Logo
Logo
×

নির্বাচন ২০২৪

এবার ভোট বর্জনের প্রতিদান চায় সাধারণ মানুষ

Icon

প্রকাশ: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০২:০৭ এএম

এবার ভোট বর্জনের প্রতিদান চায় সাধারণ মানুষ

বিএনপির আহবানে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ ভোট বর্জন করেছে। এবার সাধারণ মানুষ বিএনপির কাছে তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রাজনীতির বাইরের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার অন্তত ৩০ জন সাধারণ মানুষের সাথে বাংলা আউটলুক সরাসরি কথা বলে এ মনোভাব জেনেছে।

শনিবার সকাল ১০টা। রাজধানীর শান্তিনগর কাঁচা বাজার। শান্তিনগর ইস্টার্ন হাউজিং-এর বাসিন্দা রোকসানা বেগম। ৪৫ বছরের রোকসানা নিয়মিত বাজার করেন শান্তিনগর কাঁচা বাজারে। বাংলা আউটলুকের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা হয় তার। বললেন, প্রতিদিনই বাজার দর বাড়ছে। জীবন নিয়ে হাঁপিয়ে উঠেছি। স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তান নিয়ে খুবই কষ্ট হচ্ছে। স্বামী আজমল হোসেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার। তার একার আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে নানামুখি চ্যলেঞ্জের মধ্যে আছে রোকসানা বেগমের ক্ষুদ্র পরিবারটি। বলেন, নির্বাচনের আগের দুই মাস গরুর মাংসের দাম কমলেও এখন আবারও আগের দামই নেওয়া হচ্ছে। সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম হু হু বাড়ছে। কী করবো ভেবে পাচ্ছি না। এর দায় রাজনৈতিক দলগুলোর। বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ভোট দেইনি এবার। দেখি বিএনপি এখন কীভাবে আমাদের জন্য ভূমিকা রাখে।

৬৫ বছর বয়সী আলতাফ মিঞা। ভাগ্য বদলের জন্য ২০ বছর আগে গাইবান্ধার সাদুল্ল্যাপুর থেকে রাজধানীতে পা রাখেন। এসেই রিক্সায় প্যডেল মারা শুরু করেছেন। বহু চাকা ঘুরিয়েছেন। কিন্তু ভাগ্যের চাকা একটুও ঘোরেনি। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আলতাফ বললেন, অনেক বারই ভেবেছি, চলে যাব এই শহর ছেড়ে। যেতে পারিনি। ৪ সন্তানের একটিকেও মানুষ করতে পারিনি। ব্যর্থ হয়েছি। কষ্ট হয়। তিন সন্তান বিয়ে করেছে। নতুন সংসার পেতেছে। দুই জন আমার মতোই রিক্সা চালায়। একজন গার্মেন্টে কাজ করছে। মাঝে মধ্যেই ওদের অভাবের কথা কানে আসে। নিরুপায়। কী করবো। মাসে ২০ দিনের বেশি রিক্সা চালাতে পারি না। প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার টাকা আয় করি। জমা দিয়ে ৭’শ সাড়ে ৭’শ থাকে।  এখান থেকে পুলিশকেও টাকা দিতে হয়। গ্যারেজ এলাকার ক্ষমতাসীন দলের লোকজনকেও সপ্তাহে ১ হাজার করে দিতে হয়। রামপুরার বউবাজারে ভাড়া বাসায় থাকি। মাস চলে না। এবার মনে করেছিলাম, ভোট না দিলে হাসিনা বিদায় নেবে। তারেক জিয়ার সরকার আসবে। কিন্তু মনে হয় আর হবে না। দেশটা শেষ। আমরা না খেয়েই মরবো। বিএনপি আমাদের জন্য কিছুই করবে না, দুঃখ হয়। এভাবেই এক দিন মরে যাব হয়তো, আফসোস করেন আলতাফ মিঞা।

রাজধানীর মগবাজার এলাকার মর্ডার্ন আইডিয়াল স্কুলের শিক্ষক কাউসার আহম্মেদ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে মাস্টার্স করেছেন তিন বছর আগে। বহু চেষ্টা করেছেন সরকারি চাকরির জন্য। এরপর ভাল কোনো স্কুল বা কলেজে। কিন্তু লবিং করে কুলিয়ে উঠতে না পেরে, এখানেই থিতু হয়েছেন। বাংলা আউটলুকের সাথে কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন কাউসার। নরসিংদী সদরের বাসিন্দা। এক সময় খাইরুল কবীর খোকনের হয়ে এলাকায় রাজনীতিও করতেন। তবে, গরীব পরিবারের সন্তান হওয়ায় রাজনীতিতে চূড়ান্তভাবে টিকতে পারেননি। তবে, পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন। রেজাল্টও ভাল। জীবন নিয়ে খুবই হতাশ কাউসার বললেন, ভোট বর্জন করেছি। পরিবারের কাউকে ভোট দিতে দেইনি। নানান হুমকি-ধামকিও ছিলো। কিন্তু ভেবেছি, রাজনৈতিক দলের বাইরে সাধারণ মানুষেরও ভূমিকা রাখা জরুরি। আমি আশাবাদী এই সরকার হয়তো ৬ মাসও টিকবে না। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো শক্তভাবে মাঠে নামবে। আমরা মুক্ত হবো। আর যদি বিএনপি এখনই শক্ত আন্দোলন নিয়ে না নামে, তারা তো শেষ হবেই, সাধারণ মানুষও রেহাই পাবে না এই সরকারের হাত থেকে।

