বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা শোচনীয়। দীর্ঘদিন ধরে জোর করে ডলারের বিপরীতে টাকার মান ধরে রাখলেও, এখন তা হু হু করে বাড়ছে। ডলারের তীব্র সংকট। রিজার্ভের অবস্থা তলানিতে। বিদেশী বিনিয়োগ যেমন কমছে তেমনি হচ্ছে না স্থানীয় উৎপাদন। এমনকি সরকারি হিসেবেও বলা হচ্ছে যে, শিল্প ও উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি চার বছরে অর্ধেকে নেমেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তথ্য দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২০২০-২১ সালে করোনার বছরে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ২৯ শতাংশ হলেও পরের প্রতি বছর কমেছে এবং এই বছরের প্রাক্কলিত প্রবৃদ্ধি মাত্র ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ।
অবশ্য ব্যাবসায়ীরা এই প্রাক্কলনকেও অনেক বেশি মনে করছেন। তারা বলছেন, সরকারি এই হিসাব আরও অনেক কিছুর মতো বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে। গত এক বছরে নতুন কোন গ্যাসের সংযোগ দেয়া হয়নি, ডলার সংকটে আমদানি বন্ধ, বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশের অন্যতম সমস্যা, তথ্য দেখানোর বেলায় সুবিধামতো দেখানো। সম্প্রতি দেশের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি এবং গড় আয় দেখানোর বেলায় এই লুকোচুরি করা হয়েছে। জনসংখ্যা অন্তত দুই কোটি কমিয়ে দেখানো হয়েছে এবং ডলারের দাম ১১০ টাকা হারে দেখানো হয়েছে। যদিও বাজারে সরকারিভাবেই এই হার অনেক বেশি।
আওয়ামী আমলের ঋণ করে ঘি খাওয়ার যে উন্নয়ন সেই বেলুন ফুটা হয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা অনেকদিন ধরেই সুশাসনের অভাবে এই উন্নয়নকে প্যারাডক্স আখ্যা দিচ্ছিলেন। বাস্তবে, দেখা গেলো তা ভেঙ্গে পড়লো। ইউক্রেন যুদ্ধ বা করোনা হয়তো একে একটু ত্বরান্বিত করলো কিন্তু তা ভেঙ্গে পড়তোই।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখন যেই পরিমাণ টাকা তাঁর চেয়ে বেশি পরিমান খেলাপি। বলাই বাহল্য, সরকারি দলের প্রভাবশালীরা এই টাকা দেশের বাইরে পাচার করে দিয়েছে। আর সরকার তা পোষাতে সমানে টাকা ছাপাচ্ছে। ফলাফল হচ্ছে মূল্যস্ফীতি আর এর জের সবচেয়ে বেশি টানছে গরীব মানুষ।
ক্যাপাসিটি চার্জের নামে বিদ্যুৎ খাতে বিপুল খরচ হচ্ছে। বড় বড় কাঠামোগত উন্নয়ন, যেগুলোর বেশীরভাগই অদরকারি, সেগুলো স্থবির হয়ে আছে ডলারের অভাবে। নির্বাচনের পর থেকে চীন সরকার টাকা ছাড় করছে না। তারা চাইছে ইউয়ানে লেনদেন করতে। বিশ্বব্যাপী রাজনীতির খেলায় বাংলাদেশকে আরো কোণঠাসা করতে।
অনির্বাচিত সরকার ভারতের কাছে আগে থেকেই বাঁধা। এখন চীনের কাছেও বাঁধা পড়ছে। মার্কিনীরাও নানা হুমকিতে নিজেদের স্বার্থ আদায় করবে। রুশরাও রুপপুরের মতো প্ল্যান্ট গছিয়ে দিয়ে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার করছে।
অথচ, দেশের অর্থনীতি একদম স্থবির হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের ঋণ করে আর চুরি করে যে উন্নয়নের মচ্ছব লেগেছিলো তা এখন এক দেনার পাহাড়, অভিশাপ হয়ে উঠেছে।
এর জের বাংলাদেশকে কতো বছর, কতো যুগ টানতে হয় কে জানে!