আওয়ামী স্বৈরশাসনের অন্যতম নৃশংস শিকার ছিলো পুজিবাজারের ছোট বিনিয়োগকারীরা। বাজারে রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের কারসাজিতে একাধিকবার নিজেদের সমস্ত পুঁজি হারিয়ে পথে বসার অবস্থা হয়েছিলো অনেক ছোট বিনিয়োগকারীর। নতুন বাংলাদেশে আর সবকিছুর মতো পুজিবাজার নিয়েও মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ছিলো।
কিন্তু পুঁজিবারের অবস্থা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। হাসিনাশাহীর পতনের পর টানা চারদিন পুজিবাজারে চাঙ্গাভাব থাকলেও এরপর থেকে ক্রমাগত তা নিম্নমুখী হতে শুরু করে যা বাজারের অবস্থাকে ভয়াবহ করে তুলেছে।
গত চার মাসে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৯৫ শতাংশ কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। ৮ আগস্ট নতুন সরকার গঠনের পর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) একদিনে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৬৫ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু ডিসেম্বরের ৬ তারিখ লেনদেন নেমে এসেছে মাত্র ৩৩৫ কোটি টাকায়।
উচ্চ সুদহার, মূল্যস্ফীতি এবং ডলারের উচ্চ বিনিময় হারের কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। বিত্তশালীরা ব্যাংকের আমানত ও ট্রেজারি বন্ডকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন। ফলে বাজারে নতুন বিনিয়োগ আসছে না। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরা লোকসানের শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন।
দেশের দুই প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) শেয়ার ও ইউনিটের দরপতন অব্যাহত রয়েছে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর কমার পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমে এসেছে।
ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৪২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বেড়েছে, বিপরীতে ৩০৮টির দর কমেছে, আর ৩৮টির দর অপরিবর্তিত ছিল। দিনশেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৪১ পয়েন্ট কমে ৫,১৯৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। বাছাই করা ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১,৯১১ পয়েন্টে, আর শরিয়াহ সূচক ৮ পয়েন্ট কমে ১,১৬৩ পয়েন্টে নেমেছে। লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৩৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের তুলনায় ১৪১ কোটি টাকা কম।
চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই ৬৪ পয়েন্ট কমে গেছে। বাজারে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৯৩টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৯টির দর বেড়েছে, ১২৫টির কমেছে, আর ২৯টির অপরিবর্তিত ছিল। লেনদেনের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা আগের দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম।
শেয়ারবাজারের টানা খারাপ অবস্থা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের তীব্র হতাশ করে তুলেছে।