তিন দফা বন্যার পর এবার ফেনীর কৃষক আর্মিওয়ার্ম পোকার উপদ্রবে আতঙ্কে পড়েছেন। জেলার সোনাগাজী ও ফুলগাজী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসল ও সবজি বিনাশ করছে এই পোকা।
বন্যার পানিতে এ পোকা ভেসে এসেছে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
তারা বলছেন, কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা দমন করা যাচ্ছে না।
সোনাগাজীর আমিরাবাদ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কালো রঙের অসংখ্য পোকা ফসলের মাঠে, রাস্তায়, বাড়িঘরে ও আশপাশের বনে-জঙ্গলে বিচরণ করছে। কৃষি কর্মকর্তাদের মতে, এই পোকা পানিতে থাকতে পারে না। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে বিপরীত চিত্র। পুকুর, ডোবা-নালাসহ আমন ধানের মাঠে পানির ওপর দিয়েই ভেসে বেড়াচ্ছে এবং একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করছে।
কৃষকরা বলেন, বন্যার পর জমিতে আমন ধান আবাদ করেছেন তারা। এছাড়া বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আগাম শীতকালীন সবজি লাউ, কুমড়া, করলা, ঝিঙ্গা, পাট শাক আবাদ করেছেন। সপ্তাহখানেক পর সেগুলো বিক্রির উপযোগী হতো। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে এ পোকার ব্যাপক আক্রমণ। পোকা মারতে কীটনাশক ছিটালেও তা কাজ হচ্ছে না।
আমিরাবাদের আহম্মদপুর এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘১২ শতক জমিতে লাউ চারা রোপণ করেছিলাম। হঠাৎ এ পোকা এসে সব গাছের মূল কেটে দিয়েছে। এতে গাছগুলো শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে কীটনাশক প্রয়োগ করলেও লাভ হয়নি। পোকাগুলো কীটনাশকের মধ্যে রাখলেও মরে না।’
চর কৃষ্ণজয় গ্রামের বাসিন্দা আবুল কালাম তার ৫৫ বছরের জীবনে কখনো এমন পোকা দেখেননি বলে জানান। তার ভাষায়, ‘দেখতেও কেমন ভয় লাগে, কাছে গেলে গায়ে উঠে পড়ে। জমির পাশাপাশি এখন বাড়িঘরেও ঢুকে পড়েছে। এভাবে চললে মাঠের ফসল আর বাড়িতে তোলা সম্ভব হবে না।’
কৃষি কর্মকর্তারা এখনও পর্যন্ত এর কোনো সমাধান খুঁজে পাননি।
সোনাগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাঈন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পোকা দমনে ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের টিম কাজ করছে। কৃষি বিভাগ মাঠপর্যায়ে থেকে কৃষকদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে।
বন্যার সময় কিছু কীটের লার্ভা ফসলের মাঠে আগাছার সঙ্গে মিশে থাকায় এ পোকা বেড়েছে বলে মনে করেন ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম। কিন্তু তিনি পোকা দমনের উপায় বাতলাতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ফেনী সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোতাহার হোসাইন বলেন, সাম্প্রতিক বন্যা এ পোকার উপদ্রবের অন্যতম কারণ হতে পারে। এ পোকা সাধারণত মাঝারি ঠান্ডা ও গরমে বেশি বংশবিস্তার করে। বর্তমান সময়ের আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি অনুকূলে রয়েছে। যা আমাদের জন্য বাড়তি শঙ্কার বিষয়।
মোতাহার হোসাইন বলেন, গ্রীষ্মকালে পোকাটি ৩০-৩৫ দিনে ও শীতকালে ৭০-৮০ দিনের জীবনচক্র সম্পন্ন করে। স্ত্রী জাতের পোকা সাধারণত পাতার নিচের দিকে ১৫০০-২০০০টি ডিম পাড়ে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. একরাম উদ্দিন বলেন, পোকার উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে জমিতে আলোর ফাঁদ ও পাখি বসার মতো কিছু করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বালাইনাশক প্রয়োগের বিষয়েও কৃষকদের বলা হচ্ছে।