Logo
Logo
×

অর্থনীতি

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ

সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার চেষ্টা

Icon

প্রকাশ: ০৭ মে ২০২৪, ০১:৪৬ এএম

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ

ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ খেলাপিদের মাফ নাই। যারা এই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তাদের সেগুলো ফেরত দিতে হবে। এছাড়া ব্যাংকটি কোনো ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারে যাবে না। আগামী এক বছরে ব্যাংকটিকে অনেক দূর এগিয়ে নিতে আমরা কাজ করবো। আজ সোমবার  পুনর্গঠিত ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালক ও চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান। ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ইচ্ছা অনুসারে বেসরকারি ব্যাংকটি এখন শিকদার গ্রুপ থেকে এস আলম গ্রুপের হাতে চলে গেছে। সাড়ে ৪ মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো পুনর্গঠন করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় মূলধনি এই ব্যাংকটি। আর নতুন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণও ব্যাংকিং খাতের গত কয়েক বছরে আধিপত্য বিস্তারকারী বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের হাতে। অধিকাংশ পরিচালকই চট্টগ্রামের কিংবা চট্টগ্রামের এই শিল্প গ্রুপটির সঙ্গে জড়িত। 

গ্রুপটির নিজস্ব একাধিক ব্যক্তিকে পরিচালক হিসেবে বসানো হয়েছে বোর্ডে। এস আলম গ্রুপের আগের সাতটি ব্যাংকের যুক্ত ন্যাশনাল ব্যাংক যুক্ত হলো । সাতটা ব্যাংক হলো- ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড, গ্লোবাল ইসলামি ব্যাংক এবং সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক লিমিটেড।

এমন কি ন্যাশনাল ব্যাংকের নতুন পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা কার কত ব্যাংকের শেয়ার হোল্ড করে এবং কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করে সে বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তারা কোনো কিছু কথা বলতে চাননি। সংবাদ সম্মেলনে কাগজের ব্যাগের মধ্যে ডাইরি , মানিব্যাগের সাথে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। বেশিরভাগ এস আলম গ্রুপের দেওয়া পরিচালক পর্ষদের এসব উপহার এবং টাকা না নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। আর সবাই দ্রুত সংবাদ সম্মেলন ত্যাগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকটির উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার মোয়াজ্জেম হোসেন, প্রতিনিধি পরিচালক লে.জে মো. সফিকুর রহমান (অব), প্রতিনিধি পরিচালক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক রিয়াজুল করিম, ব্যবসায়ী ও প্রতিনিধি পরিচালক এরশাদ মাহমুদ, প্রতিনিধি পরিচালক অ্যাডভোকেট এহসানুল করিম, প্রতিনিধি পরিচালক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম তোফাজ্জল হক। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ড. রত্না দত্ত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হদা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে গত রবিবার বিকেলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকে তৌহিদুল আলম খানকে চিঠি পাঠিয়ে পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠনের কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রতিনিধি ও নীতি বিভাগ (বিআরপিডি)। বিভাগটির পরিচালক মো. হারুন-অর-রশিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ক্ষমতাবলে ৫ মে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করা হয়েছে। পুনর্গঠিত বোর্ডের পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান, ফেনীর ব্যবসায়ী ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শফিকুর রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রিয়াজুল করিম এফসিএমএ, রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা এরশাদ মাহমুদ, চট্টগ্রামের একটি ব্যবসায়ী গ্রুপের আইনজীবী আহসানুল করিম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে এম তফাজ্জল হক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী। আগের পরিষদে পরিচালক মোয়াজ্জেম হোসেন বাদে আর কাউকে নতুন পরিষদে রাখা হয়নি। স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, চট্টগ্রামের পেশাজীবী চার্টার্ড একাউন্টেন্ট ড. রত্না দত্ত এফসিএ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।

এই তিনজনই ব্যাংকিং খাতের গত কয়েক বছরে আধিপত্য বিস্তারকারী বিতর্কিত শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের নিজস্ব লোক। এদের মধ্য ড. রত্না দত্ত গ্রুপটির চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার (সিএফও) এর স্ত্রী। আর এ বি এম জহুরুল হুদা গ্রুপটির একটি ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন।

চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন,  ন্যাশনাল ব্যাংকের মূলধনে শেয়ারহোল্ডারদের মাধ্যমে ১ হাজার কোটি টাকা সরবরাহ করা হবে। এছাড়া পরবর্তীতে আরো ৩ হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন আমানত সংগ্রহ ক্যাম্পেইনের ও প্রকল্পের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে। এতে করে ন্যাশনাল ব্যাংকের চলমান তারল্য সংকট নিরসন হবে আশা করছি। এছাড়া মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশেষত মন্দ ঋণ পুনরুদ্ধারে কাউকেই কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানিয়েছি, অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে আমরা ন্যাশনাল ব্যাংক মার্জ করতে রাজি নই। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের সময় দিয়েছে। আমরা যাতে তারল্য সংকট নিরসন করতে পারি সেই চেষ্টাই করব।

তিনি বলেন, নতুন পরিচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকের সুশাসন নিশ্চিত করতে ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে নিরলস কাজ করে যাবে। বিভিন্ন সূচকে ব্যাংকের হারানো হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতেও কাজ করবে বর্তমান পর্ষদ।

উল্লেখ্য, ১৯৮৩ সালে প্রথম দেশীয় মালিকানায় বেসরকারি ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। ঋণ বিতরণসহ নানা অনিয়ম, বিধি-বিধান ভেঙে ঋণ অনুমোদন, ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় পর্ষদের অনাকঙ্খিত হস্তক্ষেপ করায় গত বছর ২১ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর পাঁচ মাসের মধ্যে আবারও ব্যাংকটির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে। আমানতকারী ও ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষা এবং ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়। আর এই নতুন পর্ষদ গঠনের পরই আজ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের পরিকল্পনার কথা জানায়।

বর্তমান পর্ষদ পুনর্গঠনের আগে পদত্যাগ করা পরিচালকরা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার, পারভীন হক সিকদার, ব্যাংকটির স্বতন্ত্র পরিচালক বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম ও সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম কামাল হোসেন।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন