আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের খেলাপি ঋণ ছিল মাত্র ২২ হাজার কোটি টাকা। ১৫ বছরে সেই খেলাপি ঋণ ৭ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা । অর্থাৎ ১৫ বছরে খেলাপি ঋণ প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে । যা বিতরণ করা ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের ১১ শতাংশের বেশি । অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে আর কখনও এত খেলাপি হয়নি। গত ৬ জুন বাংলাদেশ ব্যাংক এই রিপোর্ট প্রকাশ করে। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা । সেটা মোট বিতরণকৃত ঋণের ৯ শতাংশ ।
গত ৬ জুন বাজেট প্রস্তাবে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রাজস্ব খাত থেকে যে-পরিমাণ ভ্যাট আহরণের পরিকল্পনা করছেন, সেই পরিমাণ ঋণ, ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা, খেলাপি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, খেলাপি ঋণ বাড়লে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কিছু হয় না। অর্থমন্ত্রীরও কিছু হয় না । ব্যাংকগুলোর কি কিছু হয়? যা হয় তা হলো দেশের অর্থনীতির ভয়াবহ দুরস্থা। সাধারণ মানুষ ও যারা আমনত রাখেন তাদের বড় সমস্যা হয়ে যায়।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা আউটলুককে বলেন, ব্যাংকিং সেক্টরে এখনও কেন সংস্কার করতে পারল না সরকার ? সংস্কার না করতে পারলে দেশের সংকট আরও ঘনীভূত হবে। ব্যাংকের মার্জার এখনও হলো না। এই রকম অবস্থা চলতে থাকলে সেখান থেকে দেশের অর্থনীতি নিয়ে উঠে আসা কঠিন হবে।
তিনি আরো বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকতে হবে। তা না হলে খেলাপি ঋণ কমবে না। বড় বড় কোম্পানি অবৈধ ঋণ সুবিধা পেতে থাকবে।
কেন খেলাপি ঋণ বাড়ছে ?
বাংলাদেশে দুটি বিষয় কোনো নিয়ম মেনে চলে না। চলে হাতের ইশারায় । প্রথমটি হলো ট্রাফিক সিগন্যাল। সারা দেশে ট্রাফিক পুলিশ হাত দিয়ে সিগন্যাল দেবে। দ্বিতীয়টি হলো, ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকও ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে হাতের ইশারা আর পছন্দমাফিক ব্যক্তি বিবেচনায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বড় ব্যবসায়ী ও ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে একরকম আচরণ করে আর ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য রাখে আরেক রকম ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ ব্যাংক গরু মোটাতাজাকরণ প্রকল্পের মতো প্রতি তিন মাস অন্তর খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে যাচ্ছে। যারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি হচ্ছেন, প্রকৃত অর্থে তারা ব্যাংক থেকে টাকা লুট করছেন। অনেকটা বৈধভাবে লুট হচ্ছে সেই টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন লুটেরাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
আগে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা দিয়ে খেলাপি ঋণ চলতি ঋণে পরিণত করা যেত। এখন মোট ঋণের মাত্র ২ শতাংশ জমা দিলেই ঋণ পুনঃতফশিল (রিশিডিউল) করা যায়। অনেকে বলে থাকেন, বাস্তবে খেলাপি ঋণ ৪ লাখ কোটি টাকার বেশি! এস আলম গ্রুপ , বেক্সিমকো, ওরিয়নের মতো বড় কোম্পানিগুলো বছরের পর বছর ধরে খেলাপি হয়ে আছে। বাংলাদেশের যে আর্থিক সংকট তার মূলে রয়েছে ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা।