Logo
Logo
×

অর্থনীতি

বাংলাদেশের ক্রিপ্টো ট্রেডাররা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেন?

Icon

ফয়সাল মাহমুদ

প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ০৪:৪৫ এএম

বাংলাদেশের ক্রিপ্টো ট্রেডাররা সরকারের নিষেধাজ্ঞা মানছে না কেন?

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার একটি অ্যাপার্টমেন্টে পিতলের ঝাড়বাতির আলোয় ডুবে মেশিনের ক্রমাগত শব্দের সঙ্গে স্পন্দিত হতে থাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিংয়ের গোপন হৃদস্পন্দন। শীতকালে তাদের চলাচলে এবং অতিরিক্ত তাপে অ্যাপার্টমেন্টের কামরাটিকে ডিজিটাল চুলার মতো উষ্ণ করে তুলে। ৩০ পেরোনো এক যুবক হলেন সিফাত (ছদ্মনাম), যিনি এই গোপন জগতে ওঠা-বসা করছেন। তার আঙ্গুলগুলি ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি (মাইনিং) ও ট্রেডিংয়ের (ব্যবসা) জন্য কীবোর্ডের ওপর নাচছে।

সিফাতের দিনগুলো অনেকটা ডিজিটাল দাবা খেলা। তিনি ক্রিপ্টোর সবচেয়ে লাভজনক একক ইউনিট খোঁজেন। তার কম্পিউটারের স্ক্রিন চার্ট এবং গ্রাফে জ্বলজ্বল করে। এই লাইনে কয়েক বছর লেগে থাকার অভিজ্ঞতা সিফাতের কাজে দিয়েছে। অনলাইন ফোরামে কোনটা ছলচাতুরি, আর কোনটা সুযোগ সেসব ইশারা ইঙ্গিত তার কাছে এখন পরিষ্কার। বেশিরভাগ দিনই ডিজিটাল দুনিয়ায়  বুদ্ধিদীপ্ত কলাকৌশলে তিনি লাভমান হচ্ছেন। কিন্তু তার এ সাফল্যের ওপর এক কালো ছায়া পড়ছে।

বাংলাদেশের রাজধানীতে তার ১৪৫০ বর্গফুটের ওই অ্যাপার্টমেন্টে থাকা অদৃশ্য সেই সৌভাগ্যবান হাওয়া কী তবে আইন প্রয়োগকারীরা ধরে ফেলবে, তার ডিজিটাল সাম্রাজ্য কী ভেঙে পড়বে।

ডিজিটাল মুদ্রার ব্যাপারে যখন তিনি সরকারের উপেক্ষার ব্যাখ্যা করেন, তার কণ্ঠে হতাশা ফুটে ওঠে। তিনি স্বগোক্তি করেন, এটাই ভবিষ্যৎ, কিন্তু তারা [সরকার] তা বোঝে না। তার কথাগুলো অ্যাপার্টমেন্টের শান্ত হাওয়ায় অনুরণিত হয়।

সিফাত এবং তার সহকর্মী ক্রিপ্টো-যোদ্ধারা এক সম্মিলিত আবেগে আবদ্ধ। যে আবেগকে বৈপ্লবিক বিশ্বাস বলা যায় এবং তা আবার প্রকাশ্যে বলাও যায় না। তারা অর্থ ব্যবস্থার প্রথাগত শৃঙ্খল থেকে মুক্ত এক বিশ্বের স্বপ্ন দেখেন, যেখানে স্বাধীনতা এবং সম্পদ কোনো নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রিত পণ্য নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত।

সিফাত খুব আবেগ নিযে বলেন, এটা শুধু লাভের বিষয় নয়। এটি গাণিতিক নিশ্চয়তার ওপর নির্মিত ভবিষ্যতের বিষয়, যেখানে বিকেন্দ্রীকরণের কঠোর প্রতিশ্রুতির কাছে দুর্নীতি ও ঘাটতি বা অভাব ম্লান হয়ে যায়। এই ক্রমাগত আওয়াজ (হামিং রিগগুলি) কেবল মেশিনের নয়, এটি এমন এক ভবিষ্যতের জয়গান যেখানে প্রত্যেকে প্রকৃত অর্থে ধনী হতে পারে।

এক বৈপ্লবিক ভাবনার জন্ম

মার্কিন পণ্ডিত ল্যাংডন উইনার গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন সমস্ত প্রযুক্তির রাজনৈতিক একটা প্রভাব আছে। ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে সত্য। কারণ এর ব্লকচেইন প্রযুক্তির অন্তর্নিহিত রাজনীতিকে ইচ্ছাকৃতভাবে অবিশ্বাসকে আলিঙ্গন বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়, অথবা ‘বিশ্বাসহীনতা’ শব্দটিকেই গর্বের সঙ্গে তুলে ধরে ক্রিপ্টো। 

এটি কীভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য নিচের দৃশ্যটি কল্পনা করুন। বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা দিয়েছে, আগামী নির্বাচন অনলাইনে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘোষণা সেসব বাংলাদেশিদের হতাশ করে যারা সুষ্ঠুভাবে ভোট দেওয়া ও গণনার ব্যাপারে সরকারকে বিশ্বাস করে না। কারণ অনেক স্বাধীন পর্যবেক্ষকই বাংলাদেশের গত তিনটি নির্বাচনকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ বলে মনে করেন।  তবে এর একটি সমাধান হতে পারে মানুষজনকে তাদের নিজের কম্পিউটারে ভোট গণনার সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে। সরকারি সংস্থার উপর নির্ভর না করে যদি প্রত্যেকের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থাটি সুসংগতভাবে রাখা যায়, তাহলে ভোটের হিসাব রাখার জন্য মানুষ ওই ‘বণ্টনকৃত তালিকা’র উপর আস্থা রাখতে পারবে।

সিফাতের মতো ঢাকার আরেক ক্রিপ্টো মাইনার হাসিব (ছদ্মনাম) বলেন, ‘একটি বিশাল, ডিজিটাল রেকর্ড বই কল্পনা করুন যা কোনো একক কর্তৃপক্ষ বা এমনকি পারস্পরিক বিশ্বাসের উপর নির্ভর না করে একাধিক কম্পিউটারে তথ্য সঠিক এবং হালনাগাদ রাখে। এই বৈপ্লবিক প্রযুক্তিটিকেই ব্লকচেইন বলা হয়। 

২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো নামে পরিচিত রহস্যময় এক ব্যক্তি ব্লকচেইন এবং এর উপর নির্মিত বিটকয়েন নামে একটি নতুন ডিজিটাল মুদ্রা চালু করেন। বিটকয়েনের মূল চ্যালেঞ্জ ছিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছাড়া কীভাবে নতুন কয়েন তৈরি ও বিতরণ করা যায় এবং কীভাবে ব্যবহারকারীদের একই মুদ্রা দুবার খরচ থেকে বিরত রাখা যায়।

নাকামোতো কম্পিউটারের জটিল ও শক্তিক্ষয়ী এক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নতুন কয়েন তৈরি করে এর সমাধান দেন। এই প্রক্রিয়া ‘মাইনিং’ নামে পরিচিত এবং এই প্রক্রিয়াটিই মূলত পাবলিক রেকর্ডে লেনদেনের পরবর্তী ব্যাচে (একটি ‘ব্লক’) কাকে যুক্ত করবে তা নির্ধারণ করে।

বিটকয়েন দ্রুত বৈচিত্র্যময় একদল লোককে আকৃষ্ট করেছিল, যাদের মধ্যে অনেকেই ২০১৪ সালে হঠাৎই উল্লেখযোগ্য  পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে ওঠেন। কারণ তিন বছরের ব্যবধানে ওই বছর কয়েনের মূল্য মাত্র ২২ মার্কিন ডলার থেকে প্রায় ৪৭ হাজার মার্কিন ডলারে পৌঁছে যায়। মজার বিষয় হলো, প্রথম দিকের বিটকয়েন গ্রহিতাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ উদারপন্থী ছিল যারা বিটকয়েনকে তাদের মূল্যবোধের সঙ্গে মিশ্রিত একটি প্রযুক্তি হিসেবে দেখতো।

হাসিব বুঝিয়ে বলেন, প্রথমে এটি রাজনীতির জন্য এসেছিল, কিন্তু পরে লাভে আটকে গেছে। ‘বিশ্বাসহীনতা' এবং ‘সমন্বিত কর্মক্ষেত্র’ হওয়ায় এটিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ মুক্ত একটি আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপায় হিসেবে দেখা হয়েছিল, যা ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে বড় বড় ব্যাংকগুলোর দেউলিয়ার সময় বেশি দরকারি হয়ে পড়েছিল।

ব্রক পিয়ার্স হলেন একজন আমেরিকান উদ্যোক্তা, যিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি জগতে নিজের কাজের জন্য পরিচিত। সম্ভবত ক্রিপ্টো-স্বাধীনতাবাদের জন্য তিনিই সবচেয়ে ভালো উদাহরণ।  ২০০৯ সাল থেকে তিনি বিটকয়েন মাইনিং শুরু করেন এবং উল্লেখযোগ্য আর্থিক সাফল্য লাভ করেন। ক্রিপ্টোকারেন্সিতে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ২০১৮ সালের ফোর্বসের তালিকায় নবম হন তিনি। যদিও তার এই অর্জন আর্থিক এবং যৌন অসদাচরণের অভিযোগ ছাপিয়ে গেছে।

বর্তমানে পিয়ার্স পুয়ের্তোপিয়া নামক একটি প্রকল্পে জড়িত, যার লক্ষ্য দ্বীপরাষ্ট্র পুয়ের্তো রিকোতে একটি ক্রিপ্টো-স্বাধীনতাবাদী সম্প্রদায় গড়ে তোলা। প্রকল্পটি দ্বীপের অনুকূল আবহাওয়া এবং হারিকেন মারিয়ার পর থেকে দেওয়া কর প্রণোদনা সুবিধা কাজে লাগাচ্ছে।

আসক্তি চালিত এবং আদর্শিক কারণ

যদি ক্রিপ্টোর জগতে পিয়ার্সের মতো হঠাৎ পয়সাওয়ালা জমির মালিক হন। তবে সিফাত বা হাসিবের মতো অল্প সময়ের মাইনাররা হলেন এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহকারী কৃষক।

বিশ্বজুড়ে প্রতিটি জায়গায় ক্রিপ্টো নিষিদ্ধ। তাই মাইনার এবং ট্রেডার্সদের গোপন নেটওয়ার্ক প্রচলিত নিয়ম মানে না। তারা তাদের মাইনিংয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় করে, ডিজিটাল হুমকি থেকে রক্ষায় পাহারা দেয় এবং তাদের অর্জনও অনিশ্চিত। এমনকি কখনও কখনও বিপর্যয়কর। এরা ক্রিপ্টোতে কোনো এলিট নয় যাদের ধন-সম্পদ অঢেল। তারা সবে ভাসমান অবস্থায় আছে। 

প্রথমদিকে হাসিব ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ে দ্রুত নগদ অর্থের দেখা পেয়েছিলেন। কিন্তু একসময় এর গভীর কিছুতে তিনি আটকে যান। তিনি বিকেন্দ্রীভূত বিশ্বে মুক্তি খুঁজে পান, যা সরকারি মুদ্রার দুষ্ট চরিত্রের সম্পূর্ণ বিপরীত। তার জন্য, ক্রিপ্টো শুধু একটি মুদ্রা ছিল না, এটি সরকার-নিয়ন্ত্রিত সংকীর্ণ ব্যবস্থার বিরুদ্ধে একটি বিদ্রোহ ছিল।

তিনি এই আধুনিক দুর্দশায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের স্মরণাপন্ন হন। নিক্সন সরকারি মুদ্রা যুগের সূচনা করেছিলেন। হাসিব বলেন, এই কাগজ-ভিত্তিক ব্যবস্থা, যার কোনো দৃশ্যত উপস্থিতি নেই তা নিছক সংখ্যা এবং কালি যা মূল্য সরবরাহ ও চাহিদা দ্বারা নির্ধারিত, এটার অন্তর্নিহিত কোনো মূল্য নেই। 

সরকার বেশি টাকা ছাপে আর আমাদের কষ্টার্জিত অর্থের অবমূল্যায়ন হয়। ঢাকার অপর ক্রিপ্টোপ্রেমি সিফাত একে লুকানো মুদ্রাস্ফীতি কর বলেন যাকে ক্রয় ক্ষমতার একটি নীরব চুরি বলে অভিহিত করেন। সিফাত বলেন, ক্রিপ্টোতে সমীকরণটি উল্টে যায়। হাওয়া থেকে নতুন মুদ্রা আসে না। তারা কম্পিউটারের করা কঠোর অনুশীলনের ঘামের ফসল। অনেকটা ডিজিটাল পৃথিবীর খনি থেকে সোনা আহরণ।

এটাই সিফাত এবং তার সহযোগীদের ক্রিপ্টোর আবেদন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে তারা কেবল মুদ্রা মাইনিং করছে না। তারা একটি ভিন্ন জগত গড়ে তুলছেন, যেখানে মূল্য অর্জিত হয়, ছাপানো হয় না।

সিফাত বলেন, এটি ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিশ্চিত পথ। কিন্তু এটা সত্য বিশ্বাসীদের জন্য আর্থিক জুচ্চুরিকে ছাপিয়ে যাওয়া আদর্শিক পুরস্কার।

আইন বিরোধী

তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী বাংলাদেশি অর্থনীতিবিদ। তিনি অবশ্য সিফাতের আশাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাদা মনোভাব ব্যক্ত করে ক্রিপ্টোকারেন্সির ধারণাটিকে কার্যকর মুদ্রা হিসেবে চ্যালেঞ্জ জানান।

তিনি বলেন, যেকোন ভালো মুদ্রার অপরিহার্য গুণাবলী হলো স্থায়িত্ব, বহনযোগ্যতা, বিভাজ্যতা, অভিন্নতা, সীমিত সরবরাহ এবং ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। সমস্যা হলো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে এসবের অধিকাংশই সম্ভব না। 

তানভীরের মতে, দামের পরিবর্তন, মূল্যের ভাণ্ডার বা হিসাবের একক হিসাবে ক্রিপ্টোকে অযোগ্য করে তুলে। তিনি এর সমালোচনা করে এটি অপরাধীদের কাছে আকর্ষণীয় এবং আইন মেনে চলা ব্যবসা এবং ব্যক্তিদের জন্য অনুপযুক্ত উল্লেখ করেন। 

সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি স্বীকৃতির অভাব ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যাপকভিত্তিক গ্রহণের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।

২০১৪ সাল থেকে বাংলাদেশ বিটকয়েন এবং ইথেরিয়ামের মতো ভার্চুয়াল মুদ্রার প্রতি সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি রাখছে। বিদ্যমান আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি এবং মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের সম্ভাব্য ঝুঁকি উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা দুটি সতর্কতামূলক বিজ্ঞপ্তিতে এই ধরনের লেনদেন অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যাংকগুলিকে যে কোনো ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়।

২০১৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্রয়কে অবৈধ অনলাইন পেমেন্ট হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করে এবং ১২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের ব্যবস্থার কথা বলে, যা ওই অবস্থানকে আরও কঠোর করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৪৭, সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ অনুযায়ী ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনকে অপরাধ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হতে পারে। এসব জায়গা থেকে খুব শিগগিরই ক্রিপ্টোকারেন্সি বৈধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই।’

এদিকে, প্রতিবেশী ভারতও একই পথ অনুসরণ করেছে। ২০১৮ সালে দেশটির রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) ভার্চুয়াল মুদ্রার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যদিও ওই নিষেধাজ্ঞাটি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে এবং ২০২০ সালের মার্চে এই নিয়ে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায় ঘোষণা করে। 

আদালত বলেছে, নিষেধাজ্ঞার জন্য আরবিআইয়ের যুক্তিগুলি যথেষ্ঠ নয়। আদালত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে দেশটিতে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহারের সম্ভাব্য পথকে প্রশস্ত করে।

ব্যাংকার এবং ফিনটেক ম্যাগাজিনের (দেশের প্রথম এই ধরনের আর্থিক প্রযুক্তি ভিত্তিক ম্যাগাজিন) সম্পাদক মিজানুর রহমানের মতে, বাংলাদেশে বিদ্যমান আইনগুলি ক্রিপ্টোকারেন্সির সম্ভাব্য ব্যবহারে প্রধান অন্তরায়। 

তার মতে, ‘মুদ্রা’ ও ‘মাইনিং’ ঘিরে আইনি ভাষা বাংলাদেশে ক্রিপ্টোর জন্য প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, এই টার্মগুলো এমন ধারণার জন্ম দেয় যা সরকার-নিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড যেমন টাকা ছাপানোকে নাই করে দেয় এবং অযাচিতভাবে এসবে ঢুকে পড়া বুঝায়। যা ব্যক্তির জন্য আইনত নিষিদ্ধ। 

মিজানুর রহমান বলেন, ‘যদিও বাংলাদেশ সরকার পেমেন্ট সিস্টেমের ক্ষেত্রে ব্লকচেইনে আপত্তি নেই বলে মনে হচ্ছে। তবুও সরকারের ‘ভালো ব্লকচেইন, খারাপ ক্রিপ্টো’ দৃষ্টিভঙ্গি আমাকে হতাশ করে। ’

আইনগত ধোঁয়াশা থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে ক্রিপ্টো মাইনিং এবং ট্রেডিং বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি মনে ক্রিপ্টোকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং এর ট্রেডিং ও মাইনিং নিয়ন্ত্রণের এটাই সেরা সময়।’

ক্রিপ্টো আসক্ত হাসিব আইনি স্বচ্ছতার বিষয়টি উড়িয়ে দেন। তিনি আর্থিক স্বাধীনতার জন্য প্রযুক্তির সম্ভাব্যতাকে আইন উপেক্ষার চেয়ে বেশি মূল্যবান মনে করেন। এমনকি এর অর্থ যদি প্রচলিত ব্যবস্থার বাইরে থেকে করাও হয় তারপরও।

তিনি বলেন, ‘আমি আবেগের বাইরে গিয়ে এটা করি। এটি যে স্বাধীনতা দেয় তা কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনাহীন। আপনি এমন কিছু মাইনিং এবং ট্রেডিং করছেন যার প্রকৃতই মূল্য আছে। এটা ছাপানো দুষ্ট মুদ্রার মতো নয়, যা বুদবুদ তৈরি করে শেষপর্যন্ত ফেটে যায়।’

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন