Logo
Logo
×

অর্থনীতি

অবিলম্বে পাটকলগুলো চালু করা জরুরি

Icon

আহমেদ খিজির

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ এএম

অবিলম্বে পাটকলগুলো চালু করা জরুরি

বাংলাদেশকে একসময় সোনালি আঁশের দেশ বলা হতো। পৃথিবীব্যাপী সবচেয়ে বেশি ও উন্নতমানের পাট উৎপাদিত হতো আমাদের নিচু ভূমিগুলোতে। এই বদ্বীপে পাটের বদৌলতে অর্থ উপার্জিত হতো স্বর্ণের মতো। অথচ, সেই সোনালি দিন কোথায় হারিয়ে গেছে। একসময় বিশ্বের তিন-চতুর্থাংশের বেশি পাট উৎপাদন করা বাংলাদেশ এখন ভারতের চেয়ে কম উৎপাদন করে। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতায় পাট যখন গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য হয়ে উঠেছে, পাটের নানাবিধ গবেষণায় যখন তা বহুবিধ ব্যবহারে আরো বেশি আর্থিকভাবে লাভবান হয়ে উঠেছে, তখন দুনিয়ার সেরা পাট উৎপাদনের প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ পিছিয়ে গেছে। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সব পাটকল। 

বলাই বাহুল্য, এর পেছনে আছে ভারতীয় ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশের উচ্চমানের পাটকে ধংস করে বিশ্ববাজারে আধিপত্য করার জন্য ভারতীয়রা এদেশের পাটশিল্পকে ধংস করেছে। সেই মোতাবেক কাজ করেছে এদেশের শাসকেরাও। ভারতীয় তাঁবেদার, ক্ষমতালিপ্সু শাসকেরা এদেশের অর্থনীতি আর বহু মানুষের জীবিকা ধংস করেছে। 

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মূল উৎস সস্তা শ্রম। কম দক্ষতার শ্রমিকেরা হাড়ভাঙ্গা খাটুনি দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা প্রান্ত থেকে রেমিট্যান্স উপার্জন করেন। আরেকটি খাত হচ্ছে গার্মেন্টস খাত। যেখানে মূলত সস্তাশ্রমের কারণে এদেশ থেকে সেলাইয়ের অর্ডার পাওয়া যায়। দুইটির কোনটিই টেকসই অর্থনীতির জন্য ভালো কিছু নয়। 

এদেশের শ্রমিকদের গুণগত মান উন্নত করার কোনো প্রচেষ্টা রাষ্ট্রের নেই। ফলত, রেমিট্যান্স উপার্জন করলেও তাদের আয় অনেক কম আর সে কারণেই জীবনমানও অত্যন্ত নিচু। অন্যদিকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করা শ্রমিকদেরও একই অবস্থা। গার্মেন্টসের লাভের অতি সামান্য অংশ তারা মজুরি হিসেবে পান, যা দিয়ে আসলে মানুষের মতো বেঁচে থাকাই কঠিন। পৃথিবীর ইতিহাসে অনেক দেশই সস্তা শ্রমের উপর ভর করে পুঁজির পরিমাণ বাড়িয়েছে একটা সময়। কিন্তু, সে সময়টা ক্ষণস্থায়ী। পুঁজির পরিমাণ বাড়ার পর শিল্প ও উৎপাদনের উপর জোর দিয়েই অর্থনীতির পরের ধাপে যাওয়া সম্ভব। অথচ বাংলাদেশে যুগের পর যুগ সস্তা শ্রমই যেন একমাত্র উপায়। 

শিল্পের উন্নয়ন কেবল অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল করে না, মানুষের জীবনমানকেও উন্নত করে। এমনকি আশির দশকেও বাংলাদেশ সেদিকেই আগাচ্ছিলো। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খুলনা পাটকলের উদাহরণ দেয়া যাক। 

সরকারি মিলে দৈনিক বেতন ছিলো ৮৪০ টাকা। সাথে কলোনিতে বিনা ভাড়ায় থাকার সুযোগ। মিলের স্কুলেই বাচ্চাদের অন্তত ক্লাস টেন পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষার সুযোগ।  কলোনির বিশাল মাঠ যেখানে শ্রমিকদের ছেলেমেয়েরা খেলতে পারতো। প্রতিবছর শ্রমিকদের ম্যাগাজিন বের করার ব্যবস্থা। প্রতি মিলে হলরুম। যেখানে শ্রমিকদের নাটক, গান ইত্যাদি অনুষ্ঠান হতো। মিলের নিজস্ব হাসপাতাল। সার্বক্ষণিক ডাক্তার সুবিধা ও ঔষধ। এইসব ছিল। 

এসব সুবিধা দিয়েও সরকারি মিলগুলো লাভে চলতো। কিন্তু, ভারত আর বিশ্বব্যাংকের ইশারায় সেসব মিল বন্ধ করে দেয়া হলো। বেসরকারি হাতে মিল দিয়ে সেগুলো ধংস করা হলো। বিপুল পরিমাণ দূর্নীতি করে ক্ষেত্রটাই নষ্ট করে দেয়া হলো। 

বেসরকারি মিলে বেতন নেমে এলো তিন ভাগের এক ভাগে। উপরন্তু কলোনির সুবিধা না থাকায় শ্রমিকদের বাড়ি ভাড়ার বাড়তি বোঝা টানতে হলো। ফলে দক্ষ শ্রমিকরা কাজ ছেড়ে দিলো, অনেকে বেকার হয়ে গেলো। তদুপরি কলোনির যে সুস্থ সংস্কৃতি ছিলো তা অন্ধকারে তলিয়ে গেলো। অভিযোগ আছে, কাজ হারানো নারীরা জীবন বাঁচাতে গ্লানিকর কাজে যুক্ত হতে পর্যন্ত বাধ্য হলো।

প্রায় সবগুলো পাটকলেই একই রকম ঘটনা ঘটেছে। কেবল যে বিপুল আর্থিক ক্ষতি হলো তা না, শ্রমিকদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত জীবন ধংস হলো। নাগরিক দায়িত্ব থেকে পিছু হটলো সরকার। পাটকল আর বস্ত্রকলগুলোর বিপরীতে গার্মেণ্টসের যে সংস্কৃতি তা অতীব কষ্টদায়ক। আধাপেটা খাওয়া, এমনকি প্রোডাকশন লাইনের গতির অজুহাতে শ্রমিকদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া পর্যন্ত যে শিল্পে নিষিদ্ধ। বেতনের কথা তো আগেই বলা হলো। 

বলাই বাহুল্য, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি এদেশ ও মানুষের ভাগ্যকে বদলাতে দিচ্ছে না। কিন্তু, বাংলাদেশের মানুষ আবার নতুন স্বপ্ন দেখছে স্বৈরাচারকে তাড়িয়ে দিয়ে। এই স্বপ্নের জোরে আমরা আবার তীব্র স্বরে দাবি জানাতে পারি এদেশের পাটশিল্পকে জাগিয়ে তোলার।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন