দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে কেমন সময় লাগবে?
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০৮:০৯ পিএম
দেশের অর্থনীতির স্থবিরতা কাটিয়ে উঠার বিষয়টি আওয়ামী সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করছে। আর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে ঠিক কত বছর লাগবে তা এখনও বলার সময় আসেনি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা বলছেন, সরকারের অনেক নীতি নির্ধারকরা স্বীকারই করেন না আমরা অর্থনৈতিকভাবে ভয়াবহ খারাপ অবস্থানে আছি। রাজনীতির স্থিতিশীল এ ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। দেশের অর্থনীতি অবস্থা খারাপ হওয়ার জন্য বিশ্বের দুই যুদ্ধের দোহাই দেওয়া হয়। আমদানি খরচ এবং ডলারের দাম বেশি হওয়া কথাও বলে থাকে।
তারা বাংলা আউটলুককে বলেন, সরকার সংকোচনমূলক নীতি কঠোরভাবে পালন করলে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে। কিন্তু প্রবৃদ্ধি হবে না। প্রবৃদ্ধি হতে গেলে সব ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। যে পরামর্শগুলো দেশের অর্থনীতিবিদ এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল তার ঋণের আওতায় বলে আসছে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাংলাদেশর অর্থনীতির চাইতে খারাপ অবস্থায় কোনো ভাবে যায়নি। অর্থনীতিতে একটা কঠিন ক্রসরোডের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দেশ। আমাদের নীতিনির্ধারকদের অর্থনৈতিক সমস্যাকে চিহ্নিত করতে হবে। দ্রুত সঠিক ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। অনেক দিন ধরে আমাদের দেশের যে স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ছিল। দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীল ছিল এটা অনেক দিন ধরে আর নাই। নীতিনির্ধারকরা সঠিক ব্যবস্থা না নেওয়ার জন্য এখন সেটা আরো ঘনীভূত হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকারের নীতিনির্ধারকরা সেটা স্বীকার করছে না। সম্প্রতি সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলছেন, ইউ আর ইন এ রাইট ট্রাক। ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দৃশ্যমান নয়।
তিনি বলেন, ব্যাপক আকারের দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাবে দেশে টাকা বা বিনিয়োগ আসছে না। অভিযোগ আছে, বিরাট আকারের ডলার এ দেশ থেকে বিদেশে নানা ফরমে চলে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি কমানো যাচ্ছে না। এই অবস্থা আমরা ঠিক কি ভাবে বলবো, এ ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট উত্তরণে ঠিক কতদিন লাগবে?
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়টা সরকার ও আইএমএফসহ তার নীতি কীভাবে বাস্তবায়ন করছে তার ওপর নির্ভর করছে। দেশের ভয়াবহ সমস্যাগুলো স্বীকার করে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া দেশে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো কোনো চান্স নাই। দেশে সুশাসন আনার জন্য সংস্কার সব খাতে করতে হবে। যেমন প্রশাসন, রাজস্ব, ব্যাংকিং,স্টক মার্কেট, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা। সরকারের প্রশাসনে জনগণের জন্য সেবা বাড়াতে হবে। দেশের অর্থ সম্পদ লুটপাট বন্ধ করতে হবে।
অভিযোগ আছে, ব্যাংকগুলো এখনও ডলার পাচার করে যাচ্ছে। আর যদিও পাচার কীভাবে করল এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমার একটাই প্রশ্ন ব্যাংকগুলোর এতো টাকা গেল কোথায়? অনেক ব্যাংককের এখন শুধু দায় দেনা আছে, কিন্তু কোনো সম্পদ নাই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বড় উদ্ভট বিষয় হচ্ছে টাকা থাকলে সব কিছু কিন্তু করা যায়। কিনে ফেলা যায়। দেশে সুশাসন ফিরিয়ে আনতে হবে। আর্থিক নীতিতে সংকোচনমূলক অবস্বান বজায় রাখতে পারলে সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীল ফিরে আসবে।
তিনি বলেন, সরকার বিভিন্ন সময়ে বড় কোম্পানিগুলো ঋণ খেলাপি এবং রাজস্ব খাতে ছাড় দিয়ে যাচ্ছে। এগুলো বন্ধ করতে হবে।