ছবি: কালের কণ্ঠ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধসংলগ্ন ভাঙা মসজিদের গলিতে ২০০৮ সালে ২০ লাখ টাকা পুঁজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন মো. ইমরান হোসেন। বর্তমানে তিনি হাজার কোটি টাকার মালিক।
তার প্রতিষ্ঠান সাদিক অ্যাগ্রোতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদের বড় অঙ্কের বিনিয়োগ রয়েছে। এই সূত্রে বেনজীর আহমেদের গোপালগঞ্জের গরুর খামারটি প্রস্তুত করে দেন ইমরান। অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে আনা বেশ কিছু গরু বেনজীরের খামারেও পাঠান তিনি। সাদিক অ্যাগ্রোতে বেনজীরের নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল।
কালের কণ্ঠের এক প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ইমরান হোসেন দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে চারটি দেশ থেকে গরু আনত। তাঁর সিন্ডিকেট আছে। সেই সিন্ডিকেটে সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারত, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশ থেকে ইমরান বিভিন্ন জাতের গরু দেশে আনতেন। পরে এসব গরু চড়া দামে বিক্রি করতেন তিনি। এসব গরু আনতে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতেন না তিনি। এছাড়া তিনি যেসব জাতের গরু দেশে আমদানি নিষিদ্ধ সেসব গরুও আনেন দেশে।
মিয়ানমার থেকে গরুগুলো বাংলাদেশে প্রবেশের সময় সব ধরনের সহযোগিতা করেন কক্সবাজারের হলুদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস। একদিকে অবৈধ পথে চোরাকারবারির মাধ্যমে দেশে পশু আনছেন ইমরান। তবে সংবাদ সম্মেলন করে অবৈধ পথে পশু আমদানি না করতে নিষেধ করছেন। কোরবানির ঈদের আগেও এমন প্রতারণার আশ্রয় নেন ইমরান।
সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলf হয়, ইমরান সম্প্রতি চোরাই পথে সীমান্ত দিয়ে রাজস্থান থেকে আটটি গরু আনেন । এসব গরুর প্রতিটি ১২ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি।
প্রতিষ্ঠানটির সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার মোহাম্মদ মহিদুল ইসলাম জানান, গরুগুলো রাজস্থান থেকে আনা হয়েছে। সৌন্দর্য এবং বাহ্যিক গঠনের কারণে এসব গরু চড়া দামে বিক্রি করা হয়েছে।
সাদিক অ্যাগ্রোতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মী অবৈধভাবে আনা গরুর বিষয়ে নানান তথ্য দিয়েছেন। তারা জানান, বিদেশ থেকে অনেক গরু আনা হয়। এসব গরু রাখা হয় আমিনবাজার ১৬ নামের এলাকায় সাদিক অ্যাগ্রোর আরেকটি খামারে। পরে সেখান থেকে সুযোগ বুঝে নেওয়া হয় বিভিন্ন খামারে।
তবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, থাইল্যান্ড থেকে কোনো গরু বাংলাদেশে আনার সুযোগ নেই। প্রতিষ্ঠানটির উপপরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল আলম ভূঞা বলেন, ‘আমার জানা মতে এ ধরনের কোনো অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তবে তার কাছে প্রশ্ন করা হয়, সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেন থাইল্যান্ডের আটটি গরু চোরাই পথে এনেছেন। তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ডিএলএসের অনুমোদন ছাড়াই গরুর ব্যবসা করতেন ইমরান। তিনি ২০২১ সালে ১৮টি আমেরিকান ব্রাহামা জাতের গরু বাংলাদেশে এনে তোলপাড় সৃষ্টি করেন। গরুগুলো প্রথমে ঢাকা কাস্টমস আটকের পর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাভারের কেন্দ্রীয় গো প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়। পরে রহস্যজনকভাবে গরুগুলো চলে যায় ইমরানের দখলে।
গত ঈদুল আজহার আগে ব্রাহামা জাতের গরু বিক্রি করে সারা দেশে তোলপাড় সৃষ্টি করেন ইমরান। তবে এসব গরু বিক্রিতে যেমন কোনো অনুমোদন ছিল না, তেমনি দেশে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্রাহামা জাতের পশু পালনেরও কোনো অনুমতি নেই। আইন ও নিয়মের তোয়াক্কা না করেই ইমরান এসব গরুর ব্যবসা করেছেন।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দেশে ব্রাহামা জাতের গরু পালনের কোনো অনুমোদন নেই। এই জাত পালনের কোনো অনুমোদন আমরা কাউকে দিইনি। অবৈধভাবে আনা ব্রাহামা গরুগুলো ছিল প্রজনন অনুপযোগী। ফলে নিয়ম অনুসারে এসব প্রজনন অনুপযোগী গরু খামারিদের সংগঠনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া হয়নি। কিন্তু ইমরান কৌশলে এসব গরু নিজের নামে নিয়ে নিয়েছেন। আবার এসব গরু বাজারেও বিক্রির খবর এসেছে।’
এসব বিষয়ে জানতে সাদিক অ্যাগ্রোর স্বত্বাধিকারী ইমরান হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। তার মোবাইল ও হোয়াটসআপে ফোন করলে তিনি ধরেননি। আবার তাঁর বেড়িবাঁধ অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।