জামায়াতের আমিরকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ায় শিক্ষককে তুলে নিয়ে মারধর!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩২ পিএম
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান
ফেসবুকে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানকে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেওয়ায় খুলনার কয়রা উপজেলার এক স্কুল শিক্ষককে তুলে নিয়ে মারধর ও হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল রবিবার বেদকাশী কাঁচারি বাজার জামায়াতে ইসলামীর কার্যালয়ে মারধর এবং আজ সোমবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাকে আরেকবার হেনস্তা করা হয়।
ওই শিক্ষকের নাম বি এম হুমায়ুন কবির। তিনি বেদকাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (বরখাস্ত)। তিনি প্রায় ফেসবুকে হাস্যরসমূলক পোস্ট দেন। ২০২৩ সালে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও অর্থ পাচার নিয়ে একটি পোস্ট দেওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাদের রোষানলে পড়েছিলেন তিনি। গত ফেব্রুয়ারি মাসে চেক প্রতারণা মামলায় কারাগারে যাওয়ায় বর্তমানে তিনি বরখাস্ত রয়েছেন।
জানা গেছে, হুমায়ুন কবির গত শনিবার ভোরে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের ছবি দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘এ মালটাকে খুব ভালো মনে করেছিলাম। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম তার রাজনীতি শুরু হয় বামদের হাত ধরে! উপরন্তু সে একজন ব্যবসায়ী!’ তবে পোস্টটি নিয়ে জামায়াত নেতা-কর্মীরা মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখালে তিন ঘণ্টা পর তিনি ফেসবুক থেকে সেটি ডিলিট করে ফেলেন।
গতকাল রবিবার দুঃখ প্রকাশ করে তিনি আরেকটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘আমিরে জামায়াতের একটা বক্তব্যকে নিয়ে একটা পোস্টে ভুলবশত দৃষ্টিকটু শব্দ ব্যবহার করায় আন্তরিক দুঃখিত!’
শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে বার বার ফ্যাস্টিট বলা পছন্দ করি না’, জামায়াত আমিরের এই কথাটি আমার ভালো লাগেনি। তাই আমি ফেসবুকে পোস্টটি দিয়েছিলাম। পরে সবাই খারাপ মন্তব্য করলে আমি মুছে ফেলি। তারপরও নানারকম মন্তব্য কানে আসছিল। এজন্য রবিবার ক্ষমা চেয়ে আরেকটি পোস্ট দেই।
শিক্ষক হুমায়ুন কবির আরও বলেন, গতকাল রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফোন দিয়ে আমাকে জামায়াত অফিসে যেতে বলে। কিন্তু রাজি না হলে আমার বাড়িতে লোক পাঠিয়ে তুলে নিয়ে আসবে বলে জানায়। বাড়িতে আসলে ঝামেলা হতে পারে ভেবে আমি বাজারের দিকে রওনা দেই। পথেই ৮/১০ জন আমাকে গাড়িতে তুলে নেয়। এ সময় তারা আমার মাথায়-পিঠে জোরে মারে। ব্যথায় আমি রাতে ঘুমাতে পারিনি।
শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, জামায়াত অফিসে উপজেলা সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল্লাহ, বেদকাশি ইউনিয়ন আমির মাস্টার নূর কালামসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। রিমান্ডের মতো তারা আমাকে জেরা, নানা কটূক্তি করে হেনস্তা করেন, আমার মোবাইল চেক করে কল রেকর্ড ও ছবি মুছে ফেলেন। ডিসপ্লেও ভেঙে ফেলেন। পরে তারা পুলিশের কাছে তুলে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু পুলিশ থানায় না নিয়ে আমাকে বাড়ি পৌঁছে দেয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, তাকে কোনো ধরনের মারপিট করা হয়নি। অফিসে ৫০/৬০ জন লোক ছিল, সবাই একটি টোকা মারলে তো তাকে খুঁজে পাওয়া যেতো না। ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনায় তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি রাজি হননি। আমরা বিষয়টি পুলিশ ও প্রশাসনকে জানিয়েছি। এখন তারা কী ব্যবস্থা নেয় সেই অপেক্ষায় রয়েছি।
কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইমদাদুল হক জানান, ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার ঘটনা নিয়ে জামায়াতের লোকজন উত্তেজিত ছিল। তারা শিক্ষককে আটকের কথা বলেছে, কিন্তু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া আমরা কাউকে ধরতে পারি না। বিষয়টি ইউএনওকে জানিয়েছি। সোমবার দুপুরে বিষয়টি মীমাংসার জন্য মিটিং ডাকা হয়েছে। সেখানে মীমাংসা হয়ে যাবে।