সিলেটে টানা বৃষ্টি
নির্ঘুম রাত, নগরীর বাড়িঘর-হাসপাতালে পানি
সিলেট নগরীতে গতকাল রোববার দিবাগত রাতে টানা ৬-৭ ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। আর পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি উপচে সিলেট নগরীতে প্রবেশ করেছে। এতে নগরের উপশহরের প্রধান সড়কসহ প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। অনেক বাসা-বাড়িতেও উঠেছে পানি। পানি প্রবেশ করেছে ওসমানী হাসপাতালেও।
এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মসজিদের সামনেও জলাবদ্ধতার দেখা হয়েছে। আকস্মিক জলাবদ্ধতার কারণে নগরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলা সোমবারের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
দেখা গেছে, রাতের বৃষ্টিতে সিলেট নগরীর উপশহর, যতরপুর, মেন্দিবাগ, জামতলা, তালতলা, শেখঘাট, কলাপাড়া, মজুমদার পাড়া, লালদীঘিরপাড়, তোপখানা, কাজির বাজার, তেররতন, সোবহানীঘাটসহ অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
নগরীর লালাদিঘির পাড় এলাকার মামুন আহমদ বলেন, এমনিতেই ভারত থেকে নেমে আসা উজান ঢলে সিলেটের বেশ কয়েকটি উপজেলায় সংকটাপন্ন অবস্থা। এরমধ্যে সুরমা নদীর পানি টইটুম্বুর করছে কয়েকদিন থেকে। আজ টানা বৃষ্টিতে আমাদের ঘরে পানি উঠেছে।
মাছিমপুর এলাকার আবুল হোসেন বলেন, গত শুক্রবার থেকে এলাকার বাসা-বাড়িতে পানি উঠেছে। গত দুদিনে কিছুটা কমেছিল। কিন্তু এক রাতের বৃষ্টিতে অনেকে বাসা-বাড়ি ছেড়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর যদি নদী খনন করা হতো তাহলে বাসিন্দাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হতো না বলে মন্তব্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।
নগরীর মিরের ময়দান পায়রা এলাকার বাসিন্দা মো. আজমল আলী তার ফেসবুক আইডিতে মেয়র ও এমপিকে উদ্দেশ্য করে লেখেন, ‘নগরবাসীর দাবি একটাই, সুরমা নদী খনন চাই। সুরমা নদী খনন করুন, বন্যা থেকে নগরবাসীকে রক্ষা করুন।’
এ ব্যাপারে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিচতলা পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। ২০২২ সালের বন্যার সময়ও পানি ঢুকে যায়। সংশ্লিষ্টদের বারবার জানানো হলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় অতিবৃষ্টি হলেই পানি ঢুকে পড়ে যায়।
সিলেট সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, নগরের দুটি আশ্রয়কেন্দ্রে শতাধিক পরিবার অবস্থান করছেন। তাদের জন্য খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে গত ২৯ মে থেকে সিলেটের গোয়াইঘাট কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ, জকিগঞ্জ ছাড়াও বিয়ানীবাজার, গোলাপগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার ছয় লাখ ৪৩ হাজার ৪৭০ জন মানুষ বন্যা আক্রান্ত হন। দুর্গত এলাকাগুলোতে ৫৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে তিন হাজার ৭৩৯ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।