২ জুন ঘোষণা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের বাজেট, এবার থাকছে কিছু ব্যতিক্রম

অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। ফাইল ছবি
প্রতিবছর জুন মাসের কোনো বৃহস্পতিবার বাজেট ঘোষণার রেওয়াজ থাকলেও এবার তার ব্যতিক্রম ঘটছে। ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে সোমবার, ২ জুন। আসন্ন বাজেটের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বছরের তুলনায় কিছুটা কম।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণী বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। এই বাজেট হবে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে ঘোষিত প্রথম বাজেট।
ঈদের আগে বাজেট, সংসদ ছাড়াই হবে উপস্থাপন
বাজেট ঘোষণার তারিখ এগিয়ে আনার একটি বড় কারণ হলো—ঈদুল আজহার ছুটি। জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগেই বাজেট উপস্থাপন সম্পন্ন করতে চায় সরকার। এজন্যই ২ জুন দিনটিকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
পরদিন, অর্থাৎ ৩ জুন, বাজেট-উত্তর সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
জাতীয় সংসদ ভঙ্গ হয়ে যাওয়ায় এবার বাজেট উপস্থাপন হবে টেলিভিশনের পর্দায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশের মাধ্যমে। এটি হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার নিয়ম অনুসরণে একটি টেলিভিশনভিত্তিক ভাষণ। এমনভাবে বাজেট উপস্থাপন ২০০৭-০৮ সালে করা হয়েছিল, যখন মির্জা মো. আজিজুল ইসলাম একই ধরনের উপদেষ্টা হিসেবে বাজেট দিয়েছিলেন।
বাজেটের আকার কমছে, তবে কিছু খাতে থাকবে অগ্রাধিকার
বর্তমানে কার্যরত (২০২৪–২৫) অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। সেই তুলনায় নতুন বাজেটের আকার প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা কম হতে যাচ্ছে। অর্থ উপদেষ্টা এর কারণ হিসেবে বলেছেন—বড় প্রকল্প না নেওয়ার সিদ্ধান্ত, সংকুচিত এডিপি এবং আর্থিক সংযম।
বাজেটে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) খাতে।
সর্বাধিক গুরুত্ব পাবে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, তথ্যপ্রযুক্তি, সামাজিক নিরাপত্তা।
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ও অর্থনৈতিক পূর্বাভাস
এই বাজেটের সিংহভাগ অর্থ আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে। এনবিআরের জন্য আগামী অর্থবছরে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে মূল লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা পরে কমিয়ে ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়।
মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্য থাকছে এবারের বাজেটে। ঘোষণা অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি কমিয়ে ৬.৫ শতাংশে আনার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, বাজেট ঘাটতি জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে রাখার চেষ্টা চলবে।
২০২৫–২৬ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৫.৫ শতাংশ।
অর্থ উপদেষ্টার ভাষ্য অনুযায়ী, এই বাজেট হবে বাস্তবমুখী ও সংকট-উত্তরণকেন্দ্রিক। অতিরিক্ত ব্যয় বা নতুন প্রকল্প না নিয়ে, চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি আনতেই এবার নজর দেওয়া হচ্ছে।
“আগামী বাজেটে প্রয়োজনের বাইরে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে না। বরং চলমান প্রকল্পগুলোকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে”— বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।