Logo
Logo
×

নির্বাচন ২০২৪

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু: ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন

Icon

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৪, ১০:২২ পিএম

বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু: ডিপ্লোম্যাটের প্রতিবেদন

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে গণতন্ত্রের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম দ্য ডিপ্লোম্যাট। শুক্রবার প্রকাশিত ওই ফিচার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে এ নির্বাচনের ফলাফল ছিলো প্রত্যাশিত এবং দীর্ঘদিন ধরে পূর্বানুমিত। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তিনি এ বিষয়টি প্রায়শই স্পস্ট করেছেন। যে কারণে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। 

নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু ভাবে উপস্থাপন করতে সরকার পর‌্যবেক্ষকদের দিয়ে চেষ্টা চালিয়েছে। কিন্তু সেটি হালে পানি পায়নি। সেটি বিতর্কিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট উপাদান সৃষ্টি করেছে। অনেক বিতর্ক, অভিযোগ এবং সহিংসতার তথ্য এ নির্বাচনকে কলঙ্কিত করেছে। 
ডিপ্লোম্যাট বলছে, হাসিনার আওয়ামী লীগ আরেকটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতা নিশ্চিতের পেছনে বিরোধী ও ভিন্নমতকে ধংস করার কারণ রয়েছে।

ডিপ্লোম্যাট তাদের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের বিস্তর বর্ণনা দিয়েছে। সেখা বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে গণতন্ত্রের একটি বিতর্কিত সম্পর্ক রয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশের গণতন্ত্র নস্যাত করে একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েমের দায়ে ১৯৭৫ সালে দেশের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারকে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। শেখ হাসিনা এবং তার বোন যারা তখন ইউরোপে ভ্রমণ করছিলেন তারাই পরিবারের একমাত্র বেঁচে ছিলেন।

শেখ মুজিবের মৃত্যু ও অভ্যুত্থান জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এইচএম এরশাদের দ্বারা দেশে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার প্রচেষ্টার একটি দীর্ঘ সারি তৈরি করে। ১৯৯১ সালে দেশে ১৬ বছরের টালমাটাল রাজনীতির পরে গণতন্ত্র ‘পুনরুদ্ধার’ হয়েছিল যখন একটি গণবিক্ষোভ তৎকালীন স্বৈরশাসক এরশাদকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল।

কিন্তু ১৯৯১ সালের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে বিরোধীরা একটি অসম খেলার ক্ষেত্র নিয়ে অভিযোগ করেছে। বাংলাদেশে যে কোনো ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন সবসময়ই নির্বাচনের দিন সহিংসতা এবং বিরোধীদের জন্য দমন-পীড়নের রূপ নেয়। বর্তমান আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনুষ্ঠিত বিগত তিনটি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও একই আপাত প্রধান নিয়ম প্রযোজ্য ছিল।

২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রথম নির্বাচন যা বিএনপি সহ চারটি প্রধান বিরোধী দল নির্বাচন বর্জন করে। ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে যায় এবং ভোটের দিন সহিংসতায় প্রায় দুই ডজন লোক মারা যায়।

২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে - যেটিকে অনেক পর্যবেক্ষক এবং অধিকার গোষ্ঠী ‘জাল নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছে - আওয়ামী লীগ ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে অভূতপূর্ব জয়লাভ করেছে। প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করা হয়েছিল এবং ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডারদের দ্বারা ভোট কারচুপি এবং ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ ও অভিযোগ ছিল।

এসব কারনেই বিরোধীরা ২০২৪ সালে একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবি করে। যে দাবিটি ছিলো যৌক্তিক। বাংলাদেশে ১৯৯১, ১৯৯৬ সালে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়েছে (সেই সময় বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা নিজেই দাবি করেছিলেন), এবং ২০০৬ সালে। কিন্তু এবার হাসিনার কাছে এই দাবিটিকে অসাংবিধানিক বলার কারণ ছিল কারণ তার সরকার ছিল। ২০১১ সালে একটি সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সিস্টেমটি বাতিল করা হয়।

২০২৪ সালের প্রেক্ষাপট: 
জারিফ ফাইয়াজের লেখা ডিপ্লোম্যাটের ওই প্রতিবেদনে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থবিরতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, বিশ্বব্যাংকের গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২৪ অর্থ বছরে দেশটি এশিয়ায় ষষ্ঠ সর্বোচ্চ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করার পথে। 
কিন্তু প্রবৃদ্ধির এই সব চিত্তাকর্ষক কীর্তি এক ধরণের কাগুজে। মূলত আওয়ামী লীগ ও তাদের দুর্নীতিবাজ সদস্যরা ব্যাপক সম্পদ আহরণ করেছে। তারা এটি রক্ষা করতে গিয়ে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করেছে এবং বিরোধীদের উপর দমপ-পীড়ণ চালিয়েছে। 

২০২৩ সালের আগস্ট থেকে অন্তত ২৭ হাজার বিএনপি কর্মীকে কারারুদ্ধ করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাজনৈতিক মামলায় দলটির ১ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীকে ফাঁসানো হয়। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অন্তত ২০০ সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। সরকার সাইবার স্পেস রক্ষার জন্য এই ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট প্রণয়ন করেছে এমন দাবি করলেও মূলত সেটি বিরোধীমত দমনের জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে। 
৭ জানুয়ারির নির্বাচনের অসুস্থ দিক 

৭ জানুয়ারী ভোটের আগের সপ্তাহে জাতীয় পার্টির ২৬৫ প্রতিদ্বন্দ্বী সদস্যদের মধ্যে ২২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে আসেন। অপর একটি বিরোধী দলও ভোট কারচুপি এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও কর্মীদের দ্বারা ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগে এনে নির্বাচন বর্জন করে। 
নির্বাচনের দিন একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ভোটারদের উপস্থিতি ঐতিহাসিকভাবে কম ছিল। অনেক ভোট কেন্দ্র সারাদিন সম্পূর্ণ নির্জন ছিল। কিছু কেন্দ্রে, যখনই সাংবাদিকরা নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রতিবেদন করতে আসেন তখনই জাল সারি একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ে। একাধিক কেন্দ্রে সহিংসতা, ভোট কারচুপি, ব্যালট ভর্তি এবং জাল ভোটারের অভিযোগও পাওয়া গেছে।

এর আগে বিশেষজ্ঞরা এ ভোট নিয়ে তাদের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করেছিলেন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় ভোটাররা এটি বর্জন করবে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে ২৮ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। যা পরে ৪০ শতাংশে উন্নীত করা হয়।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন