Logo
Logo
×

অর্থনীতি

শ্রীলঙ্কা অল্প সময়ে পারলেও বাংলাদেশ কেন পারছে না?

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ০৪:৫৮ এএম

শ্রীলঙ্কা অল্প সময়ে পারলেও বাংলাদেশ কেন পারছে না?

অর্থনৈতিক সংকটে দেউলিয়া ঘোষিত হয়ে উন্নয়নশীল বিশ্বে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। তবে অবিশ্বাস্যভাবে ১৫ মাস পরে সেই উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছেই অনেকটা রোল মডেল হয়ে উঠেছে দেশটি। শ্রীলঙ্কায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর জন্য নাগরিকদের হাহাকার কমে গিয়ে জীবনযাত্রা ক্রমশই স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও সাহস সঞ্চার করছে। 

অন্যদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বরে দ্বীপদেশটিতে মূল্যস্ফীতি যখন প্রায় ৭০ শতাংশে উঠে দাঁড়ায়, সে সময় বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশ। ১০ মাস পর এখনো তা ৯ শতাংশে ঘরেই রয়েছে । বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)  এপ্রিল মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে , আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ ।

শ্রীলঙ্কার পূর্ব অর্থনৈতিক ফিরে আসার ক্ষেত্র দেশটির শক্তির জায়গা হচ্ছে, ওদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রক্রিয়াটা কাজ করে, ফাংশন করে। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে।

দ্বিতীয়ত, ওখানে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটাও চলছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা ও ট্রান্সপারেন্সির জায়গাও কাজ করছে।  ফলে, বাংলাদেশের মতোই বড় বড় মেগা প্রকল্প বা ঋণ নিয়ে কাজ করা অথবা দুর্নীতির মতো কারণে তারা বিপদে পড়লেও সেখান হতে বের হয়ে আসা সম্ভব হয়েছে।

শ্রীলঙ্কার সংকট মোকাবিলায় সরকারের আন্তরিকতা প্রত্যেক দেশের উদাহরণ হয়ে থাকবে। দেশটির বিশ্লেষকেরা বলছেন, শ্রীলঙ্কা সরকার সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনেক খাতে কর বাড়ানো এবং অনেক খাতে ভর্তুকি কমানোর মতো অজনপ্রিয় পদক্ষেপও নিয়েছে, যা জাতীয়তাবাদী চেতনায় বলীয়ান হওয়া জনগণ মেনে নিয়েছে। কিন্তু সবার আগে শ্রীলঙ্কার সরকারকে দেখাতে হয়েছে যে, তার সত্যিকারের সদিচ্ছা আছে মন্দা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের। আর এ বিষয়টিই রাষ্ট্রপরিচালনায় নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের মানুষের জন্য বড় এক শিক্ষা হতে পারে।

শ্রীলঙ্কার রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়া শুরু করেছে। গত জুলাই পর্যন্ত দেশটির প্রায় ৫ লাখ নাগরিক কাজের জন্য বিদেশে গেছেন, যাদের অনেকেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্যারামেডিক্যাল ও আইটি প্রফেশনাল। আর বিদেশে আগে থেকেই কর্মরত নাগরিকেরা দেশে আরো বেশি হারে অর্থ পাঠিয়েছেন অর্থনৈতিক সংকট থেকে মাতৃভূমিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করতে। ফলে রেমিট্যান্স বেড়েছে প্রায় ৭৬ শতাংশ। বৈদেশিক মুদ্রার জোগান বেড়ে যাওয়ায় গত আগস্টে দেশটিতে কমেছে খাদ্য ও খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি। সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার এখন ৬.৩ শতাংশ, যা অর্থনৈতিক সংকটে শুরুতে প্রায় ৭০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল।

যে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি থেকে এত অল্প সময়ে ঘুরে দাঁড়ানোর উদাহরণ তৈরি করল শ্রীলঙ্কা, তার পেছনের কারণগুলো সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মইনুল ইসলাম বাংলা আউটলুককে বলেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক নীতি বাংলাদেশের চেয়ে অনেক ভালো। তাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর অত্যন্ত ভালো করছেন, ভালো নীতি নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'দুর্নীতি,  সরকারি অর্থ লুণ্ঠন কিংবা ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দমনের মতো কোনো চেষ্টা আমাদের নেই। এ কারণে মূল্যস্ফীতির হার আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছি না। পুঁজি পাচার ঠেকাতে পারছি না। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পতনও ঠেকাতে পারছি না।'

তার ভাষ্য, এখন যে মানুষগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন, নীতি গ্রহণের ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত আছেন, তাদের দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সুবাতাস আসবে না। অর্থনীতি বোঝেন এমন মানুষদেরই এসব দায়িত্বে আনতে হবে। তিনি আরো বলেন , বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সিদ্বান্ত গ্রহণে কোনো স্থির করতে পারছে না। এখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুসারে একদিনে ডলারের দাম টাকার বিপরীতে ৭ টাকা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ।

এদিকে রাজস্ব আয়ে বড় ঘাটতি নিয়ে অর্থবছর শেষ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। চলতি অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা করা হলেও প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা কম আদায় হতে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করের আওতা বাড়াতে না পারা, অযৌক্তিক লক্ষ্যমাত্রা ও পাচার হওয়া অর্থ আদায়ে ব্যর্থতায় এই ঘাটতি।

অন্যদিকে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর শ্রীলঙ্কার নতুন রাষ্ট্রপতি রনিল বিক্রমাসিংহে উচ্চাভিলাসী মেগা প্রকল্পগুলো স্থগিত করে দেন। সরকারের খরচ কমানো হয়েছে, করনীতিতে পরিবর্তন করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগ গতি পেয়েছে। এর সাথে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আইএমএফের ৪ বৎসরে ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেল-আউট ঋণ।

মাত্র ১৮ মাসে শ্রীলঙ্কার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটি কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়ার একটি মুখরোচক উদাহরণ-যেখানে দেশটির রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটনাটাও আরেকটি পশ্চিমা মোড়লের সতর্কবাণী-তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য। বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত  শ্রীলঙ্কা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ থেকে কারেন্সি সোয়াপ পদ্ধতির আওতায় যে ২০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল, তা ইতোমধ্যে বাংলাদেশকে ফেরত দিয়েছে। 

অন্যান্য দেশ ও দাতা সংস্থার কাছ থেকে নেওয়া ঋণও একটু একটু করে পরিশোধ করে দিচ্ছে তারা। অন্যদিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়ান মার্কিন ডলারের নিচে চলে গেছে। দেশের রপ্তানি আয় প্রায় পাঁচ মাস থেকে কমে যাচ্ছে । কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো পাঁচ মাস ধরে রপ্তানি বেড়ে যাওয়ার মিথ্যা ডাটা দিয়ে যাচ্ছে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন