Logo
Logo
×

সারাদেশ

দেশে চাষ হচ্ছে বাহারি লিলিয়াম

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ পিএম

দেশে চাষ হচ্ছে বাহারি লিলিয়াম

দেশের মাটিতে নতুন সংযোজন লিলিয়াম ফুল। এটি শীতপ্রধান দেশের হলেও বাংলাদেশের মাটিতে চাষ হচ্ছে। বিদেশের মাটিতে লিলিয়াম রোপণ করার পর ফুল ফুটতে যতদিন সময় লাগে, তার চেয়ে অর্ধেক সময়ে দেশের মাটিতে ফুল ফুটেছে।

বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামে নেদারল্যান্ডের লিলিয়াম ফুল চাষ করছেন তরুণ উদ্যোক্তা প্রকৌশলী ফয়সাল আহম্মেদ। পরীক্ষামূলকভাবে নিজের নার্সারিতে ফুল ফোটাতে সফল হয়েছেন। এখন তিনি দেশের মাটিতে বাণিজ্যিকভাবে এটি চাষ করতে চান।

জেলার মোল্লাহাট উপজেলার গারফা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মধুমতি নদীর কাছে মধুমতি এগ্রো অ্যান্ড নার্সারি। প্রায় এক শতাংশ জমির উপরে এক ফুট দূরত্বের মধ্যে সারিবদ্ধভাবে লিলিয়াম রোপণ করা হয়েছে। পলিনেট হাউজের মধ্যে (উন্নতমানের ইউভি পলি ও শেড নেট ওয়েলপেপারে আবৃত ফুল বাগান) প্রায় আড়াই ফুট উচ্চতার গাছে গাছে অনেকটা লাল রঙ্গের লিলিয়াম ফুল ফুটে আছে। প্রতিটি ফুলে ৬টি পাপড়ি। আবার অনেক গাছে কুঁড়ি ফুল ফোটার অপেক্ষায় রয়েছে।

বিভিন্ন এলাকার মানুষ ফয়সাল আহম্মেদের নার্সারিতে বিদেশি ফুল দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকেই আবার বাণিজ্যিকভাবে লিলিয়াম চাষের আগ্রহের কথা জানাচ্ছেন।

জানা গেছে, নেদারল্যান্ড, ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার শীত প্রধান দেশগুলোতে লিলিয়ামের ব্যাপক চাষ হয়। ফুল সাধারণ সাদা, হলুদ, কমলা গোলাপি, লাল ও বেগুনি রঙের। আলো সহ্য করতে পারে না বলে ঠান্ডা ও আলোবিহীন জায়গায় লিলিয়াম ফুল চাষ করতে হয়। দেশের মাটিতে বাণিজ্যিক সম্ভাবনার আশা জাগাচ্ছে বিদেশি এ ফুল।

উদ্যোক্তা ফয়সাল আহম্মেদ জানান, নুতন যেকোনো বিষয়ে তার আগ্রহ অনেক বেশি। ইউটিউভ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিলিয়াম সম্পর্কে জানতে পারে তিনি। বাণিজ্যিক চাহিদা থাকা এটি চাষের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তিনি। লাল তীর নামে বীজ উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বীজ সংগ্রহ করেন।

এর পর তাদের সহযোগিতায় নেদারল্যান্ড থেকে দুই জাতের ২০০টি বাল্ব (কন্দ) এনে পরীক্ষামূলক তার চাষ করেন। চলতি বছরের ৩১ অক্টোবর প্রায় এক শতাংশ জমিতে ওই বাল্ব রোপণ করা হয়। এক স্কার ফুট অন্তর অন্তর বাল্ব রোপণ করা হয়। মাটিতে ভার্মিকম্পোস্ট, কোকডাস্ট ব্যবহার করা হয় এবং ছত্রাকনাশক স্প্রে করা হয়।  পুরোপুরি জৈবিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়েছে। মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা তার ব্যয় হয়েছে বলে তিনি জানান।

ফয়সাল জানান, শীত প্রধান দেশে সাধারণত দুই থেকে তিন ডিগ্রি তাপমাত্রা এলাকায় লিলিয়াম চাষ হয়। ৬৫ থেকে ৭০ দিনের মাথায় গাছ থেকে ফুল হারভেস্টিং করা হয়। কিন্ত তার নার্সারীতে ৩৩ থেকে ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় লিলিয়ামের চাষ করা হয় এবং ৩৩ দিনের মাথায় গাছে ফুল ফুটেছে। একটি গাছে সর্বোচ্চ সাতটি পর্যন্ত ফুল ফুটে আছে। ফুলদানিতে এই ফুল প্রায় এক মাস সতেজ থাকে এবং সুঘ্রাণ ছড়ায়।

ফয়সাল আহম্মেদ আরো জানান, ঢাকার ফুলের বাজারে প্রতিটি লিলিয়াম ফুল খুচরা ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

মোল্লাহাটের উদয়পুর গ্রামের নার্সারি ব্যবসায়ী মো. মেহেদী হাসান জানান, আগামীতে বাল্ব সংগ্রহ করে তিনি লিলিয়াম চাষ করবেন।

গোপালগঞ্জ জেলার চরগোবরা গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মো. রমজান শেখ বলেন, ‘এই ফুলের অনেক বাজার মূল্যে রয়েছে। দেশে বাণিজ্যিকভাবে লিলিয়াম ফুল চাষ করা গেলে, বিদেশেও রপ্তানি সম্ভব।’

লাল তীর সিড লিমিটেডের খুলনা বিভাগীয় ম্যানেজার মো. জুন্নুন রহমান জানান, নেদারল্যান্ড থেকে তারা লিলিয়াম ফুলের বাল্ব আমাদানি করেন। দেশে-বিদেশে লিলিয়ামের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ফুল বিক্রির জন্য লাল তীরের পক্ষ থেকে পাইকারি ফুল ক্রেতাদের সঙ্গে উদ্যোক্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের ফুল বিভাগের প্রধান ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ফারজানা নসরীন খান জানান, লিলিয়াম ফুলের দু’টি জাত রয়েছে। এর মধ্যে ওরিয়েন্টাল জাতের ফুল বেশি সুগন্ধী এবং এশিয়াটিকের গন্ধ সামান্য। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিটে গবেষণা শুরু করা হয় এটি নিয়ে। ২০১৭ সালে আমরা বাল্বসহ উৎপাদন প্যাকেজ উদ্ভাবন করতে সফল হয়েছি। কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউ এখন লিলিয়ামের বাল্ব উৎপাদন করছে।

তিনি বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ফুল উৎপাদন, বাল্ব উৎপাদন, পরবর্তী বছরের জন্য বাল্ব সংরক্ষণের জন্য উদ্যোক্তাদের সব ধরনের তথ্য দেওয়া হয়। ফুলের বাল্ব উৎপাদন এবং সংরক্ষণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ড. ফারজানা জানান, একটি প্রকল্পের আওতায় যশোর, রংপুর, গাজীপুর ও সাভার এলাকার ১৬ জন চাষিকে বাণিজ্যিকভাবে লিলিয়াম ফুল চাষের জন্য উদ্ভুদ্ধ করা হয়। ২০২১-২০২২ সাল থেকে তারা বার্ণিজ্যিক ভাবে লিলিয়াম ফুল চাষ করছে। বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য এশিয়াটিক জাতের ফুল চাষের পরামর্শ দেন এ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার বলেন, দেশের মাটি লিলিয়াম চাষের জন্য উপযোগী। এখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এটির চাষ ছড়িয়ে দিতে হবে। এ ফুল চাষের জন্য উদ্যোক্তা তৈরি করতে হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি সহযোগিতা পেলে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে। বাণিজ্যিকভাবে লিলিয়াম চাষ করা গেলে অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন