ইউরোপিয়ান সংসদ সদস্য এবং মানবাধিকার কমিটির সদস্য ড. ইভান স্টেফানেক বাংলাদেশের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে অবৈধ স্বীকৃতি দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের অনিয়ম, ভোট জালিয়াতির বিবরণ এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, গুম, খুনের চিত্র তুলে ধরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান এবং ইউরোপিয়ান কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেলকে চিঠি লেখেন।
বুধবার লেখা চিঠিতে তিনি বলেন, (রবিবার) সাধারণ নির্বাচনের পর আমি বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে আমার উদ্বেগ প্রকাশ করতে চাই এবং বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানাতে চাই।
স্টেফানেক বলেন, ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন ছিল সরকারের প্রধান দলের (আওয়ামী লীগ) পক্ষ থেকে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও অগণতান্ত্রিক চর্চার চূড়ান্ত পরিণতি মাত্র। শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, যিনি ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় রয়েছেন এবং পঞ্চমবারের মতো জয়ী হয়েছেন।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক ও বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ব্যার্থ এবং অসঙ্গতিপূর্ণ (নির্বাচনের) নানা প্রতিবেদন বন্যার মতো ভেসে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য বলেছে, নির্বাচন বিশ্বাসযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন উল্লেখ করেছে যে, হাজার হাজার বিরোধী সমর্থককে স্বৈরতান্ত্রিক কায়দায় আটক করা হয়েছে বা ভয় দেখানো হয়েছে।
চিঠিতে স্টেফানেক লেখেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই নাজুক এবং ভোটের আগে ব্যাপক সহিংসতা হয়। ২৮ অক্টোবর (২০২৩) সরকার বিরোধী সমাবেশগুলো সহিংস হয়ে ওঠে এবং ২০ হাজারেরও বেশি বিরোধী সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে পুলিশ সরকারের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন অনুসারে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন; যার মধ্যে রয়েছে অপহরণ, স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ড এবং আরো। তার সরকার কেবল বিরোধীদের নয়, অমানবিক আচরণ চলেছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপরও।
নির্বাচনে অসঙ্গতির চিত্র তুলে ধরে তিনি লেখেন, দেখা গেছে যে, নির্বাচনের দিন বিকেল ৪টার মধ্যে মাত্র ২৮% ভোট পড়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার অবিশ্বাস্যভাবে পরে ঘোষণা করেছেন ৪০%। তবে অধিকাংশ ভোটকেন্দ্র প্রায় বা সম্পূর্ণ ফাঁকা ছিল। কর্মকর্তা এবং অধীনস্থদের ব্যালট পেপারে সিল দিতে এবং বাক্স ভর্তি করতে বাধ্য করা হয়েছিল। অনেক ভোটকেন্দ্রে শিশুরা ব্যালট পেপারে সিল দেয় এবং সেগুলো বৈধ ভোট হিসাবে গণনা করা হয়। আমন্ত্রিত অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচনকে প্রহসন বলে নিশ্চিত করেছেন।
স্টেফানেক বলেন, আমি আপনাকে অনুরোধ করছি নির্বাচনকে অবৈধ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে, বাংলাদেশে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে বলতে। যেহেতু দেশটি বাণিজ্য ও উন্নয়নমূলক সহযোগিতায় আমাদের দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার। আমি বিশ্বাস করি, ইইউ বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াবে।