Logo
Logo
×

অর্থনীতি

ডেমু ট্রেনে গচ্চা ৬৫৪ কোটি!

Icon

ঢাকা অফিস

প্রকাশ: ১৩ মে ২০২৪, ১১:১৮ পিএম

ডেমু ট্রেনে গচ্চা ৬৫৪ কোটি!

ভুল পরিকল্পনা আর অব্যবস্থাপনায় ডুবেছে “ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট” ডেমু ট্রেন। বিনিয়োগকৃত ৬৫৪ কোটি টাকার মধ্যে আয় হয়েছে মাত্র ২২ কেটি টাকা। আর ২০ বছর জীবনী শক্তির ইঞ্জিন এবং ৩০ থেকে ৩৫ বছর জীবনী শক্তির ওয়াগন নিষ্প্রাণ হয়ে পড়েছে মাত্র ৫ থেকে ৬ বছরের মধ্যে। ২০১৩ সালে ৫৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে চীন থেকে কেনা ২০ সেট মিটারগেজ ডেমু ট্রেনই পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের লোকো সেডের ওয়ার্কশপের বাগানে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পরিত্যক্ত এসব ট্রেনের কামড়ায় এখন স্টেশনের ওয়ার্কশপ এবং নির্মাণ শ্রমিকেরা অস্থায়ীভাবে থাকছেন। আবার কোনো কোনো ওয়াগনের ভেতরে বাসা বেঁধেছে পাখি, পোকা মাকড়। এছাড়া নষ্ট হয়ে গেছে বেশ কয়েক সেট ডেমুর ওয়াগন এবং ইঞ্জিনও।

২০১১ সালের ৪ আগস্ট তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন এবং চীনের রাষ্ট্রদূত ঝ্যাং জি য়ান ৫৮ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২০ সেট মিটারগেজ ডেমু ট্রেন আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী ১৯ ধরনের প্রধান যন্ত্রাংশ, ৩৭ ধরনের সাধারণ যন্ত্রাংশ, ১৩৭ ধরনের রক্ষণাবেক্ষণ যন্ত্রাংশ, ৩৭ ধরনের মেরামতরে কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের দেওয়ার কথা ওই চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু এসবের কিছুই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।

চুক্তি অনুযায়ী তিন কোচ বিশিষ্ট ডেমুর ধারণক্ষমতা ৩০০ জন এবং ৮০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিসীমার এই ডেমু চীনের হোবেই প্রদেশের সিএনআর থাঙ্কসান কোম্পানির কাছ থেকে কেনে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে বাংলাদেশে প্রথম ডেমু ট্রেন যাত্রা শুরু করে। শুরুতে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে ব্যবহারের জন্য কেনা হয়েছিল ট্রেনগুলো। ঢাকা বিভাগে দুটি, চট্টগ্রাম বিভাগে তিনটি ও লালমনিরহাট বিভাগে চলত একটি।

সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ এবং চুক্তি অনুযায়ী যন্তাপাতি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান না দেওয়ায় চালুর কিছু দিনের মধ্যেই নষ্ট হতে শুরু করে ট্রেনগুলো। চালুর পর থেকে বন্ধ হওয়া পর্যন্ত ডেমু টেন মাত্র ৯৯ লাখ ৮৯ হাজার যাত্রী পরিবহন করে। আর এতে আয় হয়েছে মাত্র ২৩ কোটি টাকার মতো। বিপরীতে ডেমুর রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও জ্বালানিতে খাতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩১ কোটি টাকার মতো।

ঢাকা লোকো সেডের ওয়ার্কশপ প্রকৌশলীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলা আউটলুককে বলেন, চালুর ৫ বছরের মধ্যেই ইঞ্জিনে অস্বাভাবিক শব্দ, অতিরিক্ত গরম, অতিরিক্ত কালো ধোঁয়াসহ নানান ত্রুটি দেখা দেয় প্রতিটি ডেমুর ইঞ্জিনে। আর ধারণক্ষমতাও কমতে থাকে। একে একে বিকল হয়ে পড়তে শুরু করে। মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই সবগুলো ডেমুই বিকল হয়ে যায়। এখন এগুলো সবই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।  

অথচ কেনার সময় রেলওয়ের যুক্তি ছিল, দুদিকেই ইঞ্জিন থাকায় আলাদা ইঞ্জিনের দরকার হবে না। ওয়াগন হালকা হওয়ায় জ্বালানি খরচও হবে কম। নিয়ন্ত্রণও সহজ হবে। থাকবে না তেমন কোনো ঝাঁকুনিও। আর স্বল্প দূরত্বে পরিচালনা করে প্রচুর যাত্রী পরিবহন করা যাবে। কিন্তু বেশ কয়েক সেট ডেমু দূরপাল্লায় পরিচালনা করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এ কারণেও দ্রুত ডেমু ট্রেনগুলো বিকল হয়ে পড়ে। 

লোকো সেডের ওয়ার্কশপের আরেক প্রকৌশলী বাংলা আউটলুককে জানান, ডেমু কিনতে ৪৮ লাখ টাকা ব্যয় করে আটজন কর্মকর্তাকে চীনে পাঠানো হয়েছিল। প্রায় ১ কোটি টাকা খরচ করে ছয়জন প্রকৌশলীকে চীনের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান চার মাসের প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। প্রশিক্ষণ থেকে ফেরার পরপরই দুজনকে বদলি করা হয় অন্য প্রকল্পে। আর দুজন কোনো সময়ই দেননি। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ডেমু ট্রেন কেনা ছিল ভুল সিদ্ধান্ত। প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে ভালো মন্দ এবং ভবিষ্যৎ ভাবা উচিত ছিল। পুরোনো ডেমু ট্রেন নিয়ে এই মুহূর্তে রেল মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। নতুন আর একটি প্রকল্পের কথা ভাবা হচ্ছে। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন