Logo
Logo
×

সারাদেশ

ইমামকে চাকরিচ্যুত

চাঁদপুরে একটি ফেসবুক পোস্টের জেরে চার পরিবার সমাজচ্যুত

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম

চাঁদপুরে একটি ফেসবুক পোস্টের জেরে চার পরিবার সমাজচ্যুত

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) পোস্টকে কেন্দ্র করে চারটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করেছে এলাকাবাসী। এমন সিদ্ধান্তে অসহায় জীবন যাপন করছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

চাঁদপুরের মতলব উত্তর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের জোর খালি গ্রামের বাসিন্দা মো. সাইফুদ্দিন বেপারী। স্থানীয় মসজিদের ইমামকে চাকরি থেকে বাদ দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে ২২ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মতামত পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেন মসজিদে ইমাম পাল্টানো খুব সহজ কিন্তু মসজিদ কমিটিতে যেসব সুদখোর ঘুষখোর থাকে তাদের পাল্টানো বড়ই কঠিন। এই পোস্টে কমেন্টস করে একই এলাকার আরও তিনটি পরিবারের সদস্য। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত পোস্ট করায় মসজিদ কমিটি ও এলাকাবাসীর সম্মানহানি হয়েছে দাবি করে ২৯ জুন সন্ধ্যায় একটি বৈঠকের মাধ্যমে চারটি পরিবারকে সমাজচ্যুত করেন সমাজপতিরা। 

জোরখালী গ্রামের মনির হোসেন বেপারীর ছেলে সাইফুদ্দিন বেপারী সমাজচ্যুত বিষয়ে বলেন, আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১২ জন। সমাজ থেকে বাদ দেওয়ার পূর্বে আমাদেরকে জানানো হয়নি। আমি লোকমুখে জানতে পেরেছি বিষয়টি। তারপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছে, আমাদেরকে সমাজ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। পরে অন্যান্যদের কাছ থেকে শুনেছি মসজিদের ইমামকে বাদ দেওয়ায় আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি মতামত লিখেছিলাম। 

তিনি আরও বলেন, সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সমাজের বাসিন্দাদের এবং মসজিদ কমিটির কর্তা ব্যক্তিদের সম্মান ক্ষুণ্ন হয়েছে এমনটা দাবি করে আমাকে এবং আমার মতামতের কমেন্ট করা আমার প্রতিবেশী আরও তিনটি পরিবারের সদস্যদের সমাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা মসজিদের কোনো কাজে অংশ নিতে পারবো না এবং এ সমাজে বসবাসকারী অন্যান্যরা আমাদের সাথে কথা বলতে পারবে না। মুরুব্বিরা একটি বৈঠকের মাধ্যমে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমরা এখন অসহায় বোধ করছি।

সমাজ থেকে বাদ দেওয়া আরও একটি পরিবার একই গ্রামের জহিরুল হক সরকারের ছেলে গোলাম নবী সরকার। এ বিষয়ে তিনি জানান, তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। তিনি স্থানীয় মুরুব্বিদের বৈঠক সম্পর্কে কিছুই জানেন না। লোকমুখে জানতে পেরেছেন সমাজ থেকে তাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কি কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে তা তার পরিবার অবগত নয়।

সমাজ থেকে বাদ হওয়া আরও একটি পরিবার একই গ্রামের শাহজালাল সরকারের ছেলে জুবায়ের। সমাজ থেকে বাদ দেওয়া বিষয়ে তার ভাই জাহিদ সরকার বলেন, আমাদের সাথে সমাজে কারও সাথে দ্বন্দ্ব নেই। তারপরও কি কারণে আমাদেরকে সমাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে আমরা জানি না। আমাদের সাথে সমাজের লোকজন কথা বলে না।


সমাজ থেকে বাদ দেওয়া আরেকটি পরিবারের সদস্য মানিক সরকারের মা শ্যামলী বেগম বলেন, সমাজ থেকে বাদ দেওয়া বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যেদিন মুরুব্বিদের বৈঠক হয়েছে সেদিন আমি বাড়িতে ছিলাম না। পরদিন সকালে মসজিদে ইমাম সাহেবকে নাস্তা দিয়ে আসি এবং দুপুর বেলা খাবার পাঠাই। আমার খাবার গ্রহণ করা হয়নি। তখন জানতে পারি মসজিদের ইমামকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

সমাজের মুসল্লিদের অপমান করায় এ শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করেন মসজিদ কমিটির একজন সদস্য রুহুল আমিন মিয়াজী। মসজিদে আসা-যাওয়া এবং সমাজের সবার তাদের সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে বৈঠকে। ওই বৈঠকে স্থানীয় কাউন্সিলরসহ সমাজের গণ্যমান্য সকল ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। সবার উপস্থিতিতে চার পরিবারকে সমাজ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের সাথে কথা বলা এবং মসজিদে আসা-যাওয়া সবকিছু নিষিদ্ধ করা হয়েছে বৈঠকে।

ওই দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ছেংগারচর পৌরসভা ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. সবুজ বেপারী। ঘটনার বিষয় তিনি জানান,পরিবারগুলোকে সমাজচ্যুত করা হয়নি। এই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কয়েকজন সমাজে বসবাসকারী মুরব্বিদের অপমান করে কথা বলে। তারা মসজিদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডু নিয়ে বিভ্রান্ত করে অন্যদের। তাই তাদেরকে শাসন করতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মসজিদ কমিটি ও সমাজবাসী। মুসল্লিদের অপমান করায় মসজিদ কমিটির কাছে ক্ষমা চাইলে ঠিক হয়ে যাবে সব জানান তিনি।

ঘটনার বিষয়ে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে তিনি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দেন।

সমাজচ্যুত বিষয়ে চাঁদপুর জেলা শাখা সুজনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, সমাজচ্যুত করার ক্ষমতা কারও নেই। ঘটনাটি মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন। এমন বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি । কারণ মতলব উত্তরে অল্প সময়ের ব্যবধানে পরপর দুটি ঘটনা আবির্ভূত হয়েছে সমাজচ্যুত করার। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে আরো বিস্তার লাভ করবে এটি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন