১৫% ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদার সুবিধা সৎ করদাতাদের সঙ্গে অপরাধ : সিপিডি
ছবি: সংগৃহীত
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ও গবেষণা প্রধান ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, ‘শুধুমাত্র ১৫% কর প্রদান করে এবং কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই কালো টাকা সাদা করার বিধান যারা নিয়মিত কর দেন তাদেরকে নিরুৎসাহিত করে।’
আজ শুক্রবার (৭ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন। ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘আমরা গত কয়েক বছরে দেখেছি যে এই সুবিধা দেওয়ার মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ খুব বেশি বাড়ে না। বরং, কালো টাকা সাদা করার আইন অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িতদের প্রণোদনা দেয় এবং যারা নিয়মিত কর প্রদান করে তাদের নিরুৎসাহিত করে।’
সিপিডির ফেলো মুস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, ‘করদাতাদের জন্য বৈধ আয়ের উপর ৩০% ট্যাক্স দেওয়া ঠিক নয়। যেখানে অবৈধ উপার্জনের জন্য ১৫% দিতে বলা হয়েছে। একইভাবে, এই সুযোগ দীর্ঘকাল ধরে গোপন অর্থ ধরে রাখা কোম্পানিগুলিকে পাওয়া উচিত নয়। ১৫% করের হারের সাথে অতিরিক্ত ট্যাক্স সহ অবৈধভাবে উপার্জনের জন্য জরিমানা সহ কঠোর আইন হওয়া উচিত।’
উল্লেখ্য যে, আয়ের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন না করার জন্য একটি নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। ধরুন, তারা কর দিয়ে টাকা সাদা করলো। পরে দুর্নীতি দমন কমিশন এ বিষয়ে খোঁজখবর নিল। বর্তমান বাজেটের প্রস্তাবে তা করা যাবে না।
মুস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, প্রস্তাবিত বিধানের অধীনে, কালো টাকাকে ১৫% ট্যাক্স প্রদানের পরে একটি ব্যাঙ্কে জমা করে বা স্টক মার্কেটসহ যে কোনও জায়গায় বিনিয়োগ করে বৈধ করা যেতে পারে, এর উৎস সম্পর্কে কোনও প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা ছাড়াই। এটি বর্তমান আয়কর আইনের বিপরীতে দাঁড়িয়েছে, যেখানে করদাতারা ২৫% ট্যাক্স এবং ১০% জরিমানা প্রদান করে কালো টাকাকে বৈধ করতে পারেন, সরকারি সংস্থাগুলির দ্বারা পরবর্তী তদন্তের ঝুঁকিসহ, অনেককে এই বিকল্পটি ব্যবহার করতে নিরুৎসাহিত করে৷
মুদ্রাস্ফীতি এবং রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অবাস্তব উল্লেখ করে ফাহমিদা খাতুন বলেন,‘মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৭৫% এবং রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৮% খুবই অবাস্তব। মে মাসে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৯% এর উপরে, তাই কোন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াই এটিকে ৭% এর নিচে নিয়ে আসা চ্যালেঞ্জিং হবে। এবং এই বছর রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র ২%। অতিরিক্ত ৬% কোথা থেকে আসবে?’
তিনি বলেন, ‘মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। চলতি ২০২৩-২৪ অথ বছরে, মোট গ্রস বিনিয়োগ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩১%, যা পরে ২৩ দশমিক ৫% এ দাঁড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ২৭.৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ পাব? এই বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।’
চলতি অথ বছরে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০% এবং এই অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ৯% নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বেসরকারি খাতে ঋণের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হলে সরকারও ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া বাড়িয়েছে। সুতরাং, ব্যাংকগুলি কি প্রয়োজনে ব্যক্তি এবং ব্যবসায়িকদের ঋণ দিতে সক্ষম হবে?— সিপিডি গবেষণা প্রধান প্রশ্ন রাখেন।
প্রসঙ্গত: মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দিকে নজর রেখে গতকাল (৬ জুন) সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ দশমিক ৯৭ লাখ কোটি টাকার প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট উন্মোচন করেন। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজেট এবং ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে তাজউদ্দীন আহমদের দেওয়া ৭৮৬ কোটি টাকার প্রথম বাজেট থেকে অনেক অনেক বেশি। এর আগে গত মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেটের এ আকারে সম্মতি দেন। এটি দেশের ৫৪তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ছয় মেয়াদে ২৫তম বাজেট। বিভিন্ন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শাসনামলে এই বাজেট ২১তম। বাজেটের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘দেশের অর্থনীতিকে আগের দৃঢ় অবস্থায় পরিণত করার লক্ষ্যে একটি সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার’।
সাধারণত, একটি নতুন বাজেটের আকার চলতি বছরের বাজেটের তুলনায় ১০% থেকে ১২% বৃদ্ধি পায়, তবে এবার তা ৪% কম বাড়বে। এটা অর্থনীতির জন্য ভালো। এবার বাজেট সংকোচনমূলক হয়েছে , তাহলে ৬ দশমিক ৭৫% কম জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হলো কেন?