ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং
আগামী সপ্তাহে রাষ্ট্রীয় সফরে চীন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর এটি তার দ্বিতীয় দ্বিপক্ষীয় সফর। জুনের শেষ ভাগে তিনি ভারত দিয়েই তার বিদেশ মিশন শুরু করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ভৌগোলিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও রাজনৈতিক কারণে নয়াদিল্লি ও বেইজিংয়ের কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ঢাকা। ফলে শেখ হাসিনার দিল্লি সফরে যেমন বেইজিং সজাগ ছিল তেমনিভাবে নয়াদিল্লিও তার বেইজিং সফরের দিকে নজর রাখবে।
বিশেষ করে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে দেশ দুটির সমান আগ্রহ থাকায় কেউ কাউকে আগে যাওয়ার সুযোগ দেবে না। এ অবস্থায় উভয় পক্ষকে সামলে নিজের স্বার্থ আদায়ে ঢাকা কতটা সক্ষমতা দেখায় সেদিকেই এখন নজর ঢাকার কূটনীতিকদের।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে নয়াদিল্লির চেয়ে বেইজিংয়ের ভূমিকা নেহাত কম ছিল না। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক কারণেই ভারতের নামটি বেশি উচ্চারিত হয়। কিন্তু বিগত দেড় দশকে দেশের প্রায় সবগুলো মেগা প্রকল্পের অর্থায়ন করে চীন মূলত সরকারকে একটি শক্ত ভিত্তি দেয়। যার ওপর ভর করে দেশের একটার পর একটা বিতর্কিত নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। এমনকি এসব মেগা প্রকল্পের দোহাই দিয়ে দেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন কিংবা ভোটের প্রয়োজন নেই বলেও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে একটা প্রচারণা ছড়ানো হয়। যা দিয়ে তারা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডাসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাপের কাছে নত না হয়ে কেবল ভারত ও চীনের সমর্থনেই মাঠে নামে আওয়ামী লীগ। ওই নির্বাচনে ডামি প্রার্থী দিয়ে ৩০০ আসনের প্রায় সবগুলো তাদের দখলে নিয়ে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। এরপরই তাকে অভিনন্দন জানাতে এক প্রকার প্রতিযোগিতা দেখা যায় ভারত ও চীনের মধ্যে।
ভারতের নির্বাচনের মোদি পুনরায় সরকার গঠনের পর ১০ দিনের ব্যবধানের দু’দফা নয়াদিল্লি সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সফরে ঢাকা-দিল্লি ১০ সমঝোতা ও চুক্তি সই হয়। যদিও তার মধ্যে বাংলাদেশের জনগণের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত তিস্তা নদীর পানি চুক্তি ও সীমান্ত হত্যা বন্ধের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেই। বিপরীতে দেশটির সঙ্গে রেল যোগাযোগ বিষয়ক সমঝোতা স্মারক সই হয়। এ নিয়ে দেশের রাজনীতিতে তুমুল বিতর্ক চলছে।
এছাড়াও ওই সফরে তিস্তা মহা পরিকল্পনায় ভারতের অর্থায়নের বিষয়টিও এক প্রকার চূড়ান্ত করেন শেখ হাসিনা। যে প্রকল্পে আগে থেকেই চীনের সঙ্গে কথাবার্তা পাকাপাকি হয়ে আছে। এই অবস্থায় চীনের সঙ্গে নতুন করে এ নিয়ে আলোচনা হয় না কি অন্য কোনো বড় ইস্যু সামনে আসে সে বিষয়ে ভারতের নজর থাকবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এ বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক মুন্সি ফয়েজ আহমেদ বলেন, চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। ভারতও সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে তাদের আগ্রহের বিষয়টি সামনে আনছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের দিকে তাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি থাকবে সেটিই স্বাভাবিক। তবে এক্ষেত্রে ‘চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের কূটনীতি’তে ঢাকা কতটুকু সক্ষমতা দেখায় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের সফরের বিশেষ দিকটি হবে বাংলাদেশের জন্য চীনের ৭০০ কোটি ডলারের ঋণের বিষয়টি। এর মধ্যে বাণিজ্য সহায়তার আওতায় ৫০০ কোটি ডলার এবং বাজেট সহায়তার আওতায় ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় বাংলাদেশকে ঋণ দেবে চীন। এর পাশাপাশি ভারতের সঙ্গে যেভাবে টাকা-রুপিতে লেনদেনের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতায় টাকা-ইউয়ানে লেনদেনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ ব্যাপারে দুই দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানা গেছে।