Logo
Logo
×

বিশ্লেষণ

ভারতকে রেল করিডোর: কার কী লাভ, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

নিজস্ব প্রতিবেদক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২৪, ০১:২৯ পিএম

ভারতকে রেল করিডোর: কার কী লাভ, কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হওয়ার পর দেশের রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। রাজনীতির মাঠ পেরিয়ে বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত।

আজ বুধবার (২৬ জুন) ওই সমঝোতা স্মারক বাতিলের দাবিতে রেল মন্ত্রণালয়ের, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এবং আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বরাবর আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। রেজিস্ট্রি ডাকযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান এই নোটিশ পাঠান।

 নোটিশে কি বলা হয়েছে?

নোটিশে দাবি করা হয়, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সংঘাত এড়াতে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়েছে, ‘১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীতসবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়নীতি অনুসরণ করে আসছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সংঘাত সহিংসতা থেকে নিজেকে সুরক্ষার জন্য শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেব্যালেন্স অব পাওয়ারনীতি অনুসরণ করে আসছে। কিন্তু ২০২৪ সালের জুন মাসে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রেল ট্রানজিট সংক্রান্ত সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এর মাধ্যমে বাংলাদেশেরব্যালেন্স অব পাওয়ারনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। ফলশ্রুতিতে ভারতের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন হওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সামরিক সংঘাতের ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

 রাজনীতিবিদরা কি বলছেন?

এদিকে, রেল সংযোগের বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিবীদরা বলছেন, এটি দেশের সার্বভৌমত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। এমনকি এটি ট্রানজিট না করিডোর সে বিষয়টি স্পষ্ট করতেও সরকারের প্রতি আহ্ববান জানিয়েছেন তারা।

বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘ভারতের ট্রেন বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত যাবে। এটাকে কী ট্রানজিট বলে? এটাকে বলে করিডোর। যে ট্রেন করিডোর দেওয়া হয়েছে সেখানে যদি অস্ত্র যায়? সেনাবাহিনী যায়? আপনি তল্লাশি করতে পারবেন? বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারত এখন সেভেন সিস্টার্সের রাস্তা করতে চায়।

প্রসঙ্গত: গত ২২ জুন দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১০ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরসহ ১৩টি ঘোষণা দেন। এর মধ্যে আছে ভারতীয় রেল করিডোর নিয়ে নয়া চুক্তি। দীর্ঘ ৭৭ বছর পর রাজশাহী কলকাতার মধ্যে পুনরায় ট্রেন সার্ভিস চালুর ঘোষণা। যেটি হবে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে চলাচলকারী চতুর্থ আন্তঃদেশীয় ট্রেন। এছাড়া এই চুক্তির গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করে ভারতের কলকাতা থেকেসেভেন সিস্টার্স-খ্যাত সাত রাজ্যের ১২টি রুটে ট্রেনে পণ্য যাত্রী চলাচলের সুবিধা।

বিষয়ে ভারতীয় রেলওয়ের বক্তব্য নিয়ে ভারতের পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনার আওতায় মোট এক হাজার ২৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের ১৪টি সেকশন থাকবে। এর মধ্যে বাংলাদেশের ভেতরে থাকবে ৮৬১ কিলোমিটার। আর নেপালে ২০২ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে থাকবে ২১২ কিলোমিটার পথ।

পত্রিকাটি বলছে, বাংলাদেশ সরকার দেশের ভেতরে ভারতকে রেলপথ স্থাপনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় নয়াদিল্লির পরিকল্পনা সহজ হয়েছে।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে মোট ৮৬১ কিলোমিটার, নেপালে ২০২ দশমিক ৫০ কিলোমিটার এবং উত্তরবঙ্গ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২১২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জরিপ চালানো হবে। ভারতের সঙ্গে এই চুক্তির ফলে ভারতের মাটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ রেলওয়ে নেপালেও পণ্য যাত্রী পরিবহন করতে পারবে।

 বিশ্লেষকরা কি বলছেন?

এদিকে, দীর্ঘ দেড় দশকে ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের নানা চুক্তি সমঝোতার সমালোচনা করছেন বিশ্লেষকরা। এসব চুক্তি সমঝোতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের চেয়ে ভারতের লাভবান হওয়ার সুযোগ বেশি এমন দাবি করছেন অনেকে।

বিষয়ে সাবেক কূটনীতিক মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, রেল সংযোগ নিয়ে ভারতের সঙ্গে যে সমঝোতা হয়েছে সেটি বাস্তবায়ন হলে ভারতের লাভ হবে। এতে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার কোনো সুযোগ দেখছি না।

বাংলাদেশের যে অবকাঠামো তা ভারতের রেল চলাচলের জন্য যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভারত হয়তো নামমাত্র শুল্ক দিবে। কিন্তু সেটি যে নিয়মিত হবে সেই নিশ্চয়তা পাওয়া কঠিন।

বিষয়ে যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশের যে রেলপথ দিয়ে আন্তঃদেশীয় যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মাণ করতে চায়, সে রেলপথের জন্য পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষা করতে হবে। অন্য একটি দেশের ট্রেন যখন দেশে ঢুকবে, তখন কিন্তু অপারেশনাল ডিজরাপশন তৈরি হবে। তারপর সিকিউরিটির জন্য খরচ আছে। আমার অবকাঠামো অবচয় কত হবে। প্রতি বছর সেটি হিসাব করতে হবে। ভারত যে সুবিধা পাবে তা যেন বাংলাদেশ, নেপাল ভুটানও সমভাবে পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

বেসরকারি সংস্থা সিপিডির ফেলো অর্থনীতিবিদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নতুন ট্রানজিট চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে রেলপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের সুবিধা পাবে ভারত। এতে ভারতের পণ্য পরিবহন ব্যয় অনেক কমে আসবে। কাজেই তাদের যত টাকা সাশ্রয় হচ্ছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে একটি বেনিফিট শেয়ারিং করা প্রয়োজন। সেটি ভারতের কাছ থেকে আদায় করা যাবে কিনা সেটি নিয়ে হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে।

অন্যদিকে, দর্শনা থেকে চিলাহাটি পর্যন্ত যে রেললাইনটিতে ভারত ট্রানজিট পাচ্ছে, সেটা বর্তমানে সিঙ্গেল লাইন রয়েছে। এটি ডাবল না করলে ভারতীয় যাত্রী পণ্য পরিবহন করতে সক্ষম হবে না। এজন্য নতুন করে বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। সেই বিনিয়োগ কে করবে সেটিও আগে নির্ধারিত হওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

Logo

প্রধান কার্যালয়: ৬০৯০ ডাউসন বুলেভার্ড, নরক্রস, জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র।

ই-মেইল: [email protected]

অনুসরণ করুন