সিলেটে আজহারীর মাহফিল উপলক্ষে মন্দির ঢেকে দেয়ার মিথ্যা দাবি ভাইরাল
ফ্যাক্ট অর ফলস
প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম
সিলেটে মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর ৩দিন ব্যাপী ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে মাহফিলের কাছাকাছি অবস্থিত গোপালটিলা শিব মন্দির কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছে, যাতে করে মাহফিলে আগত মুসল্লিদের মন্দির দেখলে গুনাহ না হয় -এমন একটি দাবি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রামের মত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। তবে আমরা অনুসন্ধান করে দেখেছি দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। বরং সরস্বতী প্রতিমাকে কুয়াশার ক্ষতি থেকে বাঁচানোর জন্য মন্দির কর্তৃপক্ষই পলিথিন টাঙিয়েছেন।
গত ৯, ১০ ও ১১ জানুয়ারি আঞ্জুমানে খেদমতে কোরআন নামের একটি সংগঠনের আয়োজনে সিলেট এমসি কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয় ৩ দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিল। মাহফিলের শেষ দিন (১১ জানুয়ারি) প্রধান আকর্ষণ ছিলেন মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। কলেজ মাঠের এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২০ নং ওয়ার্ডের আম্বরখানা-টিলাগড় সড়কের পাশে অবস্থিত গোপালটিলা সার্বজনীন পূজামণ্ডপ ও শিব মন্দির। ফেসবুক, এক্স (সাবেক টুইটার), ইনস্টাগ্রামের বহুসংখ্যক আইডি থেকে প্রচার করা হয় ওয়াজ মাহফিল উপলক্ষে মন্দিরটির একপাশ ঢেকে দেওয়া হয়েছে যাতে করে ওয়াজে গমনকারীদের মন্দির দেখার কারণে গুনাহ না হয়। এসব পোস্ট কয়েক হাজারবার শেয়ার হয়েছে।
তবে এই দাবিটি যে মিথ্যা তা আমরা প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারি ওয়াজ শেষ হওয়ার ২ দিন পর সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সরেজমিনে মন্দিরটি পরিদর্শন করতে গেলে। আমাদের স্থানীয় প্রতিনিধি দেখতে পান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো ছবিতে মন্দিরের যে অংশ পলিথিন দিয়ে ঢাকা ছিল তা এখনও ঢাকাই রয়েছে।
পরে কথা হয় মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক হিমাদ্রি কর পুরকায়স্থের সাথে। এ ধরনের দাবিকে একদমই উড়িয়ে দেন তিনি। তিনি জানান এই ধরনের প্রচারণা তার চোখেও পড়েছে। পরে তার সাথে মোবাইলে আরও কয়েকবার কথা হয় আমাদের।
“আমি অবাক হয়ে গেছি আমাদের সাথে যোগাযোগ না করে কে বা কারা এ ধরনের নিউজ দিলো। যেকোনো কিছুরই একটা কর্তৃপক্ষ থাকে, তাদের সাথে যোগাযোগ না করে তো অযাচিতভাবে কোন কিছু বলা ঠিক না,” বলছিলেন হিমাদ্রি কর।
পলিথিন টানানো নিয়ে তিনি বলেন, “এটা বাহির থেকে একটা পলিথিন টানিয়ে ভিতর পর্যন্ত নিয়েছেন কারিগর এবং এটা ওয়াজের আরও ৩ দিন আগ থেকেই টানানো হয়েছে। যেহেতু এখন শীতকাল, খুব বেশি কুয়াশা পড়ে তাই কুয়াশার জল যেন ভিতরে না আসে। এটা মূর্তির সেফটির জন্য আমরাই করেছি। যেহেতু মূর্তিগুলো বাহিরে ছিল। এবং অনেকগুলো মূর্তি ছিল, ২০-২৫টা হবে। এটা এখনও আছে এবং সরস্বতী পূজার কারণে আরও কয়েকদিন থাকবে। ওয়াজের সাথে এর কোন সম্পর্ক নাই।”
তিনি আরও বলেন, “ওয়াজ কমিটি আমাকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেছে ওয়াজের কারণে আমাদের কোন ক্ষতি হচ্ছে কিনা। আমি বলেছি আমাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। কেন সমস্যা হবে? এখানে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। ওয়াজ কমিটি সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছে যে ওয়াজ উপলক্ষে যেন মন্দিরের সামনে কোন দোকানপাট না বসানো হয়। এরকম একটা সহযোগিতামূলক মনোভাব উনারা দেখিয়েছেন, সেখানে এসব অযাচিত কথা বলার তো কোন যুক্তি নাই।”