Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

লেবার পার্টি: একদিকে ভূমিধস জয় অন্যদিকে পরাজয়

মুসলিম-অমুসলিম টানাপোড়েন

ডেস্ক রিপোর্ট

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৫ এএম

লেবার পার্টি: একদিকে ভূমিধস জয় অন্যদিকে পরাজয়

কিয়াম স্টারমারের লেবার পার্টি সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে। তবে অন্যদিকে তার দল মুসলমানদের কাছে পরাজিত হয়েছে বলা যেতে পারে। মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় প্যালেস্টাইনপন্থী প্রার্থীদের কাছে তার দল চারটি আসন হারিয়েছে। এমনকি তার ছায়া মন্ত্রিপরিষদের মন্ত্রী জোনাথন অ্যাশওয়ার্থ পরাজিত হয়েছেন। আরো কয়েকটি আসনে চুলপরিমাণ ব্যবধানে পার পেয়েছে লেবার পাটি। এসব খবর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রকাশিত হয়েছে।

লেবার পার্টির জোনাথন অ্যাশওয়ার্থ তার লিসেস্টার সাউথ আসনটি স্বতন্ত্র প্রার্থী শওকত আদমের কাছে হেরেছেন। 

ডিউসবারি অ্যান্ড বেটলিতে সাবেক প্রধান অর্থমন্ত্রী রাসেল রিভস হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল মোহাম্মদের কাছে। 

বার্মিংহামে সাবেক লেবার এমপি খালিদ মাহমুদ হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আইয়ুব খানের কাছে।

ব্ল্যাকবার্নে কেট হলর্ন হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আদনান হোসেনের কাছে। 

চারজনই হেরেছেন চুলপরিমাণ ব্যবধানে। একইভাবে আরো ডজনখানেক আসনে লেবার প্রার্থীরা চুলপরিমাণ ব্যবধানে জয় পেয়েছেন।

নির্বাচনের এই ফল কি ইঙ্গিত দিচ্ছে? কেন এমন হল?

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে বলে রাখা যাক লেবারপ্রধান কিয়ার স্টারমারের ব্যক্তিগত ইমেজ সম্পর্কে। নির্বাচনে তার দল পার্লামেন্টের মোট ৬৫০ আসনের মধ্যে ৪১২টিতে জয় পাওয়ার পর অনেকেই বলেছেন, কিয়ার স্টারমার একজন রহস্যে মোড়ানো স্ট্রাটেজিস্ট। তিনি কোন কৌশলে তার দলকে ১৫ বছর পর জয় এনে দিলেন, যা ব্রিটিশ নির্বাচনে এক অনন্য নজির, তার রহস্য এখনও মানুষ জানে না।

নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি যেসব বিষয়ে জোর দিয়েছেন তার সর্বত্রই বিভিন্ন সুবিধা, যা সবার কষ্ট কমাবে, বাড়াবে না মোটেও। এর মধ্যে আয়কর, বিমাকর ও করপোরেশন কর না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি, সকালে সম্পূর্ণ সরকারি তহবিল থেকে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যকর নাশতা সরবরাহ প্রভৃতি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ভোটের ফল প্রকাশের পর দ্য টেলিগ্রাফের মন্তব্য: ‘নতুন প্রধানমন্ত্রীর লেবার পার্টি যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলো ভূমিধস বিজয়ের কারণ।’ তবে সামগ্রিকভাবে ট্যাক্স বৃদ্ধি ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা তার দল ইশতেহারে ঘোষণা করেছে।

ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হলেও স্টারমার ও তার অন্য অনেক নেতাকর্মী ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের অবিরাম হামলাকে সমর্থন করেছেন, যেখানে গত ৭ অক্টোবর থেকে এই ৯ মাসে ৩৮ হাজারের বেশি নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ৪০ হাজার সদস্য। ফেলা হয়েছে ৭০ হাজার টন বোমা, যা একক দেশে ফেলা বোমার ইতিহাসে রেকর্ড।

লুইস বাস্টন নামে একজন গবেষক-সাংবাদিক হাইফেন অনলাইন ডটকমে লিখেছেন, ‘সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির নাটকীয় পতন হয়েছে। গত ৩৬ ঘণ্টায় আমার নিজস্ব গবেষণায় দেখেছি, ২১টি আসনে মুসলিম জনসংখ্যা ৩০ শতাংশের বেশি। সেখানে লেবার পার্টি ২৯ শতাংশ পয়েন্ট হারিয়েছে ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের তুলনায়। ২০১৯ সালে যেখানে লেবার পার্টির ৬৫ শতাংশ পয়েন্ট ছিল, ২০২৪ সালে তা ৩৬ শতাংশে নেমে এসেছে।’

নির্বাচনী প্রচারের সময় স্টারমারকে তার উপদেষ্টারা সতর্ক করেছিলেন, তাদের অনেক প্রার্থী দেশজুড়ে ফিলিস্তিনিপন্থী প্রার্থীদের সামনে চাপের মুখে রয়েছেন। দলের স্ট্রাটেজিস্টরা আশা করেছিলেন, বেশির ভাগ ভোটার যারা স্থানীয় নির্বাচনে এই ইস্যুতে লেবারপ্রার্থীকে ভোট দেয়নি, তারা জাতীয় নির্বাচনে ফিরে আসবে। কিন্তু তারা ফিরে আসেনি বলে মনে হচ্ছে মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় নির্বাচনী ফল দেখে।

অন্যদিকে মুসলিম-অপ্রধান এলাকায় লেবারপ্রার্থীদের জয়জয়কার। এর মানে কি এই যে, ইসরায়েলি হামলাকে তারা সমর্থন করে?

সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায় না। কিন্তু ভাবনার খোরাক জোগায় নিশ্চয়।

গত ৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইউকের এই নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি, লেবার পার্টি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি, গ্রিন পার্টি, রিফর্ম পার্টিসহ অন্তত ৯৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। হাউজ অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের বিপরীতে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিল রেকর্ড ৪ হাজার ৫১৫ জন। 

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন