অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ বলেছেন, নতুন বিনিয়োগ আমরা সাধুবাদ জানায়। ভারতের ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানি দেশে অনেক বিনিয়োগ করেছে আরো করতে চায়। বকেয়া বিলের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আদানির বিদ্যুৎ বিলের পাওনা থাকলে তো আমরা পাওয়া দিয়ে দিব। তবে এ নিয়ে নিদিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি ।
ভারতীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ আদানির পক্ষ থেকে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ বুধবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক শেষ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন মন্ত্রী। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন আদানি গ্রুপের পূর্ণকালীন পরিচালক প্রণব বিনোদ আদানি। অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার এ বৈঠক উপস্থিত ছিলেন ।
বৈঠক শেষে প্রণব বিনোদ আদানি সাংবাদিকদের বলেন , বাংলাদেশের বিনিয়োগের অনেক সম্ভবনা আছে। আমরা বাংলাদেশে নতুন করে বিনিয়োগ করবো। তবে ভারতের আদানি গ্রুপের গড্ডা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে সরবরাহ করা পূর্বের বকেয়া পাওনার বিষয়ে তিনি কিছু বলতে চাইনি তিনি।
বৈঠক সূত্র জানা যায়, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে নতুন করে আরো ১৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বিক্রি করার প্রস্তাব করেছে কয়েক মাস আগেই । এ নিয়ে কয়েক বার দুই পক্ষের বৈঠক হয়েছে। তবে বাংলাদেশে ভয়াবহ ডলার সংকটের কারণে এ প্রস্তাব বেশি দূর আগিয়ে যায়নি। এছাড়া তারা বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইনে বিনিয়োগ করতে চায়। আর তারা অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ আগ্রহ প্রকাশ করেছে ।
জানা গেছে, মার্কিন ডলারে আদানির বিদ্যুতের পাওয়া দেওয়া শর্ত থাকার কারণে এ পাওনা দিতে পারছে না বাংলাদেশ। কারণ সরকারি ব্যাংকগুলো হাতে পর্যাপ্ত ডলার নাই। গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভারত থেকে বিদ্যুৎ কেনা বাবদ বাংলাদেশের বকেয়া রয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আদানির বকেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। তবে এটিও পুরো বকেয়া নয়, কোম্পানিটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ আরো বেশি পরিমাণ অর্থ পায়।
সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানায়, আদানি পাওয়ারের সেপ্টেম্বরের আংশিক এবং অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ মাসের পুরো বিল বকেয়া রয়েছে। এ সময়ে কোম্পানিটির মোট বকেয়ার পরিমাণ তিন হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা। এর সাথে মার্চ এপ্রিল ও মে মাসের হিসাব যোগ করা হলে বকেয়ার পরিমাণ আরো বাড়বে।
উল্লেখ্য, দেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে ভারতের আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করে বিপিডিবি। চুক্তি অনুসারে কেন্দ্রটি থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কিনবে বাংলাদেশ। নিয়ম অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের সিনক্রোনাইজিং থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক উৎপাদনে (সিওডি) যাওয়ার আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের জ্বালানি ব্যয় বিপিডিবিকে দিতে হচ্ছে। তবে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরুর আগেই এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আমদানি করা কয়লার যে দাম ধরা হয়েছিল, তা নিয়ে আপত্তি তোলে বিপিডিবি। অনেকে আদানির সাথে করা বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাংলাদেশের স্বার্থে অনুকূলে নয় বলে মন্তব্য করেছে।
এদিকে, বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় থেকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব বাজেটের আওতায় অর্থ বিভাগ থেকে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডকে (বিপিডিবি) বিদ্যুৎ ক্রয়-বিক্রয়ের ঘাটতি বাবদ ভর্তুকির অর্থ ছাড়ের জন্য গত এপ্রিলে অর্থ বিভাগে চিঠি দেওয়া হয়।