Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

ছাত্র আন্দোলনে গুলি

বিজিবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত

মুক্তাদির রশীদ

মুক্তাদির রশীদ

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৪, ১০:১৫ এএম

বিজিবি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত

জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশে (বিজিবি) কর্মরত লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদওয়ানুল ইসলামকে ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে অ্যাসল্ট রাইফেল ব্যবহার করতে দেখা যায়। 

আন্দোলন চলাকালীন একটি আর্ম পার্সোনাল ভেহিকেলের পাশে দাঁড়িয়ে রেদওয়ানের  গুলি চালানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।  তবে তার ছোড়া গুলিতে কেউ নিহত হয়েছে কিনা এটা নিশ্চিত না করা যায়নি। 

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদওয়ানকে তার নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাকে প্রশাসনিকভাবে সংযুক্ত করে ইতিমধ্যে তদন্তের আওতায় নেওয়া হয়েছে। 

বিজিবি প্রধান জানান, ভিডিওটা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তাকে মাঠ থেকে প্রত্যাহার করেন । 

গত ১৫ আগস্ট পর্যন্ত, বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদওয়ান বিজিবিতে কর্মরত ছিলেন, কেননা তাকে মাতৃবাহিনী সেনাবাহিনীতে ফেরত নেওয়ার ক্ষমতা বিজিবি কর্তৃপক্ষের হাতে নেই।

বিজিবির গোপনীয় প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৮ জুলাই বেলা আড়াই থেকে ৩টার মধ্যে ১০-১৫ হাজার দুর্বৃত্ত (এদের মধ্যে তেমন কোনো ছাত্রই দেখা যায়নি) রামপুরায় বিটিভি ভবন আক্রমণ করে। 

লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল ও পেট্রোল হাতে সশস্ত্র এই দলটি বিটিভি ভবনের প্রধান দুটি ফটক ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে মূল ভবনে ভাংচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। ওই সময় আনুমানিক ১০ হাজার লোক বিটিভি ভবন এলাকা ঘেরাও করে রাখে। সে সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেডের মাধ্যমে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুললেও দুষ্কৃতকারীদের বিপুল জনবলসহ চারদিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণে তারা পিছু হটে মালিবাগ এলাকায় সরে যায়। 

এই সময় সরকারের ঊর্ধ্বতন অসংখ্য কর্তৃপক্ষ থেকে বিজিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়, যেন বিটিভি ভবনের বাকি অংশ রক্ষা করে দুর্বৃত্তদের সরিয়ে দেওয়া হয় এবং বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবন বাঁচানো হয়। একই সাথে এটাও নির্দেশের মধ্যে উল্লেখ করা হয় যে, উক্ত নির্দেশ পালনে বিজিবির কোনো ধরনের শিথিলতা কিংবা ব্যর্থতা গ্রহণ করা হবে না। 

বিজিবির প্রতিবেদন দাবি করে, বিকাল আনুমানিক ৫টায় বিজিবি প্রথম টহল দলটি উক্ত এলাকায় গমন করলে প্রচণ্ড বাধার সম্মুখীন হয়। দুষ্কৃতকারীরা হাতিরঝিল থেকে রামপুরা বিটিভি ভবনে গমনের রাস্তায় বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য ব্লকেড স্থাপন করে রাখে। ব্লকেডসমূহ সরিয়ে বিটিভি ভবনের দিকে গমনের সময় বিজিবি সদস্যরা বৃষ্টির মতো ইট-পাটকেল, লাঠিসোটা এবং অন্যান্য আঘাতের সম্মুখীন হলেও তা সহ্য করে কোনো প্রকার ফায়ার ছাড়া সম্মুখে অগ্রসর হয়, যা সংযুক্ত ভিডিও এবং চিত্রে প্রতীয়মান। উক্ত স্থানে দুষ্কৃতকারীরা দাবি উত্থাপন করে এবং ১৫ মিনিটের আল্টিমেটাম দিয়ে বলে, বিজিবি সদস্যরা কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করে যেন উক্ত স্থান ত্যাগ করে করে চলে যায়। 

এক পর্যায়ে দুষ্কৃতিকারীরা বিজিবি সদস্যদের সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ করলে উক্ত দলটি ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশক্রমে ফাঁকা গুলি করে বিটিভি ভবনের দিকে এগিয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যে বিটিভি ভবনের ভিতর থেকে প্রাথমিকভাবে দুষ্কৃতকারীদের বিতাড়িত করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজার হাজার দুষ্কৃতকারীরা বিজিবি টহলদলকে বিটিভি ভবনের অভ্যন্তরে অবরুদ্ধ করে ফেলে। 

দুষ্কৃতকারীদের আর একটি দল সংঘবদ্ধভাবে হাতিরঝিলে অবস্থিত বিজিবি দলকে বহনকারী গাড়িসমূহে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং উক্ত স্থানে বিজিবির বেশ কয়েকটি গাড়ি অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের সম্মুখীন হয়। এ ঘটনায় উক্ত স্থানে চালকসহ দুইজন বিজিবি সদস্য গুরুতর আহত হন। 

বিটিভি ভবনে অবস্থানকারী বিজিবি টহল দলটি বারংবার দুষ্কৃতকারীদের সাথে আলোচনা ও প্রেষণার মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করলেও দুষ্কৃতকারীরা বিজিবি টহলদলটিকে প্রবল চাপের মুখে বিটিভি ভবন এলাকার একপাশে অবরূদ্ধ করে। বিটিভি ভবনের বিভিন্ন স্থানে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর চালাতে থাকে।

প্রতিবেদনে জানা যায়, দুষ্কৃতকারীরা অবরুদ্ধ বিজিবি টহলদলকে একপর্যায়ে পুনরায় সর্বশেষ ৩০ মিনিট সময় দিয়ে জীবন নাশের হুমকি প্রদান করে। এ অবস্থায় বিজিবির প্রথম দলটিকে উদ্ধারের জন্য উক্ত সময়ে দ্বিতীয় অভিযানিক দলটি শনির আখড়া থেকে চারটি এপিসি এবং ছয়টি প্লাটুনসহ উক্ত স্থানে পৌঁছায়। বিজিবির দ্বিতীয় আভিযানিক দলটি হাতিরঝিল এলাকায় পৌঁছানোর সাথে সাথে দুষ্কৃতকারীরা উক্ত আভিযানিক দলের উপর চড়াও হয়ে দুটি এপিসি দখল করার চেষ্টা করে ও একটি এপিসিতে অগ্নিকান্ড ঘটায়। প্রবল বাধার মুখে এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মধ্যেও উক্ত দলটি প্রায় এক ঘন্টা ধৈর্যধারণ করে উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে মাইকিং করে আলোচনার মাধ্যমে নিবৃত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। সে সময় উক্ত স্থানে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার করলে দুষ্কৃতকারীরা কিছুটা দূরে সরে গিয়ে চারপাশ থেকে বড় আকারের ইট-পাটকেল ও পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করতে থাকে এবং আরো অধিক জনবল নিয়ে আভিযানিক দলটিকে চারদিক থেকে ঘেরাও করে বিটিভি ভবনের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। সে সময় দুষ্কৃতকারীরা উক্ত স্থানে অবস্থিত ছয়-সাতটি বাসেও অগ্নিসংযোগ করে। 

একই সময়ে প্রথমে আগমনকারী আভিযানিক দলটিকে উদ্ধারের জন্য দ্বিতীয় দলের অধিনায়ককে (লে. কর্নেল রেদওয়ান) নির্দেশ দেওয়া হয়। সার্বিক বিপৎসংকুল অবস্থা বিবেচনায় ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশক্রমে দুষ্কৃতকারীদের লক্ষ করে প্রথমে বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা ফায়ার দিলেও তারা বিন্দুমাত্র কর্ণপাত না করে আরও সহিংসতা শুরু করে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে ম্যাজিস্ট্রেট দুষ্কৃতকারীদের লক্ষ করে শরীরের নিম্নাংশে  গুলির নির্দেশ দিলে  অধিনায়ক দুই-তিন রাউন্ড গুলি করেন। 

লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদওয়ানকে পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদ সাপেক্ষে জানা যায়, তিনি এইম করে ফায়ার করেছেন যেন সহিংস দুষ্কৃতকারীর পায়ে গুলি লাগে, যেন বুকে বা শরীরের উপরের কোনো অংশে গুলি লেগে নিহত না হয়।

উল্লেখ্য, সে ঘটনায় কোনো ছাত্র কিংবা দুষ্কৃতকারী টিভি ভবন এলাকায় নিহত হয়নি।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন