এক স্টল থেকে অন্য স্টলে পাঠক
এক স্টল থেকে অন্য স্টলে পাঠক
প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৯ এএম
এক স্টল থেকে অন্য স্টলে পাঠক
বইমেলার ষষ্ঠ দিনে মেলার উপচে-পড়া ভিড় না থাকলেও মেলা জুড়ে বইপ্রেমী ও পাঠকদের ছোটাছুটি দেখা গেছে। তারা এক স্টল থেকে অন্য স্টলে প্রিয় লেখদের খোঁজে ঘুরে ফিরেছেন। কারণ, প্রিয় লেখকদের একটি বড় অংশ জুড়ে নতুন বই মেলাতে আসে। বাকি মাসগুলোতে খুব একটা নতুন বই থাকে না বললেই চলে।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) পাঠকের উপস্থিতি কম থাকলেও কিছু স্টলে-প্যাভিলিয়নে পাঠকদের ভিড় দেখা গেছে। অন্যধারা, অন্যপ্রকাশ, প্রথমা, ঐতিহ্য, কিছুটা ভিড় ছিল।
বই বিক্রি ও মেলা নিয়ে সন্তুষ্ট অনন্যা প্রকাশনীর প্রকাশক মনিরুল হক। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩৩ বছর অভিজ্ঞতা থেকে মনে হচ্ছে এবারের মেলাতে ভালো বিক্রি হবে। তাছাড়া মেলাতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে মেট্রোরেল। যার ফলে দূর-দূরান্ত থেকেও লোক এখন অনায়াসে মেলাতে আসতে পারবে, যেটির প্রভাব ইতোমধ্যে মেলাতে পড়তে শুরু করেছে।
তিনি আরো বলেন, এবার মেলাতে সবমিলিয়ে ১০০ নতুন বই আসবে। এর মধ্য ৯৫টি চলে এসেছে এবং বাকি পাঁচটি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আসবে।
বইয়ের মান প্রসঙ্গে এই প্রবীণ প্রকাশক বলেন, এখনকার লেখকেরা পড়ে না; যার ফলে মানসম্মত গ্রন্থ পাওয়া যায় না। এখন লেখা বইয়ের সংখ্যা বাড়লেও মান বৃদ্ধি পায় নি।
এদিকে গতকাল (৫ ফেব্রুয়ারি) মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছল সার্ধশত জন্মবার্ষিক শ্রদ্ধাঞ্জলি: মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাসুদ রহমান। প্রাবন্ধিক মাসুদ বলেন, মানোত্তীর্ণ সাহিত্যসৃষ্টির সমূহ প্রতিভা ছিল মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরীর। মাত্র ঘাট বছরের জীবনে তার যে সাধনা ও কীর্তি, তা তাঁকে বাঙালির নবজাগরণের ইতিহাসে স্মরণীয়জনের আসন দিয়েছে। একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক, সাংবাদিক-সম্পাদক, সংগঠক ও রাজনীতিক হিসেবে তিনি বরেণ্য। তাঁর জীবনবৃত্তের পুরো তথ্য চয়ন ও বিশ্লেষণ করলে শুধু মুসলিম সম্প্রদায় বা পূর্ববাংলার নয়, হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে তাকে একজন যথার্থ রেনেসাঁ-অনুধ্যায়ী পুরুষ ও প্রকৃত বুদ্ধিজীবী হিসেবে শনাক্ত করা সম্ভব।
এছাড়া আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইসরাইল খান এবং তপন বাগচী। আলোচকবৃন্দ বলেন, মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরীর বড়ো পরিচয় হলো সাময়িকপত্র সম্পাদনা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত প্রগতিশীল চিন্তাভাবনার অধিকারী। তৎকালীন সময়ে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও নৈতিক মূল্যবোধ-সম্পন্ন রওশন আলী চৌধুরী সাহিত্যচর্চায় মানুষকে উৎসাহী করে তোলার জন্য আজীবন পরিশ্রম করেছেন। আমাদের সাহিত্যের অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি।
সভাপতির বক্তব্যে সাইফুল আলম বলেন, মোহাম্মদ রওশন আলী চৌধুরী একাধারে একজন লেখক, সংগঠক, রাজনীতিবিদ এবং সম্পাদক ছিলেন। তিনি নিজে যেমন লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তেমনি লেখক-সাহিত্যিকদের একত্রিত করেছেন, সংঘবদ্ধ করেছেন। তাঁর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে অবগত করার দায়িত্ব আমাদের যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
অন্যদিকে মেলার লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি নাসির আহমেদ, কবি ইসলাম রফিক, শিশুসাহিত্যিক চন্দনকৃষ্ণ পাল এবং লোকসাহিত্য গবেষক সৈয়দা আঁখি হক।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি রবীন্দ্র গোপ, সরকার মাসুদ এবং মাসুদ পথিক। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রেজিনা ওয়ালী, সাফিয়া খন্দকার রেখা এবং শামস্ মিঠু। দলগত আবৃত্তি পরিবেশন করেন ফয়জুল আলম পাস্তুর পরিচালনায় আবৃত্তি সংগঠন প্রকাশ সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ। এছাড়া ছিল কবিরুল ইসলাম রতনের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘নৃত্যালোক’ এবং জুয়েল কুমার সরকারের পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন নৃত্য নিকেতনের নৃত্য পরিবেশনা।