কী চায় বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়, এখন কেন রাস্তায় তারা
“হিন্দু সম্প্রদায় কথা বললে তাতে রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়া কিংবা অন্য দেশকে টেনে আনা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলো উপেক্ষার পুরনো কৌশল। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে সাথে নিয়ে এগুতে হবে—এটাই আমরা বলতে চাইছি, বললেন চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রক্ষ্মচারী। শুক্রবার চট্টগ্রামের লালদীঘিতে মহাসমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন তিনি।
ওই সম্মেলনে সনাতন সম্প্রদায় আট দফা দাবি আদায় ঘোষণা করে। এই দাবি আদায়ের জন্যই ওই সমাবেশে করেছে তারা যা নিয়ে এখন নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে বিভিন্ন মহলে।
বিশেষ করে সমাবেশ থেকে দাবি আদায়ের জন্য ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের যে ঘোষণা দিয়েছে সেটা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সমাবেশের আয়োজকরা দাবি করেছেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুপরিচিত সংগঠনগুলোর বাইরে সাধুসন্তদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হওয়ায় এবারের সমাবেশের লোকসমাগম গণমাধ্যমের দৃষ্টি কেড়েছে। একই কারণে তাদের বক্তব্যগুলোও আলোচনায় এসেছে বলে মনে করেন তারা।
চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রক্ষ্মচারী বলেছেন, তাদের বিষয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান তারা। “আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এটা সাধুসন্তদের আন্দোলন। এটি সরকার বা কোনো দলের পক্ষে বা বিপক্ষে নয়। সংবিধান, আইন-কানুনসহ সবকিছুতে সাম্য ও অসাম্প্রদায়িকতা চাই আমরা, যাতে সবাই সমান মর্যাদা পেতে পারি।”
সনাতন জাগরণ মঞ্চের একজন সমন্বয়ক কাঞ্চন আচার্য। তার ভাষায়, “গত ৫৩ বছরে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হওয়া হামলা-নিপীড়নের একটি ঘটনারও বিচার হয়নি।”
তবে এখন সরকারকে চাপে ফেলতে কিংবা আওয়ামী লীগকে সুযোগ করে দিতে তারা মাঠে নেমেছেন বলে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়েছে, যা প্রত্যাখ্যান করেছেন চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রক্ষ্মচারী। “হিন্দু সম্প্রদায় কথা বললে তাতে রাজনৈতিক ট্যাগ দেয়া কিংবা অন্য দেশকে টেনে আনা সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনাগুলো উপেক্ষার পুরনো কৌশল,” বলেন তিনি।
আট দফা
আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে সংখ্যালঘু নির্যাতনে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ, পুনর্বাসন এবং অবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন অন্যতম।
২০২১ সালে দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার একটা পূজামণ্ডপে কোরআন পাওয়ার অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে মন্দির-মণ্ডপে হামলার ঘটনা ঘটে। তাছাড়া এমন আরও অনেক ঘটনা প্রায়ই ঘটে।
চিন্ময় কৃষ্ণদাস ব্রক্ষ্মচারী বলেন, “আমাদের ধর্মের অনুভূতিতে আঘাত করলে জামিন পায়। আর হিন্দু ধর্মীয় অনুভূতির কথা বলে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। আমরা কিছু বললে আমাদের একটি দলের ট্যাগ দেওয়া হয়। অন্য দেশের ট্যাগ দেয়া হয়।”
আট দফার অন্য দাবির মধ্যে আছে—সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীতকরণ, দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপাসনালয় নির্মাণ ও হোস্টেলে প্রার্থনা রুম , সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন এবং দুর্গাপূজায় পাঁচ দিন ছুটি। সূত্র: বিবিসি