বিক্ষোভাকারীদের হামলা করতে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশের ক্ষোভ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৬ পিএম
ভারতের ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনে আজ সোমবার হিন্দুত্ববাদীরা আক্রমণ চালিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, পুলিশের উপস্থিতিতেই একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি গেরুয়া কাপড় গলায় দিয়ে এবং গেরুয়া পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশের আগরতলা মিশনে আক্রমণ করছে এবং পুলিশ নীরব ভূমিকায় তা দেখছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, একই রকম ঘটনা চার দিন আগে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনেও ঘটেছে। এটি ১৯৬১ সালের কূটনৈতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত ভিয়েনা কনভেনশনের পরিপন্থী।
এদিকে আজকের হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাংলাদেশ। আজ সোমবার (২ ডিসেম্বর) রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হয়, সোমবার আগরতলার হিন্দু সংগ্রাম সমিতির বিক্ষোভকারীদের দ্বারা বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের প্রাঙ্গণে হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও আক্রমণের জন্য বাংলাদেশ সরকার গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। প্রাপ্ত তথ্য চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করে যে, বিক্ষোভকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশ সহকারী হাইকমিশনের প্রধান ফটক ভেঙে প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। এ সময় স্থানীয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে তারা পতাকার খুঁটি ভাঙচুর করে, বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অবমাননা করে এবং সহকারী হাইকমিশনের অভ্যন্তরের সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দুঃখের বিষয়, হাইকমিশন প্রাঙ্গণ রক্ষার দায়িত্বে থাকা স্থানীয় পুলিশ সদস্যরা শুরু থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা রাখেনি। সহকারী হাইকমিশনের সব সদস্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বাংলাদেশ সরকার আরও জানাতে চায় যে, বাংলাদেশের একটি কূটনৈতিক মিশনের ওপর এই জঘন্য হামলা এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার অসম্মান একটি প্যাটার্নে এসেছে, গত ২৮ নভেম্বর কলকাতায় একই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ হয়েছিল। আগরতলায় কূটনৈতিক মিশনের ওপর এমন হামলা ভিয়েনা কনভেনশন অন ডিপ্লোমেটিক রিলেশন, ১৯৬১ লঙ্ঘন হয়েছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেহেতু কূটনৈতিক মিশনগুলোতে যেকোনো ধরনের অনুপ্রবেশ বা ক্ষতি থেকে রক্ষা করা সেই দেশের সরকারের দায়িত্ব, তাই বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারকে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া এবং ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করার জন্য আহ্বান জানায়। ভারতে বাংলাদেশের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা ও অকূটনীতিক সদস্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং কূটনৈতিক মিশনে যেকোনো সহিংসতা প্রতিরোধ করতে আহ্বান জানায়।
যদিও এ ঘটনার পর ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। তাদের বিবৃতি বলা হয়, আগরতলায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের প্রাঙ্গণ ভাঙার ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। কোনও অবস্থাতেই কূটনৈতিক এবং কনস্যুলার সম্পত্তি লক্ষ্যবস্তু করা উচিত নয়। এমন অবস্থায় নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি/সহকারী হাইকমিশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর থেকে তিনি ভারতেরই রয়েছেন। আর তিনি সেখানে আশ্রয় নেওয়ার পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণায় নামে ভারত। তারা বার বার দাবি করছে বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে।