োয়। ন্যান্সি সইতে পারতেন না সেই দৃশ্য।
পড়াশোনার পাশাপাশি ন্যান্সি চিন্তা করতেন কী করবেন। ২০২০ সালে লকডাউনের সময় ফেলে দেওয়া কাপড় থেকে নানা রকম পোশাক বানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেন ন্যান্সি। সেগুলো অনেকেরই নজর কাড়ে। অনুগামীর সংখ্যা যেমন বাড়তে থাকে তেমনি শুরু হয় বিক্রি। তাছাড়া ভিডিয়ো থেকেও উপার্জন শুরু হয়।
২০২৩ সালে মাকে কারখানার কাজ থেকে ফিরিয়ে আনেন ন্যান্সি। সে বছরই কানেও আমন্ত্রণ পান তিনি। কানে প্রতিবছর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রভাবশালীদের অনেককে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিভিন্ন সংস্থা তাদের সেখানে নেওয়ার ব্যবস্থা করে।
আমন্ত্রণ পাওয়ার পর ন্যান্সি আরও ব্যতিক্রম, আরও বিশেষ কিছু উপস্থাপনের চিন্তা করেন। কারণ তিনি জানতেন, প্রধানত পোশাকের নতুনত্বই কানের গালিচায় হাঁটা নায়িকাদের তুলে ধরে। ন্যান্সি সেই তারকাদের ছাড়িয়ে যেতে চাইলেন।
ন্যান্সির ভাষায়, ‘এত দিন অনেক গাউনই নিজে হাতে বানিয়েছি। কাপড় কেনা থেকে শুরু করে সবই নিজে হাতে করেছি। কিন্তু কানের প্রথম দিনের গাউন কেমন হওয়া উচিত তা আমাকে বলে দিয়েছে আমার ভাই।’
ফ্রান্স একই সঙ্গে খাবার, ফ্যাশন ও চলচ্চিত্রের জন্য বিশ্ব জুড়ে বন্দিত। বিজ্ঞান-দর্শনেও বিশ্বের প্রথম সারিতে রয়েছে এই দেশ। সেই দেশের সাংবাদিককদের চোখে মুগ্ধতা দেখে মুগ্ধ হয়েছেন ন্যান্সিও। তবে তিনি তার মুগ্ধতা বুঝতে না দিয়ে চটপট করে বলেন, ‘আমার পোশাক আমি নিজেই তৈরি করেছি। এক হাজার মিটার কাপড় দিয়ে এই গাউন বানাতে সময় লেগেছে ৩০ দিন।’
ন্যান্সি জানান, ভাইয়ের কথা অনুযায়ী গোলাপি ঝরনার মতো বিপুল দৈর্ঘ্যের ওই গাউন তৈরি করেন ন্যান্সি। তার ভাষায়, ‘এই গাউন ফ্রান্সে নিয়ে যেতে আমার ঘাম ছুটে গিয়েছিল। তিনটি গাউনের মধ্যে একটির ওজন ২৫ কেজি। তিনটির মোট ওজন প্রায় ৬০ কেজি।’