Logo
Logo
×

সারাদেশ

এক নারী শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ ডাকলেন

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১১:৩৭ এএম

এক নারী শব্দদূষণ থেকে রক্ষা পেতে পুলিশ ডাকলেন

পার্শ্ববর্তী নির্মাণস্থলে ইট ভাঙার বিকট শব্দে টানা দুই রাত ঘুমাতে পারেননি রোমেনা আহমেদ। অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে রাতের কাজ বন্ধ রাখতে হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানান। পুলিশ তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য করে ওই ঠিকাদারকে।  

তবে রোমেনা যে দ্রুত সমাধানটি পেয়েছেন, সেটি অন্য সবার ভাগ্যে নাও মিলতে পারে। অনেকে জানেনই না যে, এমন পরিস্থিতিতে পুলিশের সহায়তা চাওয়া সম্ভব।

নগরীতে বাড়ছে শব্দদূষণ

দেশি-বিদেশি বাসিন্দাদের কাছেই এখন রাজধানীর শব্দদূষণ অসহনীয় হয়ে উঠেছে। কানাডিয়ান বিল ম্যাকলেইন, যিনি গত বছর তৃতীয়বারের মতো ঢাকায় আসেন, জানান, ‘এবার রাস্তায় চলাচলের সময় আমাকে ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার করতে হয়েছে।’  

তিনি বলেন, 'ঢাকার রাস্তায় পা রাখামাত্রই মনে হয় গাড়ির হর্নের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছি। মাত্র এক সেকেন্ড দেরি হলেই কান ফাটানো হর্ন বাজতে শুরু করে।’  

এ পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দিন-রাত চলা নির্মাণকাজের খটখট শব্দ—ধাতব বস্তু কাটার আওয়াজ, ইট ভাঙার গুঞ্জন আর জেনারেটরের দমবন্ধ করা শব্দ। এছাড়া রাস্তার ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারাও লাউডস্পিকার ব্যবহার করছেন।  

আইন ও বাস্তবতা

শব্দদূষণ কমাতে ২০১৭ সালে উচ্চ আদালত মোটরযানে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার রাস্তায় এখনো তার বেপরোয়া ব্যবহার দেখা যায়। বেশির ভাগ মানুষই জানেন না বা মানেন না আইনের এই বিধিনিষেধ। ফলস্বরূপ, অফিসে যাওয়ার জন্য রাস্তায় অপেক্ষার সময়ও অনেকের কাছে দুর্ভোগে পরিণত হয়।  

শব্দদূষণের স্বাস্থ্যঝুঁকি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ৬৫ ডেসিবেল (ডিবি) এর ওপরে শব্দকে দূষণ হিসেবে ধরা হয়, ৭৫ ডিবি ক্ষতিকর এবং ১২০ ডিবি সরাসরি যন্ত্রণাদায়ক। ২০১৮ সালে সংস্থাটি ট্র্যাফিক শব্দকে ৫৩ ডিবিতে সীমাবদ্ধ রাখার সুপারিশ করে।  

বাংলাদেশে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা ২০০৬ অনুযায়ী, নীরব এলাকায় দিনের বেলা ৫০ ডিবি ও রাতে ৪০ ডিবি গ্রহণযোগ্য। আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ডিবি ও রাতে ৪৫ ডিবি। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার অধিকাংশ এলাকায় এই মাত্রা বহু আগেই ছাড়িয়ে গেছে।  

বিপজ্জনক মাত্রার শব্দ শোনার পরিণামে শ্রবণশক্তি হ্রাস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ঘুমের ব্যাঘাত এবং দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশেষজ্ঞরা। শব্দদূষণ শহুরে বন্যপ্রাণীকেও বিরূপভাবে প্রভাবিত করে।

নীরব এলাকা ঘোষণার উদ্যোগ ও চ্যালেঞ্জ

গত বছরের ১ অক্টোবর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আশপাশের ৩ কিলোমিটার এলাকাকে ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা হয়। এখানে হর্ন বাজানো নিষিদ্ধ এবং আইন অমান্যকারীদের ৫০০ টাকা জরিমানা করার বিধান আছে। ডিসেম্বর থেকে কঠোরভাবে এটি প্রয়োগের কথা থাকলেও বাস্তবে পুরোপুরি কার্যকর হয়নি।  

এর আগে সচিবালয়, আগারগাঁও ও সংসদ ভবন এলাকাসহ বেশ কিছু জায়গাকে নীরব এলাকা ঘোষণা দেওয়া হলেও তেমন অগ্রগতি দেখা যায়নি। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অ্যাটমোসফেরিক পলিউশন স্টাডিজ (ক্যাপস) পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, জরিপ করা ঢাকার ১০টি স্থানেই শব্দ নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করেছে।  

করণীয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

সরকার ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ঢাকার আরও ১০টি সড়ককে নীরব এলাকা ঘোষণার পরিকল্পনা করেছে। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানিয়েছেন, শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে শিগগিরই নতুন বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে, যা পুলিশকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার সুযোগ দেবে। কেবল জরিমানা বা কারাদণ্ড নয়, জনসচেতনতা বৃদ্ধিতেও জোর দেওয়া হবে।  

তিনি বলেন, 'মানুষের অভ্যাস বদলাতে সময় লাগবে। তবে যথাযথ প্রশিক্ষণ, সচেতনতা এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা হর্ন বাজানো ও অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ শব্দ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমিয়ে আনতে পারব।’  

উপসংহার

ঢাকায় শব্দদূষণ এখন এক বহুমাত্রিক সংকট। আইন ও নির্দেশনা থাকলেও যথাযথ প্রয়োগের অভাব এবং জনসচেতনতার ঘাটতিতে সমস্যা বাড়ছে। সমন্বিত পদক্ষেপ ও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধের মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতে হবে, না হলে এর স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব আরও তীব্র হবে।  

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন