Logo
Logo
×

অর্থনীতি

চা রপ্তানিকারক বাংলাদেশ এখন আমদানিকারক

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ মে ২০২৪, ১১:৫০ পিএম

চা রপ্তানিকারক বাংলাদেশ এখন আমদানিকারক

ছবি: সংগৃহীত

চা উৎপাদনে বাংলাদেশ গত ১৮৪ বছরের ইতিহাসে ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়েছে। গত বছর বাংলাদেশ ১০ কোটি কেজি চা উৎপাদনের মাইলফলক স্পর্শ করে। চলতি বছরও উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ভালো। যদিও এসব রেকর্ড উৎপাদন আর মাইলফলক স্পর্শের কেতাবি হিসাব থেকে বাস্তবে ফিরলে একটু ধাক্কাই খেতে হবে। কারণ রেকর্ড উৎপাদনেও যে বাড়ছে না রপ্তানির পরিমাণ। বরং চা চাহিদার চাকা যেন উল্টো দিকে চলছে। তাইতো রপ্তানির পরিমাণ কমছে। উল্টো বাড়ছে আমদানির পরিমাণ। 

চা উৎপাদন, রপ্তানি ও আমদানি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন তথ্যসূত্র বলছে, বাংলাদেশ একসময় চা রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থানীয় ছিল। আর বাংলাদেশের জন্য চা ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি পণ্য।  পাটের পরেই যার স্থান ছিল। এখন অবশ্যই সেই চিত্র নেই। সময়ের পরিক্রমায় রপ্তানিকারক সেই বাংলাদেশই এখন চায়ের বড় আমদানিকারকে পরিণত হয়েছে। 

এদিকে, চা বোর্ড থেকে পাওয়া তথ্য ঘেটে দেখা যায়,  বাংলাদেশের মোট চায়ের চাহিদা ৯ কোটি ২০ থেকে ৩০ লাখ কেজি। উৎপাদন বেশি হওয়ায় গত বছর ১০ লাখ ৪০ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। যদিও ২০২০ সালে ২১ লাখ ৭ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়েছিল। এরপর টানা দুই বছর চায়ের রপ্তানি কমেছে। ২১ সালে মাত্র ৬ লাখ ৮ হাজার কেজি এবং ২০২২ সালে ৭ লাখ ৮ হাজার কেজি চা রপ্তানি হয়। পরের বছরর রপ্তানি কিছুটা বাড়ে। যদিও তিন বছর আগের হিসাব ধরলেই দেখা যায়, তিন বছর আগের তুলনাই রপ্তানি নেমেছে অর্ধেকে। 

অন্যদিকে, চা আমদানির হিসাব দেখলে চোখে কপালে ওঠার মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে।  ২০২০ সালে দেশে ৬ লাখ ৮০ হাজার কেজি চা আমদানি করা হয়। ২০২১ সালে তা বেড়ে ৭ লাখ ৪০ হাজার কেজি এবং ২০২২ সালে ১০ লাখ কেজি এবং সবশেষ ২০২৩ সালে তা বেড়ে প্রায় ১২ লাখ কেজিকে দাঁড়ায়। চলতি বছর আমদানির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা। অর্থাৎ রপ্তানির গ্রাফে ওঠা-নামা থাকলেও, আমদানিতে তেমনটা নেই। বরং আমদানির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। 

চা ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে প্রতিনিয়ত চায়ের চাহিদা বাড়ছে। তাই দেশের বাড়তি চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানির জন্য খুব বেশি চা অবশিষ্ট থাকছে না। আবার যে ধরনের চা আমদানি হচ্ছে তার বেশির ভাগ ভিন্ন পদের। সেগুলো বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে না।

জানা যায়, ২০১৫ সালে দেশে ৬ কোটি ৭০ লাখ কেজি চা ভোগ হয়। ২০২০ সালে এসে তা দাঁড়ায় ৮ কোটি ৬৬ লাখ কেজি এবং গত বছর ছিল সাড়ে ৯ কোটি কেজি।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) হিসাবে, বিশ্বে ৪৭টি দেশে চা উৎপাদিত হয়। লন্ডনভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটির সবশেষ হিসাব অনুযায়ী, চা উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে অষ্টম। এক দশক আগে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল দশম। বিশ্বব্যাপী চা উৎপাদনের ৩ শতাংশ বাংলাদেশে হয়।

ওয়ার্ল্ডস্টপ এক্সপোর্টস অনুযায়ী, বিশ্ব রপ্তানিতে বাংলাদেশ বর্তমানে ৫৭তম। উৎপাদনে কাছাকাছি থাকলেও শ্রীলঙ্কা, কেনিয়া চা রপ্তানিতে বাংলাদেশের তুলনায় বিশ্ব বাজারে শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করেছে। এখন চীন, জাপান, পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ ২৩টি দেশে বাংলাদেশের চা যাচ্ছে। অর্থাৎ, বৈশ্বিক অবস্থানেও উৎপাদনের তুলনায় রপ্তানিতে অনেক পিছিয়ে বাংলাদেশ।

১৮৪০ সালে প্রথম বাংলাদেশে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয় । চট্টগ্রামে কুণ্ডদের বাগান (বর্তমান চট্টগ্রাম ক্লাব সংলগ্ন এলাকা) নামে সেই চা বাগান সফলতার মুখ দেখেনি। এরপর ১৮৫৪ সালে সিলেটের মালনিছড়ায় প্রথম বাণিজ্যিক চা বাগান প্রতিষ্ঠা করা হয়। তিন বছর পর সেই বাগান থেকে প্রথম বাণিজ্যিক ভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়।

চা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, নব্বইয়ের দশকে চা রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। দেশীয় চায়ের গুণগত মান ভালো হওয়ায় বিদেশি ক্রেতাদের কাছে চায়ের চাহিদা ছিল বেশি। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন