বিদেশি ঋণ পরিশোধের সক্ষমতায় আশঙ্কাজনক পতন
বাংলাদেশের রিজার্ভের পরিমাণ বৈদেশিক ঋণের অনুপাতে অনেক নিচে নেমেছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট রিজার্ভ ছিল বৈদেশিক ঋণের ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ। ২০২৩ সাল শেষে তা নেমে গেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশে। ফলে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা গত কয়েক বছরে আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, ২০১৮ সাল শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ ছিল মোট ৫৭ দশমিক ০৭ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে তা বেড়ে হয় প্রায় ৬৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে তা আরও বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৭৩ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালে ৯১ দশমিক ০১ বিলিয়ন এবং ২০২২ সালে হয় ৯৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সাল শেষে মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়ায় ১০০ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে ২০১৮ সাল শেষে গ্রস রিজার্ভ ছিল ৩২.০২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৯ সাল শেষে তা সামান্য বেড়ে হয় ৩২.৬৯ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালের ডিসেম্বর শেষে রিজার্ভ অনেক বেড়ে যায়। পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার। পরের বছর থেকে দ্রুত কমেছে রিজার্ভ। এর মধ্যে ২০২২ সালের ডিসেম্বর শেষে গ্রস রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা বিপিএম-৬ অনুযায়ী) ২১ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন ডলার।
প্রতিবেদনে এর ভিত্তিতে গত ছয় বছরের বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভের অনুপাত দেখানো হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০১৮ সাল শেষে রিজার্ভ ও বৈদেশিক ঋণের অনুপাত ছিল ৫৬.১ শতাংশ। অর্থাৎ ওই সময় বিদ্যমান রিজার্ভ দিয়ে বৈদেশিক ঋণের ৫৬ শতাংশের বেশি শোধ করা যেত। পরের বছর তা কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৫১.৯ শতাংশ। ২০২০ সালে বৈদেশিক ঋণ দ্রুত বাড়লেও রিজার্ভ তার চেয়েও অধিক হারে বেড়েছে। ওই বছরে ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণের অনুপাতে রিজার্ভ দাঁড়ায় ৫৯.১ শতাংশ।
পরের তিন বছর ধরে এ অনুপাত কমছে। ২০২১ সালে রিজার্ভ কিছুটা বাড়লেও বৈদেশিক ঋণ তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি বেড়েছে। এতে ওই বছর ডিসেম্বর শেষে বৈদেশিক ঋণ ও রিজার্ভের অনুপাত কমে দাঁড়ায় ৫০.৭ শতাংশ। ২০২২ সালে রিজার্ভ আরও কমায় এ অনুপাত কমে দাঁড়ায় ৩৫ শতাংশ। আর গত বছর শেষে রিজার্ভ এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে ছিল। এতে বৈদেশিক ঋণের অনুপাতে রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ২১.৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত ডিসেম্বরে রিজার্ভ দিয়ে বৈদেশিক ঋণের মাত্র ২১.৭ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব ছিল।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত পাঁচ বছরে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণ বেড়েছে ৩৫.১৪ বিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারি খাতে বেড়েছে ৮.৪২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সাল শেষে সরকারি খাতে বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ৪৪ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার, যা ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ৭৯ দশমিক ৬৯ বিলিয়ন ডলার। আর ২০১৮ সাল শেষে বেসরকারি খাতের বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১২ দশমিক ৫২ বিলিয়ন, যা ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার।
গত পাঁচ বছরে বিদেশি ঋণ সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে রেকর্ড ১৭ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পায়। পরিমাণের পাশাপাশি মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) অনুপাতেও বিদেশি ঋণ কয়েক বছর ধরে দ্রুত বাড়ছে।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮ সাল শেষে জিডিপির অনুপাতে ১৭.১ শতাংশ ছিল বিদেশি ঋণ। ২০১৯ সালে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.২ শতাংশ। ২০২০ সালে ১৯.১ শতাংশ, ২০২১ সাল শেষে ২০.৮ শতাংশ, ২০২২ সাল শেষে ২২.৬ এবং ২০২৩ সাল শেষে দাঁড়ায় ২৩.৬ শতাংশ।