আমেরিকায় ট্রাম্পের ওপর হামলার পর ইউরোপজুড়ে আতঙ্ক
মেসন বয়কট ওয়েন
প্রকাশ: ১৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৩ এএম
আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর হামলার পর থেকে ইউরোপজুড়ে ডান-বাম সব রাজনীতিবিদ আতঙ্কে ভুগছেন। এই হামলার মধ্য দিয়ে তারা তাদের নিজ দেশে ক্রমবর্ধমান বিপদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছেন। ট্রাম্প যখন মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে আসেন তখন ইউরোপীয় নেতাদের বার্তাটি এ রকম: এমন হামলা যদি আমেরিকায় হতে পারে তাহলে তা ইউরোপেও হতে পারে।
ফ্রান্সের চরম ডানপন্থী নেতা মেরিন লে পেন বলেছেন, ‘ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টা সহিংসতার প্রতীক, যা আমাদের গণতন্ত্রকে দুর্বল করেছে।’ তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন, ‘ফ্রান্সও এই সহিংসতা থেকে নিরাপদ নয়।’
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি বলেছেন, ‘সারা বিশ্বে এমন সীমা রয়েছে যা কখনোই অতিক্রম করা উচিত নয়। রাজনীতির মর্যাদা ও সম্মান পুনরুদ্ধার করার জন্য, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা-নির্বিশেষে সকলের জন্য ট্রাম্পের উপর এই হামলা একটি সতর্কবাণী।’
সহিংসতা ও রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ইউরোপে আর অস্বাভাবিক নয় বলে নেতারা মনে করছেন।
ইউরোপীয় রাজনীতিবিদরা স্মরণ করেন, গত মে মাসে স্লোভাক প্রধানমন্ত্রী রবার্ট ফিকো বেশ কয়েকবার গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হন। তার উপর এই হামলা ছিল স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
গত মাসে ডেনিশ প্রধানমন্ত্রী মেট ফ্রেডেরিকসেন কোপেনহেগেনের রাস্তায় হাঁটার সময় এক ব্যক্তি তাকে আঘাত করে। এতে তিনি বেশ আহতন হন।
জার্মান রাজনীতিবিদদের উপরও সহিংস হামলা হয়েছে। গত মাসেই ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনের নেতৃস্থানীয় সমাজতান্ত্রিক প্রার্থী ম্যাথিয়াসের উপর আক্রমণ হয়। তিনি প্রচারণার পোস্টার লাগানোর সময় আক্রান্ত হন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যে গত আট বছরে দুইজন এমপি খুন হয়েছেন। লেবার এমপি জো কক্স ২০১৬ সালে ইইউ গণভোটে প্রচারের সময় একজন নব্য-নাৎসির হাতে নিহত হন। ২০২১ সালে কনজারভেটিভ এমপি ডেভিড আমেসকে ইসলামিক স্টেট গ্রুপের লোকজন ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
ট্রাম্পের উপর হামলার কয়েক ঘন্টা আগে যুক্তরাজ্য হাউস অফ কমন্সের স্পিকার লিন্ডসে হোয়েল বলেছিলেন, ‘আরো একজন এমপি খুন হতে পারেন এই দুশ্চিন্তায় আমি সারা রাত জেগে ছিলাম।’ এবং ট্রাম্পের উপর হামলার আগে লিন্ডসে হোয়েল ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছিলেন, ‘আমরা চরমপন্থীদের সাথে যুদ্ধে আছি। কারণ তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না।’
ফারেজ ফ্যাক্টর
ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও যুক্তরাজ্যের ‘রিফর্ম ইউকে’ পার্টির প্রবীণ নেতা নাইজেল ফারাজ, যিনি হিংসাত্মক আচরণের শিকার হয়েছেন। রবিবার তিনি ব্রিটেনের একটি টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘আমরা মূলধারার মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় যা দেখছি তা হল—লক্ষ লক্ষ মানুষ ঘৃণার দিকে ঝুঁকছে।’
ফাইটব্যাক
দক্ষিণ ইংল্যান্ডের ব্লেনহাইম প্যালেসে ইউরোপীয় রাজনৈতিক সম্প্রদায়ের (ইপিসি) শীর্ষ সম্মেলনে বসছেন শিগগিরই। সেখানে ট্রাম্পকে হত্যাচেষ্টার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার সুযোগ আছে। ৪৭টি দেশের নেতারা আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ব্লেনহাইম প্যালেসে জড়ো হওয়ার কথা রয়েছে।
ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ‘গণতন্ত্র রক্ষা ও সুরক্ষিত করার জন্য’ ইপিসিতে তিনটি গোলটেবিল বৈঠকে হোস্ট হিসেবে থাকবেন। তার সরকার বোঝার চেষ্টা করবে নির্বাচনে প্রার্থীরা কেমন হুমকিতে ছিলেন এবং তাদের সুরক্ষার ধরন-স্তর কেমন ছিল। বিষয়টি স্টারমার সরকার দ্রুত পর্যালোচনা শুরু করবে বলে সবার প্রত্যাশা।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়েভেট কুপার বলেছেন, ‘সদ্যসমাপ্ত নির্বাচনী প্রচারণার সময় আমরা কিছু এলাকায় যে-অপমানজনক দৃশ্য দেখেছি তার পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়।’
কিছু ইউরোপীয় দেশ ইতিমধ্যে ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে রাজনীতিবিদদের রক্ষা করার জন্য নতুন আইন করেছে। স্লোভাকিয়ার আইন প্রণেতারা গত মাসে প্রধানমন্ত্রী ফিকো হত্যাচেষ্টার পর নতুন আইন পাস করেছেন, যেখানে রাজনীতিবিদদের বাড়ির কাছাকাছি বা সরকারি অফিসের কাছে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করেছেন তারা।
যুক্তরাজ্য সরকার এই বছরের শুরুর দিকে এমপিদের নিরাপত্তার জন্য অতিরিক্ত ৩ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড ব্যয়ের ঘোষণা করেছে। তবু অনেক নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদের জন্য তা যথেষ্ট নয়, যেমনটি কঠোর তাদের বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি।
চরম ডানপন্থী ডাচ ফ্রিডম পার্টির নেতা গির্ট ওয়াইল্ডার্স, যিনি হত্যার হুমকির মুখে বছরের পর বছর ধরে নিবিড় সুরক্ষার অধীনে রয়েছেন। তিনি এক্সে (টুইটার) পোস্ট করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে যা ঘটেছে, নেদারল্যান্ডসেও তা ঘটতে পারে। একে অবমূল্যায়ন করবেন না।’
(পলিটিকো ডট ইউ থেকে অনুবাদ)