বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে পতন, ট্রাম্প প্রশাসনের আশ্বাস সত্ত্বেও বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা বাড়ছে

আরো পড়ুন
বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে ব্যাপক পতন অব্যাহত রয়েছে, কারণ বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন যে, একটি ব্যাপক বাণিজ্য যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করতে পারে এবং মন্দার দিকে নিয়ে যেতে পারে। যদিও হোয়াইট হাউস দাবি করেছে যে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিগুলো দীর্ঘমেয়াদে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে না, তবুও বাজারের অবস্থা ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে।
সোমবার, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২.৭% কমে যায়, ডাউ জোন্স ২% হ্রাস পায়, এবং প্রযুক্তিখাত-ভিত্তিক নাসডাক ৪% নিচে নেমে যায়। বিনিয়োগকারীরা তথাকথিত "ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন" কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করেন—অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল, মাইক্রোসফট, মেটা, এনভিডিয়া এবং টেসলা। টেসলার শেয়ারের দর ১৫% কমে যায়, যা ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরের পর সবচেয়ে খারাপ দিন ছিল।
এশিয়া ও ইউরোপের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব
এশিয়ার বাজারও ওয়াল স্ট্রিটের পতনের ধাক্কা খেয়েছে। মঙ্গলবার, জাপানের নিক্কেই এবং তাইওয়ানের শেয়ার সূচক প্রায় ৩% কমে যায়, যা গত সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছায়। এমএসসিআই এশিয়া-প্যাসিফিক সূচক (জাপান বাদে) ১% হ্রাস পায়।
এমনকি চীনা বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, যেখানে এ বছর উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও ব্লু-চিপ সূচক ১% কমে গেছে, আর হংকংয়ের হ্যাং সেন সূচক ১.৫% হ্রাস পেয়েছে।
ইউরোপীয় বাজারও নিম্নমুখী অবস্থার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ডিএএক্স ফিউচার সূচক ০.৮% কমেছে, এবং ইউরোস্টক্স ফিউচার ০.৯% হ্রাস পেয়েছে, যা আরও বড় ধরনের বিক্রির সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।
ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া এবং প্রশাসনের আশ্বাস
এই শেয়ারবাজার পতনের একদিন আগে, রবিবার এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প অর্থনৈতিক মন্দা সম্পর্কে সরাসরি উত্তর এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, "এটি একটি পরিবর্তনের সময়, কারণ আমরা অনেক বড় কিছু করছি... এটি কিছুটা সময় নেবে, তবে আমার মনে হয়, এটি আমাদের জন্য ভালো হবে।"
জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের প্রধান কেভিন হ্যাসেট সোমবার সিএনবিসিকে বলেন যে, ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিগুলোর ফলে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা আগামী এপ্রিলের শুরুর দিকেই সমাধান হবে এবং এসব নীতি যুক্তরাষ্ট্রে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।
হ্যাসেট বলেন, "এটি যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন শিল্পকে পুনরায় কেন্দ্রীয় ভূমিকায় আনছে," উল্লেখ করে তিনি জানান যে ফেব্রুয়ারিতে ১০,০০০ নতুন উৎপাদন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এটি মোট ১.২৭ কোটি উৎপাদনশিল্প কর্মসংস্থানের মাত্র ০.০৮% বৃদ্ধি।
তিনি আরও দাবি করেন, "ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী হওয়ার অনেক কারণ আছে। আমরা এখনো ইতিহাসের সবচেয়ে বড় কর ছাড়, ব্যাপক নিয়ন্ত্রণমুক্ত অর্থনীতি, এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতার নতুন মাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করছি।"
ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং বাজারের প্রতিক্রিয়া
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্রের তিন প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেন। তিনি চীনের ওপর শুল্ক ১০% থেকে ২০% বাড়িয়েছেন এবং মেক্সিকো ও কানাডার পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন, যদিও তিনি আগামী মাসে নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন।
অ্যাটলান্টা ফেডারেল রিজার্ভের জিডিপি নাউ ট্র্যাকার (যা মার্কিন অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়) ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, বছরের প্রথম তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সংকুচিত হতে পারে, যার অন্যতম কারণ হল বাণিজ্য ভারসাম্যের নেতিবাচক প্রভাব।
তবে ট্রাম্প বারবার দাবি করেছেন যে তার বাণিজ্য নীতিগুলোতে কোনো অনিশ্চয়তা নেই।
ট্রাম্প প্রশাসনের বক্তব্য এবং বিনিয়োগকারীদের সংশয়
ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিষয়ে শঙ্কার মধ্যে, তার বানিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক এনবিসির 'মিট দ্য প্রেস' অনুষ্ঠানে বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রে কোনো মন্দা আসবে না," এবং ট্রাম্পের অর্থনৈতিক নীতির সমালোচকদের তুলনা করেন সেইসব লোকের সঙ্গে, যারা আগে ট্রাম্পের নির্বাচনী বিজয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, "আগামী দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দেখা যাবে।"
তবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। বাজারের চলমান অনিশ্চয়তা এবং বিনিয়োগকারীদের ব্যাপক শেয়ার বিক্রির ফলে বাজারের দুর্বল অবস্থান স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন যে, যদি ট্রাম্প প্রশাসন শিগগিরই বাণিজ্য নীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে না পারে, তবে বিনিয়োগকারীদের আস্থার আরও অবনতি ঘটতে পারে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান