ছাত্রলীগ নেত্রীকে ধর্ষণ করে বাবাকে নিয়ে লন্ডনে পালালেন ছাত্রলীগ নেতা!
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০৯:৪৩ পিএম
বিয়ের প্রলোভনে ছাত্রলীগ নেত্রীকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠে স্পেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাঈল হোসেন রায়হানের (৩৫) বিরুদ্ধে। একই অভিযোগে আদালতে মামলার পর দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন তিনি। আজ সোমবার ভোর ৪টায় বাবাকে নিয়ে লন্ডনে পালিয়ে গেছেন এই নেতা। এর আগে গতকাল রোববার দুপুরে মামলা দায়ের হয়।
জানা যায়, মাদারীপুর জেলা ছাত্রলীগের প্রভাবশালী এক নেত্রী (২৯) রোববার নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক জেলা জজ আবদুর রহিমের আদালতে এ মামলাটি করেন। আদালত ভিকটিমের অভিযোগ আমলে নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করে পিবিআইকে (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
রায়হান নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সিরাজপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদনগর গ্রামের মোল্লাবাড়ির মো. ইউসুফ আলীর ছেলে। ওই মামলায় ছাত্রলীগ নেতা রায়হান ছাড়াও তার বাবা মো. ইউসুফ আলী (৬৫), ভাই বাবু (৩৮) ও খালাতো বোন বেগমগঞ্জ উপজেলার সেতুভাঙ্গা এলাকার ফরাজি বাড়ির মো. সবুজ ফরাজির স্ত্রী কলিকে (৩৫) আসামি করা হয়েছে।
আদালতে দায়ের করা অভিযোগ ও ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ওই ছাত্রলীগ নেত্রীর সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতা রায়হানের পরিচয় হয়। পরে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক ও শেষপর্যন্ত প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। এরই মধ্যে বিয়ের প্রলোভন এবং বিয়ের পর ভিকটিমকে লন্ডন নিয়ে যাওয়ার প্রতারণামূলক কথা বলে তাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে একাধিক স্থানে নিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ এবং ধর্ষণের ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখেন রায়হান। পরে ওই ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে বারবার ধর্ষণ করে। এছাড়া ২৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ভিকটিম ১০ লাখ টাকা পরিশোধ করার পর আরও ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন রায়হান।
কোনো উপায় না পেয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানায় গত বৃহস্পতিবার মামলা করতে যান ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রী; কিন্তু পুলিশ মামলা গ্রহণ না করে তাকে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করতে বলে। পরে রোববার দুপুরে ভিকটিম ছাত্রলীগ নেত্রী নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে মামলাটি করেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এম জাকির হোসাইনের যৌথ স্বাক্ষরে এক বছরের জন্য স্পেন ছাত্রলীগ কমিটির অনুমোদন দেন। স্পেনে চাকরিরত অবস্থায় ছাত্রলীগের পদ-পদবি ব্যবহার করে রায়হান নানা অনিয়ম ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েন। পরে ২০১৯ সালের ৯ জুলাই ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর যৌথ স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনবিরোধী কার্যক্রমে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ওই কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিল।
এই ব্যাপারে বক্তব্য জানতে রায়হানের মোবাইল ফোনে আজ দুপুরে কল দেওয়া হলে ফোনটি রিসিভ করেন এক নারী। তিনি উত্তেজিত হয়ে নম্বরটি তার বলে দাবি করেন এবং রায়হান এই নম্বরের সিমটি তার স্বামীকে দিয়েছেন বলে দাবি করেন।
এরপর রায়হানের সঙ্গে ফেসবুক মেসেঞ্জারে যোগাযোগ করা হয়। এসময় তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তার রেন্ট-এ কারের ব্যবসা থাকায় সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে মামলার বাদী রায়হানের বাড়িতে এসেছেন বলে স্বীকার করেন।