Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

তামাক মহামারি এখনও বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী হুমকি

Icon

ড. টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস ও ড. আদ্রিয়ানা ব্ল্যাঙ্কো মারকুইজো

প্রকাশ: ০২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৮ পিএম

তামাক মহামারি এখনও বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী হুমকি

গত ২০ বছরে বিশ্বব্যাপী তামাক ব্যবহারের হার এক-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। বর্তমানে ২০০৫ সালের তুলনায় ১১৮ মিলিয়ন কম মানুষ তামাক ব্যবহার করে।

এই সাফল্যের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (WHO FCTC)। দীর্ঘ আলোচনার পর ২০০৩ সালে এই ঐতিহাসিক চুক্তিটি গৃহীত হয় এবং ২০০৫ সালে কার্যকর হয়। এটি ছিল WHO-এর অধীনে প্রথম আন্তর্জাতিক চুক্তি, যা তামাকের চাহিদা ও সরবরাহ কমানোর জন্য ব্যাপক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেছে।

বিশ্বব্যাপী তামাক নিয়ন্ত্রণের বর্তমান অবস্থা

১৮৩টি দেশ এই চুক্তির সদস্য, যা বিশ্বের ৯০% জনসংখ্যাকে কভার করে।

৫.৬ বিলিয়নের বেশি মানুষ অন্তত একটি তামাক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার সুরক্ষার আওতায় এসেছে।

১৩৮টি দেশ সিগারেটের প্যাকেটে বড় আকারের স্বাস্থ্য সতর্কীকরণ চিত্র বাধ্যতামূলক করেছে।

অর্ধশতাধিক দেশ ব্র্যান্ডবিহীন প্যাকেজিং নীতি গ্রহণ করেছে, যা তামাকজাত পণ্যকে কম আকর্ষণীয় করে তুলছে।

 ৬৬টি দেশ তামাকের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও স্পন্সরশিপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে।

 বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠী ধূমপানের বিরুদ্ধে কঠোর আইন দ্বারা সুরক্ষিত।

তামাকজাত পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা এটির ব্যবহার কমানোর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

তামাকবিরোধী আইন ও চ্যালেঞ্জ

২০১৮ সালে তামাকজাত পণ্যের অবৈধ বাণিজ্য বন্ধের জন্য নতুন একটি প্রটোকল কার্যকর হয়। কারণ অবৈধ তামাক ব্যবসা স্বাস্থ্যনীতিকে বাধাগ্রস্ত করে, কর রাজস্ব কমায় এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বাড়ায়।

তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য ঝুঁকি

তামাক এখনো বিশ্বের অন্যতম প্রধান প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর কারণ। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগ ও ডায়াবেটিসের অন্যতম বড় কারণ।

বিশ্বে এখনো ১.৩ বিলিয়ন মানুষ তামাক ব্যবহার করছে।

 তামাক শিল্প বহু বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা, যা নেশা সৃষ্টি করে মানুষের ভোগান্তি থেকে মুনাফা লুটে নেয়।

সিগারেট বিক্রির পতন ঠেকাতে তামাক কোম্পানিগুলো ই-সিগারেটের মতো নতুন পণ্য বাজারজাত করছে, যা বিপজ্জনকভাবে ক্যান্সার ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

বিশ্বের মাত্র ৫৬টি দেশ ২০২৫ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহার ৩০% কমানোর লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে।

তামাক কেবল স্বাস্থ্য সমস্যা নয়, এটি অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত হুমকি

বিশ্ব অর্থনীতিতে ধূমপানের খরচ ১.৮% জিডিপি (GDP) পর্যন্ত পৌঁছেছে।

বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৪.৫ ট্রিলিয়ন সিগারেটের অবশিষ্টাংশ ফেলা হয়, যা প্লাস্টিক দূষণের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎস।

তামাক চাষে কৃষিজমি ও বিশুদ্ধ পানি নষ্ট হয়, যা খাদ্য উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যেত।

প্রতি বছর তামাক উৎপাদন ও ব্যবহারের ফলে ৮০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাসে মিশে যায়, যা জলবায়ু পরিবর্তনকে আরও ত্বরান্বিত করছে।

তামাকবিরোধী আইন কার্যকরের প্রয়োজনীয়তা

তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার চুক্তিটি এখনো ততটাই গুরুত্বপূর্ণ, যতটা এটি ২০ বছর আগে ছিল। তবে এর বাস্তবায়ন এখনো সব দেশে সমানভাবে হয়নি।

তামাক কোম্পানির প্রচারণা প্রতিরোধে আরও কঠোর আইন প্রয়োজন।

সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রচলিত মিডিয়ায় তামাকের বিজ্ঞাপন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য নীতিকে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ থেকে রক্ষা করতে হবে।

তামাক নিয়ন্ত্রণের পুরো নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশগুলো তাদের জনগণের স্বাস্থ্য, অর্থনীতি ও পরিবেশ রক্ষা করতে পারবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তামাকমুক্ত রাখতে পারবে। (আল জাজিরা থেকে অনুবাদ)


ড. টেড্রোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মহাপরিচালক।

ড. আদ্রিয়ানা ব্ল্যাঙ্কো মারকুইজো একজন চিকিৎসক, যিনি লাতিন আমেরিকান সেন্টার অব হিউম্যান ইকোনমি (CLAEH) থেকে শিশু ও কিশোরদের মধ্যে আসক্তি প্রতিরোধের নীতিমালা বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।


Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: banglaoutlook@gmail.com

অনুসরণ করুন