আবু হানিফ একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার। সোনালী ব্যাংকের এজিএম হিসেবে অবসরে গিয়েছেন ৮ বছর আগে। মালিবাগ কাঁচা বাজারে ছোট্ট নাতনী মালিহাকে নিয়ে এসেছেন বাজার করতে। বাংলা আউটলুকের সাথে আলাপে তিনি ক্ষেপে গিয়ে বললেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে এবার বিএনপির দায় শোধের পালা। জনগণ ভোট বর্জন করেছে। একে কী অর্জন হলো, সেটা বুঝিয়ে দিতে হবে বিএনপিকে। এই জুলুমের হাত থেকে দেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে আমরা দেখতে চাই বিএনপি কী উদ্যোগ নেয়। আমরা দ্রুত সমাধান বা প্রতিদান, যা বলেন সেটা বুঝে চাই। আর পারছি না। এই যে আমার নাতনীকে দেখছেন, আমি চাই ওর জন্য সুন্দর একটা দেশ বিএনপি করে দিক। জনগণ কথা রেখেছে, বিএনপিসহ যারাই ভোট বর্জনের আহবান জানিয়েছে তারা বলেছে, ভোট না দিলে এই স্বৈরাচার বিদায় হবে। এখন আগামী ৩ মাসের মধ্যে এদের বিদায় করার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলুক তারা। আমরা সাথে থাকবো, দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন হানিফ সাহেব।

রাজধানীর আইডিয়াল কলেজের ছাত্র আবিবুর রহমান। ভোটার হননি এখনো। বললেন, আম্মু আব্বুসহ আমার বাসার যারাই ভোটার তারা বলেছে, ভোট না দিলে শেখ হাসিনা সরকার থাকবে না। কিন্তু দেখুন, তারা তো ঠিকই সরকার গঠন করে ফেলেছে। ৫ বছর থেকেও যাবে মনে হচ্ছে। তবে, সাধারণ মানুষ কিন্তু তারেক রহমানের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মনে করি, আমি যখন ভোটার হবো, তখন ভোট দিতে পারবো, সেই পরিবেশ তৈরি করে দেবেন তারেক রহমান। ওনার কাছে আমার এটা প্রত্যাশা। সেই অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা করে দ্রুতই বিএনপি আন্দোলনে নামবে বলে প্রত্যাশা আবিবুরের।

নাজমা। রাজধানীর ইস্কাটনের কয়েকটি বাসায় ছুটা বুয়ার (গৃহসহকারী) কাজ করেন। তিনি বলেন, আমি তিনটি বাসায় কাজ করি। ওনারা কোনো রাজনীতি করেন না। কোনো আলোচনাও করতে দেখিনি কখনো। ওনাদের কেউই ভোট দেননি। বলেছেন, ভোট দিয়ে লাভ নেই। যাকেই ভোট দেবেন, শেখ হাসিনাই সরকারে থাকবে। তাই, বিএনপির ডাকে সাড়া দিয়ে ভোট দেননি। আমি নিজেও শাহ নূরী স্কুলের ভোটার। ভোট দেইনি। আমি এই সরকারের বিদায় চাই। দেইখেন- এই সরকার টিকবে না, যোগ করেন নাজমা।   

সাধারণ মানুষের এসব বক্তব্যের মূল্যায়নে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলার চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোর আহবানে যেভাবে সাড়া দিয়েছে তার প্রতিদান তাদের দিতেই হবে। না হলে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষ যদি হতাশ হয়ে পড়ে আর দলগুলোর ওপর আস্থা হারায়, তাহলে সাংগঠনিক কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অপমৃত্যু হয়েছে। বিএনপিসহ আন্দোলনকারী দলগুলোর একটা জনভিত্তি তৈরি হয়েছে। এখন বিএনপির উচিৎ জনগণের জন্য প্রত্যাশিত ভূমিকা রাখা। যদিও নুরুল হক নুরের দল, এবি পার্টিসহ কয়েকটি ছোট দল ইতিমধ্যেই ভূমিকা রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু বিএনপির তেমন কোনো ভূমিকা এখনো আমরা দেখছি না। আমার প্রত্যাশা বিএনপিও এটি নিয়ে কালক্ষেপন না করে কার্যকর ভূমিকার মাধ্যমে জণআকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।

এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল লক্ষ অর্জন এবং মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলনে বিএনপি এখনো সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির ওপর সাধারণ মানুষের যে আস্থা দেখিয়েছে, বিএনপি তার মর্যাদা রাখবে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আরো শক্ত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই ফ্যাসিবাদের পতন হবেই। সে জন্য বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না। জনগণকে সাথে নিয়ে এ আন্দোলনে বিজয় আসবেই।

  

     

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন