Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

আমাদের সমাজ-রাজনীতি কোথায়

লজ্জার সভ্যতায় গণঅভ্যুত্থান

তারেক খান

তারেক খান

প্রকাশ: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:১২ পিএম

আমাদের সমাজ-রাজনীতি কোথায়

সুখের ধারণা জনে জনে ভিন্ন বটে। জৈবিক-মানসিক পার্থক্য আছেই। তবু নির্দ্বিধায় স্বীকার করতে হয়, কেউ যখন অসুস্থ হয় তখন তাকে অন্যের কাছে যেতে হয়। শুধু টাকা দিলেই ভালো সেবা মেলে না। যার সেবা নেব তার মনে সুখ থাকা চাই। ধরা যাক তারা হলো ডাক্তার উকিল প্রকৌশলী। এনজিওকর্মী আর ব্যবসায়ীরাও সেবা দেয়। তারা কিসে সুখী হয় তা বুঝতে হবে। তাদের সুখ নিশ্চিত করতে হবে।

কিভাবে করা যায়?

নানা অনুষঙ্গে উত্তর খুঁজতে পারি। উত্তর খুঁজব সমস্যা বোঝাপড়ার মধ্যে।

মনে রাখা যাক, অসুখী হবার পেছনে স্বেচ্ছাচার, অতিলোভ, অসততা, অসুস্থতা ইত্যাদি থাকতে পারে।

কতকগুলো পেশা ব্যাপকভাবে বিতর্কিত বাংলাদেশ সমাজে। তাদের অবস্থা ও অবস্থান সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা শোষণের মধ্য দিয়ে অসুখ সৃষ্টি করেছে কিন্তু তাদের বাদ দিলে এই সমাজ অচল। তাদের জীবীন-জীবিকা মোটেও ঝুঁকিতে পড়েনি বৈষম্যবিরোধী গণঅভুত্থানে। কিন্তু তারা সুখেও নেই। শোষণ করতে গিয়ে তারা আগে একধরনের সংকটে পড়ত, অভুত্থানের পর তারা আরেকধরনের সংকটে পড়ছে। আগে তারা পাপের ভয়ে সংকুচিত হয়ে পড়ত, দ্বিাধাগ্রস্ত জীবন যাপন করত। সেই সঙ্গে অভুত্থানের পর যোগ হয়েছে ছাত্র-জনতার হাতে অপদস্থ হবার ভয়। কিন্তু শোষণ তাদের নেশা। দরকার না হলেও, শোষণ না করলে তাদের দম বন্ধ হয়ে যায়, যা মূলত অসুস্থতা। তাদের শরীর-মন দু-ই ভঙ্গুর। কারণ তারা যেখানে বেড়ে ওঠে সেই সমাজটাই নড়বড়ে। হিপোক্রিট। কপটচারীতে ভরপুর।

যেমন ধরুন ঘুষ। একজন ঘুষ নিলে অন্যজন নিন্দে করে। কিন্তু মনে মনে হিংসে করে। ধারও চায়। না দিলে ক্ষুব্ধ হয়। দিলে নেয় কিন্তু ফেরত দিতে গিয়ে ঝামেলা পাকায়। বলতে পারেন ঘুষ আর কয়জনইবা নেয়। কিন্তু ঘুষ দিতে চায় না এমন লোক দুর্লভ। সহজে কাজ হলে ঘুষ দিতে রাজি প্রায় সবাই।

বিয়ের কথা ধরা যাক। নিজের ওপর আস্থা নেই। পরস্পরে বিশ্বাস নেই। তারা কাগজের ওপর ভরসা রাখে। সেই কাগজ নিয়ে উভয়পক্ষ আদালতে ছুটোছুটি করে। গলদঘর্ম হয়। কাগজ না থাকলে আবার একপক্ষ শোষিত হয়।

গণঅভ্যুত্থানের পর রাঘববোয়ালদের দুর্নীতির খবর নিয়ে সবাই সরগরম। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের আগেও গণমাধ্যমে প্রায়ই হইচই হয়েছে তা নিশ্চয় ভুলে যান নাই। তখন অভিযোগ ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে। তারা ক্ষমতাচ্যুত হবার সঙ্গে সঙ্গে বিএনপিনেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসতে শুরু করে। দেশব্যাপী বিএনপি নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজি শুরু করে দেয়। অথচ তারা কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় নাই। আন্দোলনের একেবারে শেষ মুহূর্তে তারা এসেছে যখন বিজয়ের আলো ফোটার অপেক্ষায়।

অন্যদিকে যারা তাদের জীবন বাজি রেখে বিশ চব্বিশের গণঅভুত্থান সফল করেছে তারাও অসুখী শ্রেণি। তারা সুখের খোঁজে জীবন বাজি রেখেছে। তাদের মধ্যে আছে প্রধানত চাকরিপ্রার্থী ও হাসিনাবিরোধী।

হাসিনাবিরোধীরা অন্তত চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত। তারা (১) নির্যাতিত শ্রেণি যারা গুম-হত্যা ও জেল-জুলুমের শিকার হয়েছে (২) বিভ্রান্ত শ্রেণি যারা আর্থিক মন্দার মুখে পড়েছে যার জন্য তারা হাসিনা দায়ী বলে মনে করেছে (৩) ক্ষমতালোভী বা হাসিনার প্রতিদ্বন্দ্বী (৪) মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা করতে চায় যারা।

তাদের অভ্যুত্থান হয়েছে হঠাৎ করে। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে হঠাৎ করে।

উত্থান থেকে অভ্যুত্থান।

বাংলাদেশে মানুষের জীবন নানা রকম উত্থান-পতনের সঙ্গে পরিচিত। সেখানে সাধারণত কী দেখা যায়? (চলবে)

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন