রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কৃষক সমাবেশে পুলিশের বাধা, জামায়াত-শিবির পরিচয়ে হামলা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৩২ পিএম
বাকবিতণ্ডা চলাকালীন একটি ছবি।
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত ‘কৃষক সমাবেশে’ হামলার ঘটনা ঘটেছে। জামায়াত-শিবির পরিচয়ে কয়েকজন যুবক এ হামলা করে বলে অভিযোগ করেছেন আয়োজকরা।
আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ৩টার দিকে রৌমারী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স চত্বরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। তবে জামায়াত হামলার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তারা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের ‘কৃষক সমাবেশ’ আয়োজনকে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সমাবেশ দাবি করে জানিয়েছে, সমাবেশে আওয়ামী ঘরোনার লোকজন ছিল। সেখানে কোনো কৃষক কিংবা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের লোকজন ছিল না।
হামলায় শহীদ আবু সাঈদের হত্যা মামলার প্রধান আইনজীবী ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির ন্যায়পাল অ্যাডভোকেট রায়হান কবির এবং সমাবেশের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনুসহ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তবে তাদের কারও অবস্থা গুরুতর নয়।
পুলিশ বলছে, ‘সমাবেশের অনুমতি ছিল না। সমাবেশ হয়নি। হামলা নয়, বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা ঘটেছে।’
যাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ আনা হয়েছে- জামায়াতের শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন রৌমারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরিদ, যুব নেতা মাহবুব আলম এবং অন্তর। মাহবুব আলম উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বঙ্গবাসীর জামাতা। অভিযুক্তরা জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির ন্যায়পাল অ্যাডভোকেট রায়হান কবির অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাদের পূর্ব নির্ধারিত কৃষক সমাবেশ ছিল। পুলিশ স্টেজ ও সামিয়ানা সরিয়ে দেয়। সমাবেশ স্থলের কাছে জামায়াত শিবির পরিচয়ে কয়েকজন যুবক এসে সমাবেশ করতে নিষেধ করে। এতে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা আমাদের ওপর হামলা করে। কিলঘুসি ও লাথি মারে। আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিনু, ভূমিহীন আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক শেখ নাসির এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি নাহিদ হাসানসহ আমাকে মারধর করে।’
রায়হান কবির আরও বলেন, ‘তারা (জামায়াত-শিবির কর্মীরা) এসে বলে এটা রাষ্ট্রবিরোধী সমাবেশ। এ সমাবেশ আপনারা করতে পারবেন না। রাষ্ট্র সংস্কার হয়ে গেছে। রাষ্ট্র সংস্কার আমরা করবো। আমরা ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার হবে না।’
‘আমাদের কথা না শুনে আপনারা এটাকে রাষ্ট্রবিরোধী সমাবেশ কীভাবে বলছেন’, এভাবে বলার সাথে সাথে তারা আমাদেরকে আক্রমণ করে। তারা জামায়াত-শিবিরের পরিচয় দিয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় সংগঠকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে তারা সবাই জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত লোকজন।’ যোগ করেন রায়হান কবির।
পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা ও অবহেলাকে দায়ী করে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘এখানে পুলিশের চরম রকম অসহযোগিতা ছিল। প্রথমে পুলিশ এসে স্টেজ খুলেছে। তারপর তারা চলে গেছে। পরবর্তীতে আমরা পুলিশের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরেনি।’
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের শিল্পী কল্যাণ ট্রাস্টের বোর্ড অব ট্রাস্টি নাহিদ হাসান বলেন, ‘পুলিশ সমাবেশের আয়োজন ভন্ডুল করে দেয়। জামায়াত-শিবির পরিচয়ে কয়েকজন যুবক এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার দাবি করছি। সেই সাথে ইউএনও, সার্কেল এএসপি ও ওসির প্রত্যাহার দাবি করছি।’
তবে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত শেখ ফরিদ। তিনি বলেন, ‘কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। কৃষক সমাবেশের নামে সেখানে আওয়ামী লীগের লোকজন একত্রিত হয়েছিল। আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা স্থান ত্যাগ করে। আয়োজকদের সাথে বাকবিতণ্ডা ও সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। কোনো হামলা হয়নি।’
সামাবেশকে রাষ্ট্রবিরোধী দাবি করে শেখ ফরিদ বলেন, ‘সেখানে আওয়ামী লীগের চিহ্নিত লোকজন উপস্থিত হয়েছিল। কোনো কৃষক ছিল না। কৃষকদের নাম করে আওয়ামী লীগের লোকজনকে পুনর্বাসন করার প্রস্তুতি চলছিল।’
জামায়াতে ইসলামী রৌমারী উপজেলা শাখার আমির হায়দার আলী বলেন, ‘সমাবেশটি আওয়ামী ঘরানার লোকজনদের নিয়ে আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে কৃষক বা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের কেউ ছিলেন না। এ ধরনের সমাবেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’
হামলার অভিযোগ প্রশ্নে এই জামায়াত নেতা বলেন, ‘হামলাকারী বলে যাদের নাম বলেছেন তারা জামায়াতের কেউ না। এখন জামায়াতের সুদিন আসায় অনেকে জামায়াতের সাথে ঘুরতে পারে। কিন্তু তারা জামায়াতের কেউ না। আমাদের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রৌমারী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) লুৎফর রহমান বলেন, ‘হামলা নয়। সামান্য ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটেছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে।’
সমাবেশ নিয়ে জামায়াতের বিরোধিতা প্রসঙ্গে ওসি বলেন, ‘তারা (জামায়াত) বলেছিল যে এই সমাবেশের আয়োজকরা আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ। এই সমাবেশ নিয়ে তাদের আপত্তি ছিল।’
এদিকে, হামলা ঘটনার পরপরই উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। সেখানে বক্তব্য রাখেন নাহিদ হাসান, অ্যাডভোকেট রায়হান কবির ও শেখ নাসির উদ্দিন। তারা হামলাকারীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন। একই সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সার্কেল এএসপি এবং ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন।