বগুড়ায় স্বেচ্ছাসেবক দলনেতাকে কুপিয়ে হত্যা, নিহতের সমর্থকদের পিটুনিতে প্রাণ গেল যুবদল কর্মীর
বগুড়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পিএম
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভেতরে হামলার একটি দৃশ, ইনসেটে (ডানে) নিহত স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমানকে (৪০) কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে গোকুল ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সংলগ্ন মাজারের কাছে এ ঘটনা ঘটে।
মিজানুর উপজেলার গোকুল উত্তরপাড়ার আফসার আলীর ছেলে। মিজানুরের সঙ্গী ও স্বজনরা অভিযোগ করেছেন, গোকুল ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবদলের সদ্য বহিষ্কৃত আহ্বায়ক সুমন আহমেদ (বিপুল) এ হামলায় নেতৃত্ব দেন।
এদিকে হামলার সময় ল্যাদো (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে পিটুনি দেন মিজানুরের সমর্থকরা। তার বাড়িও গোকুল উত্তরপাড়ায়। তিনি যুবদল নেতা সুমনের চাচাতো ভাই ও যুবদলের কর্মী। গুরুতর আহত ল্যাদোকে সেনা ও পুলিশ সদস্যরা উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। রাত ১১টার দিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে ল্যাদোর ওপর হামলা করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী–সমর্থকরা। এতে ল্যাদোর মৃত্যু হয়।
এ সময় হামলাকারীরা হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এসব দৃশ্য ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের ওপরও হামলা করা হয়। এতে চারজন সাংবাদিক আহত হন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বহিষ্কৃত যুবদল নেতা বিপুলের (সুমন আহম্মেদ) নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মিজানুর হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ ঘটনায় হামলাকারীদের মধ্যে ল্যাদো নামের একজনকে আটকের পর স্থানীয় লোকজন পিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করেন। তাকে উদ্ধার করে পুলিশের গাড়িতে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রাত ৯টার দিকে গোকুলে ট্রাক বন্দোবস্তকারী সমিতির কার্যালয়ের জন্য ভাড়া নেওয়া ঘরে সঙ্গীদের নিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলনেতা মিজানুর। সেসময় বিদ্যুৎ ছিল না। তখন ৮-১০টি মোটরসাইকেলে ১৮-২০ জন এসে মিজানুরের ওপর হামলা করেন। হামলাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে মিজানুরকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। তাকে প্রথমে টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর রাত ১০টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মিজানুরকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে, মিজানুরের ওপর হামলার সময় সুমনের চাচাতো ভাই ল্যাদোকে আটক করে স্থানীয় লোকজন। পিটুনিতে গুরুতর আহত হন ল্যাদো। সেনা ও পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে রাত ১১টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
হাসপাতালে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বলেন, মিজানুর নিহত হওয়ার খবরে হাসপাতাল চত্বরে তার কয়েকশ বিক্ষুব্ধ সমর্থক জড়ো হন। তারা পুলিশের গাড়ি থেকে আহত ল্যাদোকে জরুরি বিভাগে নেওয়ার সময় হামলা করেন। এর মধ্যেই পুলিশ তাকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যায়। সেখানেও হামলা করেন নিহত মিজানুরের সমর্থকরা। চিকিৎসা দেওয়ার আগেই ল্যাদোর মৃত্যু হয়। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদের বরাতে দৈনিক প্রথম আলো এক প্রতিবেদনে বলছে, মিজানুরকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছেন। পরে আনা হয় ল্যাদো নামের একজনকে। তাকে জরুরি বিভাগে নিতে ফটকে বাধা দেন মিজানুরের সমর্থকরা। তারা ওই ব্যক্তিকে মারধর করতে করতে ভেতরে নিয়ে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে (ল্যাদো) মৃত অবস্থায় পেয়েছেন।
আবদুল ওয়াদুদ আরও বলেন, হামলাকারীরা মারধরের প্রমাণ মুছে ফেলতে জরুরি বিভাগের ফটকে ও ভেতরে সিসিটিভির দুটি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে। জরুরি বিভাগের কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।