রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান : ফরাসউদ্দিন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৭ মে ২০২৪, ০৩:৫২ এএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেছেন, রাজনীতিবিদেরা অর্থনীতিবিদদের গৃহভৃত্য না হলেও হুকুমের আজ্ঞাবহ হিসেবে দেখতে চান। বড় বড় খেলাপিরা সাত, আট, নয়বার করে ঋণ পুনঃ তফসিল করতে পারছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আগামীর করণীয়’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বইটি তিনি লিখেছেন।
ফরাসউদ্দিন বলেন, অর্থনীতিবিদেরা জ্ঞানী, গণমাধ্যমে বা টেলিভিশনে তারা কথা বলেন। রাষ্ট্র পরিচালনাকারীদের উচিত আমন্ত্রণ জানিয়ে তাদের কথা শোনা, সেটা করা গেলে খুব ভালো হতো। তিনি বলেন, আমি বড় অর্থনীতিবিদ নই। তবু মনে করি, প্রচলিত পথে দারিদ্র্য বিমোচনের পরিবর্তে শিল্পায়নের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
ফরাসউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কী করণীয়, কী বর্জনীয়-এসব বলার জন্যই এই বই লেখা হয়েছে। তিনি বলেন, জিডিপির আকার যদি ৬০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৬০ বিলিয়ন ডলার হয়ে থাকে, মাথাপিছু আয় যদি বেড়ে থাকে, তাহলে রাজস্ব আয় কেন বাড়বে না; আমার কাছে এটা বড় সমস্যা বলে মনে হয়।
বাজেট ঘাটতি নিয়ে তিনি বলেন, অনেক উৎসের মতো বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করা হয়, কিন্তু টাকার যখন অবমূল্যায়ন হয়, তখন দায় বেড়ে যায়। ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ নেয়া শাঁখের করাতের মতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া হলে মূল্যস্ফীতি হবে, ব্যাংক থেকে দেয়া হলে ব্যক্তি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পেশাজীবীদের সবাই ঠিকমতো কর দেন বলে মনে করেন না ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেন, কৃষি খাত এখন বাণিজ্যভিত্তিক হচ্ছে। দুই বছরের নোটিশ দিয়ে তাদেরও করের আওতায় আনা যেতে পারে। এ ছাড়া সমীক্ষা করা ছাড়া সরকারি কোনো খাতে বিনিয়োগ করা উচিত নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর।
মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, আড়াই থেকে তিন বছর ধরে সুদের হার ৯-৬ এবং বহুপক্ষীয় মুদ্রা বিনিময় হার থাকার কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে অনেক সময় লাগবে। এ ধরনের বিনিময় হার বিশ্বের কোথাও নেই বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ঋণখেলাপি ও মুদ্রা পাচারকারীরা একই সূত্রে গাঁথা। এসব সমস্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরতে পারলে তিনি সেগুলো দূর করার পদক্ষেপ নেবেন বলে মনে করেন ফরাসউদ্দিন।
এদিকে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির উপাচার্য শামস্ রহমান। বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেন অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।