এদেশের মানবাধিকার কর্মীরাও নির্যাতনের সহযোগী হয় : আসিফ নজরুল
![Icon](https://banglaoutlook.org/uploads/settings/bo-iconicon-2-1719757003.png)
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:০৫ পিএম
![এদেশের মানবাধিকার কর্মীরাও নির্যাতনের সহযোগী হয় : আসিফ নজরুল](https://banglaoutlook.org/uploads/2024/02/25/Screenshot_2024-02-25_at_11_04_58.png)
"এদেশের মানবাধিকার কর্মীদের অধিকাংশ আওয়ামী লীগ ও সেকুলারপন্থী, তারা দাড়িওয়ালাদের 'কম মানুষ' মনে করে" 'বাংলা আউটলুক' এর অনলাইন টকশোতে এমন মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল। 'রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও রাষ্ট্র' নিয়ে জার্মান ভিত্তিক বাংলা নিউজ মিডিয়া 'বাংলা আউটলুক' এর নিয়মিত আয়োজন "বাংলা আউটলুক : দিলশানার প্রশ্ন"।
এবারের আলোচনার বিষয় ছিল 'একুশে বইমেলা, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে 'আমি আবু বকর'। উপস্থাপক দিলশানা পারুলের সঞ্চালনায় আলোচনার অতিথি হিসেবে ছিলেন লেখক ও শিক্ষক অধ্যাপক আসিফ নজরুল। আলোচনায় একুশে বইমেলায় তার লেখা উপন্যাস "আমি আবু বকর" এর উপজীব্য এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে লেখক কথা বলেন।
আলোচনায় বর্তমান মানবাধিকার কর্মীদের একপাক্ষিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। ক্যাম্পাস ও সারাদেশে বিরোধী দল দমন নিপীড়নের সাথে মানবাধিকার কর্মীরাও পরোক্ষভাবে দায়ী। তারা শুধু সেকুলার বা লীগের কেউ নির্যাতিত হলে কথা বলে বিপরীত মত হলে প্রতিবাদ করে না বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, 'আগে যখন বিএনপির আমলে ছাত্রলীগ বা বামপন্থী সংগঠনের কাউকে মারা হতো তখন তাদের পক্ষে মানবাধিকার কর্মীরা কথা বলতেন, তাদের পক্ষে পত্র-পত্রিকায় লেখা হতো। অর্থাৎ অন্যায় ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ধারা ছিল। এখন এসব ঘটনায় আমি ছাড়া কেউ কথা বলে না, সাধারণ মানুষ না বললে সমস্যা নেই, কিন্তু মানবাধিকার কর্মী কথা বলবে না কেন। ক্যাম্পাস গুলোতে সবচেয়ে বেশি ব্যপ্তিময় সিস্টেমেটিক টর্চার যার সাথে হল প্রশাসন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, ছাত্র সংগঠন, সাংবাদিক, পুলিশ প্রশাসন ও মানবাধিকার কর্মীরাও জড়িত। মানবাধিকার কর্মীর এটা চোখে পড়ে না কেন? তাহলে আপনি বলেন আমি মানবাধিকার কর্মী না, আমি শুধু আওয়ামী লীগ বা বামপন্থী কেউ নির্যাতনের শিকার হলে তাদের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলি। ক্লিয়ার করে বলেন আমি খন্ডিত মানবাধিকার কর্মী।"
আলোচনায় আওয়ামী লীগের ট্যাগ বা অপবাদ দিয়ে ভিন্নমত দমন এমনকি মেরে ফেলার রাজনীতি নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি। আসিফ নজরুল বলেন, 'অপবাদ বা ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি নিয়ে বই লিখলে ৭১ সনে পাকিস্তানিরা যেটা করেছে তারপরে সবচেয়ে বেশি করেছে আওয়ামীলীগ। আওয়ামীলীগ আমলে ট্যাগ দিয়ে অত্যাচার করা হয়েছে। ট্যাগ বেশি দেওয়া হচ্ছে জামাত ও বামপন্থীদের। মুক্তিযুদ্ধের সেকেন্ড ইন কমান্ড এ কে খন্দকার ওনাকেও ট্যাগ দেওয়া হয়েছে, বঙ্গবন্ধু সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহচর সাংবাদিক মূসা ভিন্নমত পোষণ করেছিল তাকেও ট্যাগ দিয়েছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ মুক্তিযুদ্ধের বড় গবেষক ওনাকেও ট্যাগ দিয়েছে। ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি আওয়ামী লীগ করেছে। ট্যাগ দিয়ে মারার সিস্টেমটা এটা আওয়ামী লীগের এই আমলের সৃষ্টি।"
বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরোধী ছাত্র সংগঠন বা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ভিন্নমত, শিবির ট্যাগ দিয়ে মেরে ফেলার যে নৃশংস সংস্কৃতি সেই বিষয়বস্তু নিয়েই এবারের তার উপন্যাস "আমি আবু বকর"। উপন্যাসের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যালয়গুলোতে সরকার গত ১৫ বছর ধরে নিপীড়ন ও নির্যাতন এমনকি হত্যার মত জঘন্য অপরাধ সংগঠিত করতো সেটা তুলে ধরেছেন। উল্লেখ্য উপন্যাসের চরিত্র আবু বকর ২০১০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সংঘষে মারা যান। প্রথম আলোর তথ্য অনুযায়ী 'আবু বকর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি ২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে স্যার এ এফ রহমান হলে সিট দখল নিয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের সময় আহত হয়ে এক দিন পর মারা যান। ওই সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হন। আইন বিভাগের আহত ছাত্র ওমর ফারুক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। পরবর্তী মামলার সকল আসামী ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতা-কর্মীর সবাই বেকসুর খালাস পেয়েছেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যাগ দিয়ে হত্যার রাজনীতি নিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, 'দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এই ঘটনায় অনেকগুলো অমানবিক দিক আছে। একটা মানুষ শিবির কি শিবির না এটা বিবেচ্য বিষয় না, সন্দেহ করে পিটিয়ে হাড্ডিগুড্ডি ভেঙ্গে দিচ্ছেন। আরো অমানবিক হচ্ছে যারা মারছে তারাই আবার যাকে মারছে তাকে পুলিশে দিচ্ছে। পৃথিবীর যে কোন দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলে যারা মেরেছে তাকে গ্রেফতার করার কথা কিন্তু পুলিশ উল্টো ভুক্তভোগীকে আটক করে। এটার কোন ব্যতিক্রম নাই, সাগৌরবে মেরে পুলিশে সোপর্দ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টররা এগুলো জাস্টিফাই করছে। পত্রিকাগুলো নিউজ করছে কিন্তু ক্ষমতাশীল ছাত্র সংগঠনকে জিজ্ঞেস করছে না, সন্দেহে মারার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে। প্রক্টরকে প্রশ্ন করে না যারা পিটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন। পুলিশকে জিজ্ঞেস করে না যারা মেরেছে তাদেরকে কেন গ্রেফতার করছে না। এই প্রশ্নই সমাজ থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। এত বড় অমানবিক অপরাধ চারটি পর্যায়ে অন্যায় হচ্ছে। আরেকটা বড় অন্যায় হচ্ছে আমাদের এখানের বড় বড় মানবাধিকার কর্মীরা এটা নিয়ে কোন কথা বলে না।'