বাজেট ঘাটতি আড়াই লাখ কোটি টাকা
ব্যাংক থেকে নেয়া হবে অর্ধেক
সব ঠিক থাকলে অর্থমন্ত্রী আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন। ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব আকারে উত্থাপন করবেন আওয়ামী লীগ সরকারের নতুন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
বাজেটের আকার আগের চেয়ে বেশি বাড়ানো হয়নি। মূলত অর্থ সংকটই এর কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।
চলমান বাজেটের চেয়ে ৪ শতাংশের একটু বেশি হচ্ছে আগামী বাজেট। সচরাচর বাজেটের প্রবৃদ্ধি ১৩-১৪ শতাংশ হয়ে থাকে। অর্থনীতির ৭ শতাংশ বিকাশ আর ১০ শতাংশের কাছাকাছি মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নেয়া হলে স্থির মূল্যে বাজেটের আকার ১২ শতাংশের বেশি সংকুচিত হচ্ছে।
এবার প্রথম দিকে বাজেটের আকার আট লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকার করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু দুর্বল অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে এত বড় বাজেট বাস্তবায়নে যে অর্থের প্রয়োজন তা সংকুলান করা দুরূহ হয়ে পড়বে। তাই রাশ টেনে দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, বাজেট বক্তৃতা তৈরির দায়িত্বে ছিলেন অর্থ বিভাগের দুইজন অতিরিক্ত সচিব। অর্থমন্ত্রী বিভিন্ন সময় এই বক্তৃতায় পরামর্শ হিসেবে সংযোজন-বিযোজন করেছেন। বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে ‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকার’।
জানা গেছে, বরাবরের মতো এবারো বাজেটের প্রথমাংশে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের বর্ণনা তুলে ধরা হবে। থাকবে মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথাও। এগুলোর জন্য দায়ী করা হবে কোভিড-পরবর্তী ‘রাশিয়া-ইউক্রেন’ যুদ্ধকে। বলার চেষ্টা করা হবে, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভ বাড়বে এবং কমবে মূল্যস্ফীতি। তবে বাজেট বক্তৃতায় ব্যাংকিং খাতে অব্যবস্থা ও শেয়ারবাজারের ধসের বিষয়ে কিছুই থাকছে না।
বিশাল ঘাটতি
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাতে ঘাটতি থাকছে দুই লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এই বিশাল পরিমাণ ঘাটতি পূরণে কয়েকটি খাতকে উৎস হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্যাংকিং খাত। এই খাত থেকে মোটা দাগে এক লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে। আর বিদেশ থেকে এক লাখ ২০ হাজার কোটি টাকার সহায়তা পাওয়া যাবে বলে ধরে হয়েছে। এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকার প্রকল্প ঋণও রয়েছে।
পাশাপাশি ব্যাংকবহির্ভূত খাত হিসেবে বিবেচিত সঞ্চপত্র থেকে নেয়া হবে ১৬ হাজার কোটি টাকা। সরকারি চাকুরেদের ‘জিপিএফ’ থেকে নেয়া হবে আরো ৫ হাজার কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরে ঋণের আসল পরিশোধে ব্যয় করা হবে ২৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
রাজস্ব
সরকার এই বাজেট বাস্তবায়নের জন্য রাজস্ব আয় কিভাবে করবে?
নতুন অর্থবছরে মোট রাজস্বপ্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যা ছিল ৫ লাখ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৮ শতাংশ। নতুন রাজস্বপ্রাপ্তির মধ্যে বরাবরের মতো এবারো বেশির ভাগ আয় করার দায়িত্ব থাকবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের টার্গেট দেয়া হয়েছে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। নন-এনবিআর থেকে আসবে আরো ১৫ হাজার কোটি টাকা। আর কর ব্যতীত প্রাপ্তির টার্গেট থাকছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি
আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরে তা কমিয়ে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। কিন্তু বিশ্বব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে বড়জোর ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। প্রায় কাছাকাছি প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
এডিপি
নতুন অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ১৮ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে এডিপির আকার করা হয়েছে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মূল বাজেট সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। গত মাসে তা কমিয়ে নির্ধারণ ধরা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটের আকার খাটো করা হয়েছে মূল বাজেট থেকে ৬ দশমিক ২৩ শতাংশ। টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৪৭ হাজার ৩৬৭ কোটি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৩) মাত্র ২৬ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়িত হয়েছে। বাজেট বাস্তবায়নের এ হার আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ শতাংশ কম। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের একই সময়ে বাজেট বাস্তবায়নের হার ছিল ২৭ শতাংশ।
অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরে মোট সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বিপরীতে প্রথম ছয় মাসে মোট ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ৯৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর ২০২৩) ৮৪ হাজার কোটি টাকা (বাস্তবায়ন হার ১১%) এবং দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৩) ১ লাখ ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে (বাস্তবায়ন হার ১৫%)।