আবার রিজার্ভ চুরির ‘তথ্য’, বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে ‘ভুয়া’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০২:০৫ এএম
ফের বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরি হয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় গণমাধ্যম। ভারতীয় গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ভারতীয় হ্যাকাররা কয়েক বিলিয়ন ডলার হ্যাক করেছে। এক সপ্তাহ আগে ওই চুরির ঘটনা সম্পর্কে জানেন এমন তিনজন কর্মকর্তা তাদের বিষয়টি জানিয়েছেন। হাতিয়ে নেওয়া ডলারের সংখ্যাটি এক অঙ্কের ঘরের হতে পারে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক বলছেন, এটি একবারেই ভুয়া খবর। তিনি বাংলা আউটলুককে বলেন, এটি একবারেই ভুয়া খবর। এখন ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে তিন স্তর বিশিষ্ট নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি চালু আছে এবং লেনদেনের বিষয়ে নিয়মিত যোগাযোগ আছে। পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে একই বক্তব্য দিয়ে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়।
আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত নর্থইস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ এবং ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা এই হ্যাকের বিষয়ে অবগত। তারা এই চাঞ্চল্যকর চুরির বিষয়ে গোপনে তদন্ত করছে। দুই দেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো হ্যাকারদের সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার চেষ্টা করছে। হ্যাকাররা তৃতীয় কোনো দেশ থেকে হ্যাক করতে পারে, বিষয়টি মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে, হঠাৎ করেই বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা এবং ১৩ মে বাংলাদেশের নেট রিজার্ভ কমিয়ে ১৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন দেখানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। এই হ্যাকের ঘটনা এমন সময় ঘটলো যখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বকালের সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে চরম অসুবিধাসহ নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারির পর বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের রিজার্ভের টাকা চুরি হলো। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিলিপাইন থেকে অজ্ঞাত হ্যাকাররা ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাক করে নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্ত তা শনাক্ত হয়নি। এই অর্থের একটি অংশ চলে যায় শ্রীলঙ্কায় আর বাকিটা যায় ফিলিপাইনের। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার হলেও বাকিটা আর ফেরত পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আমেরিকার আদালতে একটি মামলা চলমান আছে।
এতে আরও বলা হয়, এমন একটি সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে হ্যাকিংয়ের ঘটনা ঘটেছে যখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে রয়েছে। কিছু কর্মকর্তা সন্দেহ করছেন, রিজার্ভ চুরির সংখ্যাটি ‘একক’ হতে পারে। এটি আমদানি বিল নিষ্পত্তিতে ‘চরম অসুবিধা’ সৃষ্টি করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকে গত ১৩ মে নেট রিজার্ভ ছিলো ১৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। গত দুই সপ্তাহ ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল সদর দফতরে বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
নর্থইস্ট নিউজের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আট বছরে এই দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ব্যাংকের সিস্টেমে হ্যাকাররা ঢুকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি করেছে।
এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ছিলেন বর্তমানে মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করা মেজবাউল হক।
তখন বিষয়টি গোপন রেখেছিল তৎকালীন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও কর্মকর্তারা। তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অবহিত করতেও ব্যর্থ হন। তিনি মনে করছিলেন, ওটা প্রযুক্তিগত ত্রুটি ছিল। তিনি বুঝতে পারেননি যে, ডলার হ্যাক করার অনেক আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কম্পিউটার সিস্টেমে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করানো হয়েছিল।
এবারের রিজার্ভ চুরির বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার হোয়াটসঅ্যাপে বারবার কল করলেও তিনি ধরেননি।