Logo
Logo
×

বইমেলা

বইমেলায় ভারতীয় বই অনুপ্রবেশ নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’

Icon

প্রকাশ: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:১০ পিএম

বইমেলায় ভারতীয় বই অনুপ্রবেশ নিয়ে ‘ষড়যন্ত্র’

অমর একুশে বই মেলার প্রধান ফটক। ছবি : সংগৃহীত

একুশে বইমেলায় ভারতীয় প্রকাশনা ও বই অনুপ্রবেশের ‘ষড়যন্ত্র’ চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলাদেশের লেখকরা। গত বছর বইমেলার আগেও এ বিষয়ে সাহিত্য সমাজে জোর আলোচনা ওঠে। তখন অভিযোগ করা হয়, ভারতীয় কয়েকজন প্রকাশক বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। তারা বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশি কিছু প্রকাশকের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ভারতীয় বই একুশে বইমেলায় রাখার বিষয়টি বাস্তবায়নে সরেজমিন পর্যবেক্ষণও করেছেন।

তবে এবার এ আলোচনা আরো তীব্র হয়েছে। লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদের ভাষ্য, একুশে বইমেলার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি কিছুটা শঙ্কিত। ২০২৪ মেলা শুরুর আগে শোনা যাচ্ছিল, মেলা পূর্বাচলে সরিয়ে নেওয়া হবে। যুক্তি দেখানো হয়েছিল- এতে করে মেলার পরিসর আরও বৃদ্ধি পাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং মেট্টো স্টেশনের নিরাপত্তার কথাও তোলা হয়েছিল। বাণিজ্য মেলা এবং বইমেলা দুটি আলাদা সময়ে একই ভেন্যুতে করা যায় কিনা- এমন আলোচনাও এগিয়েছিল।

কিন্তু আসল পরিকল্পনাটি আড়াল করা হয়েছিল। সেটি হলো- দীর্ঘদিন ধরেই ঢাকায় একশ্রেণির প্রকাশক, বই বিক্রেতা একুশে বইমেলায় পশ্চিমবাংলাসহ ভারতীয় প্রকাশকদের অংশ নেওয়ার পক্ষে মৃদু দাবি জানিয়ে আসছেন। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন এখানকার গুটিকয়েক কবি-লেখক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক। এদের সবার সঙ্গেই আবার সদ্ভাব রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের।

তার অভিযোগ, এবার বইমেলায় শুরু থেকে যে অব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তাহীনতার নজির দেখা যাচ্ছে। মেলার মাঠ থেকে মানিব্যাগ, মোবাইল চুরির ঘটনা এবার অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়েছে। এবার মেলার মাঠে দলবদ্ধ বখাটের উপস্থিতি খুবই ভীতিকর। কিন্তু মেলার গেটের বাইরে ও ভেতরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি থাকলেও কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। বিষয়টা এমন পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছে যে, আচ্ছা এখানকার অল্প জায়গায় মেলার সার্বিক পরিস্থিতি মানসম্মত রাখা যাচ্ছে না। চলো আমরা মেলাটিকে অন্যত্র বড় জায়গায় নিয়ে যাই। যেমনটা বাণিজ্যমেলা হচ্ছে। ওখানে কোনো হইচই নেই। সব শান্ত!

চলতি বইমেলার পরিবেশ নিয়ে শুরু থেকেই অস্বস্তি ও আপত্তি দেখা গেছে। বিশেষত আলোচিত এক অসমবয়সী দম্পকে বের করে দেওয়া, স্বাস্থ্যখাতের দুর্নীতিতে জেলখাপা লেখিকার বিই প্রকাশ, হিরো আলমকে দুয়ো দেয়ার ঘটনা আলোচিত ছিল এবার। পাশাপাশি টাকা-মোবাইল চুরির ঘটনাও আছে। কোনো ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা বা বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে একটি দৈনিকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এবং লেখক আনিসুল হকের মন্তব্য পরিস্থিতিকে উসকে দেয়। তিনি তার প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনাসহ কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা ছাড়া বাদবাকিদের দোকানদার বলে গালি দেন। তার এ বক্তব্যকেও ভারতীয় বই অনুপ্রবেশের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন লেখকরা।

আনিসুল হক বলেন, প্রথমা, পাঞ্জেরী, ইউপিএল, কথা প্রকাশসহ  ৬ থেকে ৮ টি প্রতিষ্ঠান কেবল প্রকাশক। আর কেউ প্রকাশক নন। সবাই দোকানদার। যার প্রতিক্রিয়ায় প্রকাশক সাঈদ বারী লিখেছেন, আনিসুল হকের ঔদ্ধত্য দেখে অবাক হয়েছি। বাংলা একাডেমি বইমেলার নীতিমালা অনুযায়ী  শুধুমাত্র প্রকাশকদের স্টল বরাদ্দ দিয়ে থাকে। এমনকি নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হলে কতগুলো বই থাকতে হবে, সেটাও বলা আছে নীতিমালায়। আনিসুল হকের কথায় মনে হচ্ছে, বাংলা একাডেমি নিজেদের নীতিমালা ভঙ্গ করে ৭/৮টি  প্রতিষ্ঠান বাদে বাকি ৬০০/৭০০ 'দোকানদার'দের  স্টল বরাদ্দ দিয়েছে!

লেখক মাহবুব মোর্শেদের মন্তব্য, ছয়-সাতটি প্রকাশনা সংস্থা বাদ দিয়ে বাকিগুলো মানসম্মত নয়, একথা কয়েকদিন আগেও শুনেছিলাম। প্রকাশকদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলছিলেন। তখন গুরুত্ব দেইনি কথাটায়। এবার আনিসুল হক যেভাবে যুদ্ধংদেহী ভঙ্গিতে ৬/৭টি প্রকাশনীর বাইরে অন্য সব প্রকাশনীকে দোকানদার খেতাব দিলেন, তাতে মনে হচ্ছে- ৬-৭ টি প্রকাশনী মিলে কোনো একটা গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এর নেতৃত্ব দিচ্ছে সম্ভবত প্রথমা ও প্রথম আলো। এ বিষয়ে সকল লেখক ও প্রকাশককে সচেতন হতে হবে। আনিসুল হককে এই বক্তব্য প্রত্যাহার তো করতেই হবে। প্রকাশকদের কাছে ক্ষমাও চাইতে হবে। পাশাপাশি তারা কোন ষড়যন্ত্র থেকে এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন সে বিষয়টিও পরিষ্কার করতে হবে। যাতে বাংলাদেশের বই মেলায় ভারতীয় বই ও প্রকাশকদের আগমন ঠেকাতে আনিসুল হকদের কার্যক্রম আমরা যথাসময়ে বন্ধ করতে পারি।

তবে আলাপ করলে একটি বড় প্রকাশনী সংস্থার প্রধান জানান, একুশে বইমেলায় ভারতীয় বই প্রবেশের বিষয়টি অনেক প্রকাশকই মানে না। এ বিষয়ে যত ষড়যন্ত্র হোক, প্রতিরোধ করতে হবে।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন