যুক্তরাজ্যের ভোটে ‘ইসলাম ফ্যাক্টর’
যে দেশে দ্রুত বাড়ছে ধর্মহীনের সংখ্যা, তার চেয়ে দ্রুত কমছে খ্রিস্টান
সেন্ট্রাল লন্ডনে প্যালেস্টাইনের জন্য জাতীয় মার্চ। ছবি: এএফপি
ব্রিটিশ সমাজ মূলত ধর্মহীন। তারা বিশ্বের সবচেয়ে ধর্মনিরপেক্ষ। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস নির্ধারণের সমীক্ষায় দেখা গেছে, অজ্ঞেয়বাদ, নিরীশ্বরবাদ, নাস্তিকতা, ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদ ও ধর্ম সম্পর্কে ভাবে না এমন মানুষের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়ছে।
এই দেশে গত ১৪০০ বছরের বেশি সময় ধরে আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন অনুসারীরা। সেখানে সেল্টিক, অ্যাংলো-স্যাক্সন পৌত্তলিকতা ও বিভিন্ন রোমানো-ব্রিটিশ ধর্মের অনুসারীরা ছিলেন।
কিন্তু ২০১১ ও ২০২১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ও অতি-দ্রুতগতিতে বেড়েছে প্রথাগত ধর্মহীন মানুষের সংখ্যা। তারা নিজেদের অজ্ঞেয়বাদী, নিরীশ্বরবাদী, নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ, মানবতাবাদী বলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করেন।
২০১১ সালে প্রথাগত ধর্ম অস্বীকার করেছেন ২৫.৬৭ শতাংশ। ২০২১ সালে তাদের হার বেড়ে হয়েছে ৩৭.৭৫ শতাংশ।
বিবেচনা করার মতো বিশেষ বিষয় হচ্ছে, একই সময়ে অতি-উচ্চহারে কমেছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা।
২০১১ সালে খ্রিস্টান ছিল ৫৯.৪৯ শতাংশ। ২০২১ সালে তা কমে হয়েছে ৪৬.৫৩ শতাংশ।
অপরদিকে বেড়েছে মুসলমান ও হিন্দুর সংখ্যা।
২০১১ সালে মুসলমান ছিল ৪.৪১ শতাংশ। ২০২১ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৫.৯৭ শতাংশ। একই সময়ে হিন্দুদের সংখ্যা ১.৩২ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ১.৫৯ শতাংশ।
২০০১ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের আদমশুমারিগুলিতে ধর্মীয় আনুগত্য সম্পর্কে নিয়মিত তথ্য নেওয়া হচ্ছে। দেশটিতে ধর্মীয় আনুগত্য সম্পর্কে প্রথম তথ্য চাওয়া হয় ১৮৫১ সালে। এর পর থেকে প্রতিনিয়তই দেশটির খ্রিস্টানদের প্রথাগত ধর্মের বাইরে যেতে দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে প্রথম সরকারি আদমশুমারি হয় ১৮০১ সালে। ১৮৪১ সালের আদমশুমারি প্রথম আধুনিক আদমশুমারি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
পশ্চিমা গণমাধ্যমে ব্রিটিশ ভোটে ‘মুসলমান ফ্যাক্টর’ ফলাও করে প্রচার
দ্য টেলিগ্রাফে ৭ জুলাই প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ‘মুসলিম ভোট ক্যাম্পেইন একটি ভয়ঙ্কর ভবিষ্যতের আভাস’ (Why the Muslim Vote campaign is a glimpse into a horrifying future)।
প্রতিবেদনটিতে বর্ণনার একপর্যায়ে বলা হয়েছে: একটি বিদ্রোহী শক্তি ব্রিটিশ রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে। মুসলিম ভোট সংগঠিত ছিল না। তাদের অর্থবহ কোনো ইশতেহার ছিল না। ছিল শুধু গভীরভাবে সাম্প্রদায়িক একটি নীতি। সেই নীতি অনুযায়ী তারা কৌশলগতভাবে প্রার্থী দিয়েছিল। তাদের আনুগত্য ছিল সম্পূর্ণরূপে ধর্মীয় ও জাতিগত স্বার্থের জন্য। তাদের একটিই দাবি—একক দাবি—সবই গাজা সম্পর্কিত। তারা নির্দলীয়। তাদের এ বিজয়কে পবির্তন বা সংস্কার বলতে হবে।
গত ৪ জুলাই নির্বাচনের দিন জেরেমি করবিন ঘোষণা করেছিলেন, ‘আজ এই ভোটের ব্যালটে রয়েছে প্যালেস্টাইন।’ করবিন ছিলেন লেবার পার্টির এমপি। ২০১৫-২০ লেবার পার্টির প্রধান। ২০২০ সালে তাকে ইহুদি ইহুদিবিরোধী প্রতিক্রিয়ার জন্য দল থেকে বরখাস্ত করা হয়। তিনি আইলিংটন নর্থে প্রায় বিপুল ভোটে ১১তম বার জয়লাভ করেছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এটা তার প্রথম বিজয়। ১৯৩৭ সালের উপনির্বাচনের পর থেকে আইলিংটন উত্তর আসনটি লেবার পার্টির দখলে ছিল। সেখানে এবার করবিনের মাধ্যমে লেবার পার্টির অবসান হল।
ভোটের দিন করবিন বলেছিলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে গাজার জনগণের পক্ষে দাঁড়াব এবং ফিলিস্তিন দখলের অবসানের জন্য অক্লান্ত প্রচারণা চালাব।’
করবিন এই আসনে জিতে গেছেন, কারণ এখানে প্রায় সব মুসলিম ভোট তার পকেটে পড়েছে।
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন: কর্বিনের নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ১৩ শতাংশ বাসিন্দা মুসলিম। যেসব আসনে মুসলমানদের সংখ্যা ১০ শতাংশের বেশি সেখানে লেবার পার্টির ফল ১১ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। সারা দেশে একই চিত্র। লেবার পার্টি যখন সারা দেশে ঐতিহাসিক বিজয় উপভোগ করছিল তখন একটি শক্তিশালী পাল্টা স্রোত একটি একক কারণে অন্যদিকে প্রবাহিত হয়েছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া লেবার পার্টি দেশজুড়ে একটি ক্ষুরের মতো পাতলা ব্যবধানের ঝুঁকি নিয়ে পার পেয়েছে। কারণ মুসলিম ভোটাররা দলটি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।
বিবিসির একটি সংবাদের শিরোনাম ‘ব্রিটেনে মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় গাজাপন্থীদের কাছে হেরেছেন লেবার প্রার্থীরাও’।
দ্য জিয়ুইশ ক্রনিকল: এই নির্বাচন ব্রিটেনকে স্যানিটাইজড ইসলামিজমের জন্য আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে (This election makes Britain ever more vulnerable to sanitised Islamism)।
নিউ ইয়র্ক টাইমস: লেবার পার্টি তাদের গাজা-নীতির কারণে মুসলিম এলাকায় ভোট হারিয়েছে (Labour Loses Votes in Muslim Areas Over Its Gaza Policy)।
দ্য গার্ডিয়ানে ‘ছোট দলগুলোর উত্থান: যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে ভোটের ধরন থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ (Rise of smaller parties: key takeaways from voting patterns in UK election) শিরোনামে প্রতিবেদনে মুসলমানদের ভূমিকা বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।